রায়হান হত্যা: ৭ দিনেও অধরা এসআই আকবর, ইমিগ্রেশনে সতর্কতা
সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যুর ১ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার হয়নি বরখাস্তকৃত সেই এসআই আকবর। রায়হান নামের এক ব্যক্তিকে ছিনতাইকারী ট্যাগ লাগিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে, সঙ্গে রয়েছে আরও কয়েকজন। এই এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করতে সীমান্তে সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। অথচ তার হদিসই পাচ্ছে না পুলিশ!
ঘটনার পর থেকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার হওয়া দুই এএসআই ও ৪ কনস্টেবল পুলিশের পাহারায় সিলেট পুলিশ লাইন্সে রয়েছেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে কাষ্টঘর এলাকার সুইপার কলোনির সুলাই লালসহ দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই আকবর পলাতক রয়েছে। পুলিশ সব বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। তারা চাইলে আকবর ছাড়া অন্যদের তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে পিবিআই’র প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সিলেটে পুলিশের হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুরর ঘনটায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। মামলায় অভিযুক্তরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে জন্যল দেশের প্রতিটি ইমিগ্রেশনে ও সীমান্তগুলোতে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পিবিআইয়ের অভিযান চলছে।
আরও পড়ুন:
রায়হান হত্যা: ‘নায়ক’ থেকে ‘বহুরূপীতে’ এসআই আকবর
পালিয়ে গেছেন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর (ভিডিও)
‘আমার বাচ্চার বাপরে কিতা মারলা, এখন আমি কিতা করমু’
আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হবে রায়হানের লাশ (ভিডিও)
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খালেদুজ্জামান জানান, এই মামলাটি স্পর্শকাতর। তাই আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। তদন্তকালে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মামলাটি স্পর্শকাতর, তাই সব বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ প্রয়োজন। সেজন্য পিবিআই’র তদন্ত দল সব বিষয়েই মাথায় রেখে তদন্ত কাজ অব্যাহত রেখেছে।
গত শনিবার (১০ অক্টোবর) মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে পরিবার। সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতন করার সময় এক পুলিশের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনার শুরুতে ওই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারী সন্দেহে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হয়েছেন বলে প্রচার চালায়। কিন্তু গণপিটুনির স্থান হিসেবে যেখানকার কথা বলেছিল পুলিশ, সেখানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্থাপন করা ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় এমন কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।
পরদিন রোববার (১১ অক্টোবর) রাতে সিলেট কোতোয়ালি থানায় রায়হানের স্ত্রী তানিয়া আক্তার তান্নি বাদী হয়ে মামলা হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে তার স্বামীকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ করেন তিনি। মামলাটি ২০১৩ সালের ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে’ এর ধারায় দায়ের করা হয়।
কেএফ/পি
মন্তব্য করুন