• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সিলেটে রায়হান হত্যা: সিসিটিভিতে গণপিটুনির প্রমাণ নেই

সিলেট প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১২ অক্টোবর ২০২০, ১২:২২
Raihan murder in Sylhet: There is no evidence of mass beating on CCTV
সিলেট নগরের আখালিয়ায় রোববার ভোরে নিহত যুবক রায়হান উদ্দিন

সিলেট নগরের আখালিয়ায় রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে রায়হান উদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তাকে মেরে ফেলেছে।

অপরদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। যদিও ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ গণপিটুনির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীও বলছেন, কাষ্টঘরে গণপিটুনির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

রায়হানের মা-বাবা-বোনরা প্রথম থেকেই অভিযোগ করছেন, পুলিশের নির্যাতনে খুন হয়েছেন রায়হান। তাদের দাবি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে রোববার ভোরে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়েছে।

সিলেট নগরীর কাষ্টঘর এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই এলাকার পুরোটাই ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতাভুক্ত। এসব ক্যামেরার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম।

বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মোনিম আরটিভি নিউজকে বলেন, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত কাষ্টঘর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এসব ফুটেজে কোনো গণপিটুনির ঘটনা দেখা যায়নি। এমনকি এই সময়ে কাষ্টঘর এলাকায় পুলিশের কোনো টহলও দেখা যায়নি। কাউন্সিলর মুনিম আরও বলেন, আমি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ওই এলাকার ফুটেজে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি। এছাড়া আমি কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সাথে কথা বলেছি। তারাও এরকম কিছু ঘটেছে বলে শোনেননি।
কাষ্টঘর এলাকার অন্তত ৩০ জন বাসিন্দাদের সাথে এই কথা বলেছে আরটিভি। তারা কেউই রাতে বা ভোরের দিকে গণপিটুনির কথা কিংবা কোনো চিৎকার চেঁচামেচিও শোনেননি। তবে সকালে কাষ্টঘর পূজামণ্ডপের আশপাশের এলাকায় পুলিশ গিয়ে টহল দেয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

কাষ্টঘর পূজামণ্ডপের পাশেই বাসা আইনজীবী সুমিত পালের। তিনি বলেন, প্রায় রাতেই এই এলাকায় মাদকসেবীদের চেঁচামেচি শোনা যায়। পুলিশের বাঁশির শব্দও শোনা যায়। তবে শনিবার রাতে বা রোববার ভোরে এমন কিছু শুনিনি। গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে তো চিৎকার শোনা যেতো।

তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে এলাকায় পুলিশ আসে। এসময় তারা জানায়, ভোরে এই এলাকায় গণপিটুনিতে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ
ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা: জামিনে মুক্ত নৈশপ্রহরী পলাশ
নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক হত্যায় গ্রেপ্তার ৩

এদিকে, রায়হান হত্যার প্রতিবাদে রোববার বিকেলে নগরীর আখালিয়া এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এলাকাবাসীরও অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে খুন হয়েছেন রায়হান।

এদিকে সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি মিডিয়া জ্যোতির্ময় সরকার আরটিভিকে জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কীভাবে ছেলেটি মারা গেল সব দেখা হচ্ছে। যে দোষী হবে তার বিচার হবে। ইতোমধ্যে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

রায়হানের পরিবারের সদস্যরা আরটিভি নিউজকে জানান, নগরের মিরের ময়দান এলাকায় শাহজালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসকের সহকারি হিসেবে কাজ করতেন রায়হান। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাত ১০টার দিকে তিনি অফিস শেষে বাসায় ফেরেন। খাওয়া দাওয়ার পর ১১টার দিকে বাসার সামনের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে বের হন। এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি তিনি।

রায়হান উদ্দিনের চাচা (যিনি রায়হানের সৎ বাবাও) হাবিবুল্লাহ আরটিভি নিউজকে বলেন, রোববার ভোর ৪টার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর (০১৭৮৩৫৬১১১১) থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয়। ফোন ধরার পর কথা বলে রায়হান। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে ‘আমারে বাঁচাওরেবা। আমারে বাঁচাও।’ এরপর আমি তার অবস্থান জানতে চাইলে সে জানায়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছে। এসময় ফাঁড়িতে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে বলে রায়হান। ফোন পেয়ে সাথে সাথেই আমি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যাই। তখন সেখানে অবস্থানরত একজন বলেন, সে (রায়হান) ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন দেখা করা যাবে না।

এরপর পার্শ্ববর্তী কুদরতউল্লাহ মসজিদে নামাজ আদায় করে সকালে আবার পুলিশ ফাঁড়িতে যান উল্লেখ করে হাবিবুল্লাহ বলেন, ফাঁড়িতে যাওয়ার পর একজন লোক আমাকে বলেন, ‘আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা ছিল। টাকা এনেছেন?’ কিছু টাকা এনেছি জানানোর পর তারা আমাকে বসিয়ে রাখেন। এরপর ১০টার দিকে বলেন, ‘আপনার ছেলের শরীর খারাপ করেছিল। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওসমানী হাসপাতাল গিয়ে তাকে দেখতে পারবেন।’ এরপর আমি ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পারি হিমঘরে রায়হানের লাশ পড়ে আছে। পুলিশই নির্যাতন করে রায়হানকে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ তার।

ওসমানী হাসপাতালের নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রায়হানের মরদেহ ওসমানী হাসপাতালে আনা হয়। এ ব্যাপারে হাবিবুল্লাহকে কল দেওয়া নম্বরে (০১৭৮৩৫৬১১১১) যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। এই নম্বরটি কার তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রাজধানীতে যুবকের মৃত্যু, চিকিৎসকের ধারণা হিট স্ট্রোক
চরফ্যাশনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ল বুয়েটে হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ
মাধবদীতে হিটস্ট্রোকে এক যুবকের মৃত্যু
X
Fresh