শাহবাজপুর চ্যানেলে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙা ডিম ছেড়েছে ইলিশ
ভোলার ইলিশের উৎপাদনের কারণেই দেশে উৎপাদনের পরিমাণ ছয় লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে পৌঁছবে বাংলাদেশে। এমন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ের কথা জানালেন ইলিশ গবেষকরা। এবার ভোলার মেঘনা নদীর শহবাজপুর ও মৌলভীর চর চ্যানেল সর্বাধিক ইলিশ মাছ ডিম ছেড়েছে। ডিম ছাড়ার হার ছিল প্রায় ৮৮ ভাগ।
যা সর্বকালের রেকর্ড। দেশের ৩২ জেলার নদীগুলোতে গড়ে ইলিশের ডিম ছাড়ার হার ৫১ দশক দুই ভাগ। গেল বছর হার ছিল ৪৯ ভাগ। ফলে ইলিশ উৎপাদন ১০ ভাগ বাড়বে। গবেষণা রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইলিশ মাছের সম্ভাবনা নিয়ে বুধবার এ প্রতিবেদককে নানা তথ্য জানান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান।
তিনি জানান, এ বছর ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর ছিল ইলিশের ভরা প্রজনন ও ডিম ছাড়ার সময়। ২২ দিনের মধ্যে ১৮ অক্টোবর থেকে তিন নভেম্বর পর্যন্ত সর্বাধিক ইলিশ ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার পর বেশির ভাগ ইলিশ সাগরে ফিরে গেছে। শীতের শেষে বড় আকারের ইলিশ ফের নদীতে বিচরণ করবে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাঁচটি টিমের ২৪ জন স্টাফ মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও পদ্মা নদী এলাকায় ডিম ছাড়া পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা জরিপ করেন। এই টিমের প্রধান সমন্বয়কের কাজ করেন ড. আনিছুর রহমান।
এছাড়া দায়িত্ব পালন করেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মেহেদী হাসান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান। এদের গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশ মাছ সবচেয়ে বেশি ডিম ছেড়েছে ভোলা জেলার মেঘনা নদী অঞ্চলে। এই জেলার মনপুরা, ঢালচর, মৌলভীর চর, কালীরচর এলাকা ছিল ইলিশ বিচরণ এলাকা। গেল বছর এ অঞ্চলে ডিম ছাড়ার হার ছিল ৭০ ভাগ। এবার সর্বাধিক ডিম ছাড়ার হার ছিল ৮৮ ভাগ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছিল ১০ থেকে ৬০ ভাগ।
চাঁদপুরের কাঁটাখালী পয়েন্টে, রাজবাড়ি, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলার নদী এলাকায়ও জরিপ করা হয়। উপযোগী পরিবেশ ও প্রাকৃতিক কারণেই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ডিম ছাড়তে ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেলে উঠে আসে। দেশে গেল বছর ইলিশ উৎপাদনের হার ছিল পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। যদি জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ করা যথাযথ হয়, তবে উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়াবে। এক নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা রক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া নদীতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ও সাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন ইলিশের বেড়ে ওঠা সময় নির্ধারণ করা হয়। এই সময় সব ধরনের মাছ ধরা ও বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নিয়ম মানার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ইলিশ গবেষকরা। ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ডিম ছাড়ার পরিবেশ ও জাটকা রক্ষায় জেলা প্রশাসনের সর্বাধিক চেষ্টা রয়েছে। এ কারণেই ইলিশ উৎপাদনে ভোলা হচ্ছে প্রথম। একইসঙ্গে বিশ্বে বাংলাদেশ হবে প্রথম। গেল ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশে উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। এই বৃদ্ধিও হার ক্রমেই বাড়ছে বলেও জানান ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান। এর সুফল জেলেরা পেতে শুরু করছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা আজাহারুল হক।
জেবি
মন্তব্য করুন