• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ধনবাড়ীর নওয়াব বাড়ি এখন রয়েল রিসোর্ট

  ১৯ নভেম্বর ২০২০, ১৪:০৯
The Nawab's house, in Dhanbari is now, rtv news
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী নওয়াব বাড়ি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রথম প্রস্তাবক ও ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সেই ঐতিহ্যবাহী নওয়াব বাড়িটি এখন ‘রয়েল রিসোর্ট’।

টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে ধনবাড়ী উপজেলায় নওয়াব বাড়িটি অবস্থিত।

আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার অন্যতম প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। তারই অমর কীর্তি ধনবাড়ী জমিদারবাড়ি বা নওয়াব প্যালেস।

এই জমিদারদের রয়েছে ঐশ্বর্যমণ্ডিত ইতিহাস। ধারণা করা হয়, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ধনপতি সিংহকে পরাজিত করে মোগল সেনাপতি ইস্পিঞ্জর খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ধনবাড়ীতে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের কয়েক পুরুষ পরের নবাব ছিলেন সৈয়দ জনাব আলী। সৈয়দ জনাব আলী ছিলেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর বাবা। তিনি তরুণ বয়সে মারা যান।

নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী বিয়ে করেন বগুড়ার নবাব আবদুস সোবহানের মেয়ে আলতাফুন্নাহারকে। এই দম্পতি ছিলেন নিঃসন্তান। আলতাফুন্নাহারের মৃত্যুর পর নবাব বিয়ে করেন ঈশা খাঁর শেষ বংশধর সৈয়দা আখতার খাতুনকে। নওয়াব আলী চৌধুরীর তৃতীয় স্ত্রীর নাম ছিল সকিনা খাতুন। ১৯২৯ সালে মারা যান নওয়াব আলী চৌধুরী। ওয়াকফ নামায় তিনি নিজের তৃতীয় স্ত্রীর একমাত্র ছেলে সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা হুমায়রা খাতুনের নাম উল্লেখ করে যান।

সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পরবর্তীকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী নিযুক্ত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে মারা যান তিনি। এই জমিদারবাড়ির বর্তমান উত্তরাধিকারী তার একমাত্র সন্তান সৈয়দা আশিকা আকবর।

দীর্ঘকাল পেরিয়েছে, পৃথিবী বদলেছে, বদলে গেছে শাসন ব্যবস্থা। ধনবাড়ীও তার ব্যতিক্রম নয়। জমিদার নেই, জমিদারি নেই কিন্তু নওয়াব বাড়ি তার ঐশ্বর্য ও ঐতিহ্য নিয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।

নওয়াব বাড়ির দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- নওয়াব মঞ্জিল, নওয়াব প্যালেস, নওয়াব শাহী জামে মসজিদ, দীঘি ও ভিলা। এসব পুরানো নকশাখচিত অট্টালিকার সব রুমের ফার্নিচারগুলোও সেই নবাবী আমলের।

নওয়াব মঞ্জিল

এই ভবনটি ছিল নওয়াব বাহাদুরের প্রধান আবাসকক্ষ। এককালে সব নামি-দামি অতিথিরা এসে এখানেই থাকতেন। বর্তমানে এই ভবনটি সব ভিআইপি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। নিপুণ কারুকার্য খচিত ভবনটির ভেতরে সব নবাবী ফার্নিচার পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে। মঞ্জিলের সামনে রয়েছে বাগান, উন্মুক্ত স্টেজ। খেলার মাঠটিও নয়নাভিরাম।

প্যালেস

এ বিশাল আকৃতির ভবনটি ছিল এককালে দরবার হল। বর্তমানে নওয়াব প্যালেস কর্পোরেট অতিথিদের জন্য ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি গোলটেবিল, কনফারেন্স রুম। সম্পূর্ণ আধুনিকভাবে সজ্জিত করফারেন্স রুমে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট সাউন্ড সিস্টেম কম্পিউটার। পাশেই ৩০০ আসন বিশিষ্ট কনভেনশন হল। এ কনভেনশন হলে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও সেমিনার হয়ে থাকে। প্যালেস ও মঞ্জিলের প্রতিটি কক্ষে আছে অতীত ঐতিহ্য বহনকারী আসবাবপত্র। এছাড়াও রয়েছে বিশাল ডাইনিং হল, নওয়াব মিউজিয়াম, লাইব্রেরি এবং বেশ কিছু বেডরুম। প্রায় শতাধিক বছরের পুরোনো ভবনের সব আধুনিক সুবিধা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ার মতো।

আবাসিক

এখানকার নিরাপদ ও আরামদায়ক রুমগুলো চার ধরনের, যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা পূরণ করে। রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। পর্যটকদের সব আবাসিক চাহিদা মেটাবে এই রয়েল রিসোর্ট।

ভিলা

দুই শতাধিক বছরের পুরানো এ ভবনটি ছিল নওয়াব অন্দর মহল। এখানেও রয়েছে সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে বিশাল আকৃতির ফুলের বাগান। আরও রয়েছে সিঙ্গেল বেডরুম। একটি পরিবারের সুন্দরভাবে থাকার জন্য এ ভবনটি খুবই চমৎকার।

কটেজ

একটি সম্পূর্ণ আধুনিকভাবে নির্মিত একটি ভবন। ভিলার বারান্দা থেকে কটেজে প্রবেশের প্যাসেজটি এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এ কটেজে রয়েছে এসি রুম। পাশে ফুলের বাগানের মাঝখানে বড় আকৃতির গার্ডেন আমব্রেলা। নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। রিসোর্টের ঠিক পাশেই রয়েছে সাত শতাধিক বছরের পুরানো মসজিদ। চীনা-মিসরীয়দের তৈরি মোগলীয় স্থাপত্যের নিদর্শন। এ মসজিদটির মোজাইকসমূহ এবং মেঝেতে মার্বেল পাথরের নিপুণ কারুকাজ বাংলাদেশে বিরল। মসজিদটির পাশে একটি কক্ষে রয়েছে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর কবর। এখানে ২৪ ঘণ্টাই কুরআন তেলাওয়াত করে আসছে প্রায় ৮৮ বছর থেকে। এটা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। শাহী মসজিদের পাশে রয়েছে সাকিনা মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নওয়াব ইনস্টিটিউশন, আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ।

দিঘী

রয়েল রিসোর্টে রয়েছে প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর বিশাল একটি দিঘী। এখানে নৌকাভ্রমণ ও মাছ ধরার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে সুন্দর মনোরম শান বাঁধানো ঘাট।

রিসোর্টের ম্যানেজার মুকবুল হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, এ রিসোর্টে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকরাই আসেন। এখানকার ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। তাই পর্যটকরা এসে এ রিসোর্টের প্রশংসাও করেন।

ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন আরটিভি বলেন, ‘এ রিসোর্ট আমাদের ঐতিহ্য, দর্শনীয় ও দৃশ্যমান কীর্তি। এ ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব সরকারসহ আমাদের সকলের।’

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবিতে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুমে’ অচেতন শিক্ষার্থী, তদন্ত কমিটি গঠন
‘ইনস্যুরেন্স পাঠ্যক্রম যুগোপযোগীকরণে অংশীজনের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল
ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী
বে গ্রুপে একাধিক পদে চাকরি, কর্মস্থল ঢাকা
X
Fresh