চাকরি থেকে ছাটাই করায় চীনা নাগরিককে হত্যা
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে পিরোজপুরে বেকুটিয়ার কঁচা নদীতে নির্মাণাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কর্মরত চীনের নাগরিক লাও ফান ওরফে ফান ইয়াংজুন (৫৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।মামলার প্রধান দুই আসামি হোসেন সেখ (১৯) এবং সাব্বির আহম্মেদ সেখকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডি আই জি মো. শফিকুল ইসলাম পিপি এম,বিপি এম।
গ্রেপ্তার হোসেন সেখ পিরোজপুর সদরের মরিচাল এলাকার ছোরাপ সেখ এবং সাব্বির সেখ একই এলাকার হায়দার আলী সেখের ছেলে।
ডি আই জি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ব্যাপক তদন্তের পর মাত্র ছয় দিনের মাথায় মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাব্বির সেখ নির্মাণাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কর্মরত একজন স্থানীয় শ্রমিক। হোসেন সেখ সাব্বিরের সুপারিশে গত মে মাসে ওখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। হোসেনের কাজ ভালো না হওয়ায় তাকে মাত্র ১৪ দিন পরে কাজ থেকে বাদ দেয় চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন । এ সময় হোসেন তার কাজের ব্যবহৃত হেলমেটটি নিয়ে যায়। পরবর্তী মাসের বেতন দেয়ার সময় ফান ইয়াংজুন হেলমেট বাবদ ৫শত টাকা কেটে রাখে। এ ক্ষোভ থেকে এবং চীনা নাগরিক প্রধান টেকনিশিয়ান ফান ইয়াংজুন কখন কীভাবে শ্রমিকদের বেতনের টাকা নিয়ে যায় তা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। পরে সাব্বিরের সঙ্গে যোগসাজশে তারা দুজনে কোনও এক সময় ফান ইয়াংজুনের কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন (৫৮) শ্রমিকদের বেতন দিতে কয়েকটি ব্যাগে করে দুই লাখ ৫৩ হাজার ২৩০ টাকা নিয়ে বাইসাইকেলে করে বাসস্থান থেকে মূল সেতুর দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ওৎ পেতে থাকা হোসেন সেখ টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে লাও ফান বাধা দেয়। তখন হোসেন তাকে ছুরিকাঘাত করে একটি টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত লাও ফান পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
বাড়ি গিয়ে হোসেন কাদা মাখা টাকা, ব্যাগ জামা-কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে নেয়। এবং ফোনে সাব্বিরকে জানায় কাজ শেষ।
পরবর্তীতে ব্যাপক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পুলিশ ১২ অক্টোবর কর্মরত শ্রমিক সাব্বিরকে সন্দেহজনক আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সকল ঘটনা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওইদিন রাতেই হোসেনকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। এ সময় তার মতে বাড়ির ভেতর খাটের নিচ থেকে ছিনতাইকৃত এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত জিনিষপত্র উদ্ধার করে। এরপর তাদেরকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হোসান ও সাব্বির সব দোষ স্বীকার করে গেলো রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এ সময় পিরোজপুর পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান জানান, তদন্তকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগে ৬১ হাজার এবং আশপাশের বিভিন্ন যায়গা থেকে আটশত টাকা উদ্ধার করে। মূল টাকা থেকে হিসাব অনুযায়ী দুই হাজার ৪৩০ টাকা পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ফান ইয়াংজুনের অধীনে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করতো। ফান ইয়াংজুনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
জেবি
মন্তব্য করুন