• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বন্ধ ক্যাম্পাসে পশু-পাখির সেবা করছেন তারা

লাবু হক, রাবি সংবাদদাতা

  ১০ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৫৭
Those who are serving animals on closed campus
বন্ধ ক্যাম্পাসে পশু-পাখির সেবা করছেন যারা

বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস। পিচঢালা রাস্তার কোথাও কোথাও এখনও বৃষ্টি জমে আছে। সেই রাস্তায় সাইকেলের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষের সাথে খুনসুটিতে মেতেছে কয়েকটি কুকুর। কেউ পিছু পিছু ছুটছে, কেউ সামনে এসে লাফালাফি করছে। আবার কেউ লেজ নাড়াতে নাড়াতে মাথা তুলে উঁকি দিচ্ছে। মানুষটাকে তারা চারপাশ দিয়ে ঘিরে ধরেছে। মানুষটা তাদের দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন। সাদা দাঁতের ঝিলিকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেই হাসি। এ যেন পরিতৃপ্তির হাসি। হালকা-পাতলা গড়নের সেই মানুষটার সাইকেলের হ্যান্ডেলে রাখা আছে কালো রঙের বড় একটি পাত্র। পাত্র দেখেই ওরা দূর থেকে দৌড়ে এসেছে সেই মানুষটির কাছে। পাত্রটিতে তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসা হয়েছে। এখনি তাদের খেতে দেয়া হবে। তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবে সেই আনন্দেই তারা লেজ নাড়াচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখে চোখের পাতায় প্রশান্তির মায়া।

কুকুরগুলো ঘিরে থাকা এতক্ষণ যে মানুষটির কথা বলছিলাম তার নাম প্রসেনজিৎ কুমার। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের বাধাকে উপেক্ষা করে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাসের অভুক্ত প্রায় ২০০ কুকুর, বিড়াল ও পাখিদের খাওয়াচ্ছেন। তার সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী। রাবির হাজারও শিক্ষার্থীর মাঝে ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালগুলো ওই শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে চেনে। চেনে বলেই তারা ‘আয় আয়’ বলে ডাকতেই চারপাশ থেকে দৌড় দিয়ে সামনে এসে হাজির হয়। কিছু কুকুরের নামও দিয়ে দিয়েছেন তারা। কারও নাম লাইলী, আবার কারও নাম ফাটাকেষ্ট। তারা খাওয়ানোর প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘ক্যাম্পাস পোষাপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প’।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১৮ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে ক্যাম্পাসের সব খাবার দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর আশপাশের খাবার দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ক্যাম্পাসে থাকা শতাধিক কুকুরকে না খেয়ে থাকতে হয়। তাই গত ২৮ মার্চ থেকে ‘মানুষ তো কোনও না কোনোভাবে খাবার সংগ্রহ করবে, কিন্তু কুকুর তো পারবে না। এই চিন্তা থেকেই প্রসেনজিৎ কুমার ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকী মিলে নিজস্ব অর্থায়নে কুকুরদের খাওয়াতে শুরু করেন।

এ ব্যাপারে প্রসেনজিৎ বলেন, বন্ধ ক্যাম্পাসে একদিন চা খেতে এসে দেখি ক্যাম্পাসের কুকুরগুলো না খেতে পেয়ে একেবারেই শীর্ণ হয়ে গেছে। এদের দেখে খুব খারাপ লাগছিল। সেদিনই মাহমুদ সাকীসহ আমরা সিদ্ধান্ত নিই, নিজেদের পকেটের টাকায় ক্যাম্পাসের কুকুরগুলোকে খাওয়াবো। এরপর থেকেই রান্নার হাঁড়ি জোগাড় করে চাল, ডাল কিনে রাকসু ভবনে ইট দিয়ে গেঁথে চুলো তৈরি করলাম। আশপাশ থেকে খড়ি কুড়িয়ে প্রথমদিনের মতো রান্না করলাম। সেদিন থেকেই তাদের খেতে দিতে শুরু করি। পরবর্তীতে অনেকে একাজে এগিয়ে আসে। অনেকে কিছুদিন করেই চলে যায়। বর্তমানে ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ইসতিয়াক ইমু, আইন বিভাগের মাহবুবুর রহমান মুন্না ও দিল আফরোজ দোলাসহ মোজাম্মেল হক নামের একজন শিক্ষার্থী কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের তামির হোসেন নামের এক বিদেশি শিক্ষার্থীও আমাদের সাথে রয়েছেন।

ওদের খাওয়াতে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আনন্দে ওদের লেজ নাড়ানো দেখে আমরা তৃপ্ত পাই। ওদের খাওয়া দেখে আমরা শান্তির অন্তর ঘরে সুখের দেখা পেয়ে থাকি। একটু প্রাণ খুলে হাসি। প্রায়ই খাবার দিতে গিয়ে বৃষ্টিতে আমরা ভিজে যাই৷ এখন অভ্যাসটা এমন হয়েছে যে, খাবার না দিলে যেন নিজেদেরই ভালো লাগে না।

প্রকল্পটির সাথে কাজ করা একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের কুকুর, বিড়াল ও পাখিদের খাওয়াতেই প্রশান্তি মেলে আমাদের। দিনে দুবেলা তাদের খাবার দেই, সকালে আর সন্ধ্যায়। এই কয়েকদিনে আমরা পাখিদেরকেও পোষ মানিয়ে ফেলেছি। ওরা প্রতিদিন কোনও ভয় ছাড়াই এসে আমাদের আশেপাশে ভিড় করে। ওদের কিচিরমিচির শব্দগুলো আমাদের ভালো লাগে।

তারা বলেন, প্রতি মাসের প্রথম দিন আমরা বাজার করি পুরো মাসের জন্য। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাজার করে দিয়ে যায়। চাইলে যে কেউই যোগ দিতে পারেন আমাদের ক্যাম্পাস পোষাপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্পে।
জিএম/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কাল শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে কাজ করছে সরকার : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পহেলা বৈশাখে ব্যতিক্রমী সেবা ডিএমপির
মানুষের সেবা করাই হোক নতুন বছরের অঙ্গীকার : জয়
X
Fresh