নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বেলআমলা গ্রামে নেশার টাকা না পেয়ে স্বামী অনুকূল চন্দ্র মহন্ত (৩৫) তার স্ত্রী মণিকা রানী মহন্তকে (২৬) পিটিয়ে আহত করার পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। সেইসঙ্গে একমাত্র সন্তান অপূর্ব মহন্তকে (৫) নিয়ে পলাতক রয়েছে স্বামী। আজ বুধবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেলআমলা গ্রামের হরেন চন্দ্র মহন্তের ছেলে রাজমিস্ত্রী অনুকূল চন্দ্র মহন্তের সঙ্গে পারিবারিকভাবে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কৃত্তিপুরগ্রামের পঞ্চ মহন্তের মেয়ের আট বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়েতে যৌতুক দেওয়ার পরও প্রায় প্রতিদিনই স্বামী অনুকূল স্ত্রীকে টাকার জন্য চাপ দিতো ও মারধর করতো। সন্তানের সুখের আশায় গরিব দিনমজুর মণিকার বাবা এরই মধ্যে কয়েকবার ধার-দেনা করে টাকা দেন। এরই মধ্যে স্বামী অনুকূল নেশা ও জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়লে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। নির্যাতনের বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকবার পারিবারিকভাবে বৈঠক করে মীমাংসা করে দেন এলাকাবাসী।
মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আরটিভি নিউজকে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে অনুকূলের বাবা হরেন তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তার মেয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে বাড়িতে কেউ না থাকায় অনুকূল তার স্ত্রী মনিকা রানীকে পিটিয়ে আহত করার পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঘরের মেঝেতে ফেলে রেখে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায়। অনুকূল প্রতিদিনই জুয়া খেলতো ও নেশা করে স্ত্রী মনিকাকে মারধর করত। জুয়া ও নেশার টাকা জোগাড় করতে বেশ কিছু ধার-দেনা হয়ে যায়। পাওনাদারদের চাপে টাকা পরিশোধ করতে কয়েকদিন আগে স্ত্রী মণিকা স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ১০ (দশ) হাজার টাকা ঋণ তোলেন। ঋণ তোলা টাকা থেকে দুই হাজার টাকা চায় অনুকূল। এই টাকা না দেওয়াতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় সে।
অনুকূলের বাবা হরেন চন্দ্র মহন্ত বলেন, নবান্নের জন্য মেয়ের বাড়ি মঙ্গলবাড়িতে স্ত্রীসহ যায়। সকালে বাড়িতে এসে দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলে ছেলের বউকে মৃত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে দেখতে পেয়ে চিৎকারে দিলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে।
এলাকাবাসী সুদেব মহন্ত, তারাজুল জানান, মনিকা মহন্তের শান্তশিষ্ট মহিলা ছিলেন। তার স্বামী ছিল নেশাখোর। প্রতিদিন নেশা খেয়ে ও জুয়া খেলে এসে তার স্ত্রী মণিকা রানীকে নির্যাতন করতেন। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার পারিবারিকভাবে বৈঠক করে মীমাংসা করে দেন এলাকাবাসী।
মণিকা রানী মহন্তের মা ছবি রাণী বলেন, নির্যাতনের কারণে মেয়ে একমাস আগে আমার বাড়িতে গেলে আর স্বামীর বাড়িতে পাঠাবো না বলে স্থির করি। জামাই বিভিন্নজনকে ধরে আবার বাড়িতে নিয়ে আসে। মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর জাহান জানান, নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। অনুকূলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে।
জেবি/পি
মন্তব্য করুন