• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে বাড়িঘর, স্কুলে বসবাস

  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৯:২০
The waiting old man
বাড়িঘর হারানো অপেক্ষমাণ বৃদ্ধ

পরিত্যক্ত ভবন, ভবনের অনেক জায়গায় ধ্বসে পড়ার চিহ্ন, ছাদে পানি পড়া বন্ধ করতে ভবনের মধ্যে পলিথিনের ছাউনি, রুমের মধ্যে বস্তায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের স্তূপ, এক পাশে কয়েকটি বেঞ্চ একসাথে করে শোয়ার ব্যবস্থা, পরিবারের সদস্যদের রাতের শোয়ার জন্য রুমের মধ্যে কাপড় দিয়ে ভিন্ন রুম তৈরি করা, বারান্দায় পাশে অস্থায়ীভাবে চুলা তৈরি করে রান্না ঘর তৈরি ও শৌচাগার না থাকার পরেও ঝুঁকি নিয়ে একটি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে গত চার মাস ধরে বসবাস করে আসছে ৬টি পরিবার।

গত জুলাই মাসে অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়ীবাঁধ ছিঁড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় এই পরিবারগুলোর জায়গা না থাকায় স্কুলের শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে বসবাস করে আসছেন তারা।

নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নলচিরা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে পাঞ্চায়েত গ্রামে নলচিরা ছিদ্দিকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩য় শ্রেণীতে পড়ে হালিমা বেগম। পিতা মো. হান্নান ইটভাটার শ্রমিক। জুলাই মাসে অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ছিঁড়ে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। সে সময় অন্য ৬টি পরিবারের মতো হালিমাদের ঘরবাড়ি ভেসে যায়। তারপর থেকে হালিমা পরিবারের ৪ সদস্যসহ তারই পড়াশুনা করা বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করে আসছে।

একই বিদ্যালয়ে বসবাস করা মিনারা বেগম (৫৫) জানান, স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে সীমাসহ পরিবারের ৫সদস্যকে নিয়ে তিনি একটি রুমে বসবাস করে আসতেছে। রুমের মধ্যে জায়গা না থাকায় মাঝে মধ্যে তার স্বামী গিয়াস উদ্দিন (৬০) বিদ্যালয়ের মূল ভবনের বারান্দায় মেঝেতে ঘুমায়। এতে অনেক ঝুঁকি থাকে কারণ রাতের আধারে বিদ্যালয়ের চার পাশে সাপের অনেক গর্জন শোনা যায়।

বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে গৃহস্থালীর কাজ করছে সিরাজ উদ্দিন (৭০) নামে এক বৃদ্ধা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন একটি রুমে। জায়গা না থাকায় ছেলের বৌকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে।

নকশি কাঁথা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে বিধবা বেছুনী আক্তার (৪৫)। স্বামী নেই, প্রাপ্ত বয়স্ক দুটি মেয়ে নিয়ে এই বিদ্যালয়ের একটি রুমে বসবাস করেন। মেয়েরা বিয়ের উপযুক্ত হওয়ায় অনেক জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। তবে বাড়ি না থাকায় বিদ্যালয়ে বসবাস করায় ছেলে পক্ষের কেউ বিয়েতে সম্মতি হয় না।

অস্থায়ী ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে বসবাস করা এসব পরিবারের সদস্যরা জানান, সরকারিভাবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া কিছু চাল চাড়া তারা কোন সুযোগ সুবিধা পাননি তারা । আসছে মৌসুমে নলচিরা ইউনিয়নের উত্তর পাশে নতুন বেড়িবাঁধ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বেড়ীবাঁধ হলে বেড়ীর ডালে গিয়ে বসতি স্থাপন করবেন বলে আশা নিয়ে আছে তারা।

স্থানীয় ছিদ্দিকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, জুলাই মাসে নলচিরা ইউনিয়নের পাঞ্চায়েত গ্রামের উত্তর পাশে অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ছিঁড়ে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময় জোয়ারের স্রোতে লোকালয়ে পানি ঢুকে এই ৬টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভেসে যায়। পরে মানবিক কারণে করোনা মহামারিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এই পরিবারগুলোকে তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি ২০১৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর পরেও তারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছেন তারা।

এ বিষয়ে নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বাবলু বলেন, জোয়ারের স্রোতে ভেসে যাওয়ায় ৬টি পরিবার স্কুল ভবনে বসবাস করছে। এছাড়া আরও কিছু পরিবার রাস্তার ওপরে বসবাস করছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সে সময় কিছুই করার ছিল না। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি সোলার স্থাপন করে দিয়েছি। এ ছাড়া শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে একাধিক বার। তবে স্থায়ীভাবে তাদের জন্য কিছুই করা যায়নি।

জিএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh