• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাঁচ দফা বন্যায় ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন, অর্জিত হচ্ছে না আমনের লক্ষ্যমাত্রা

কুড়িগ্রাম উত্তর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৬ অক্টোবর ২০২০, ১৯:২৬
পাঁচ দফা বন্যায় ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন, অর্জিত হচ্ছে না আমনের লক্ষ্যমাত্রা
বন্যায় ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

জুন থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর পর পাঁচ দফা বন্যায় কুড়িগ্রামের কৃষকের স্বপ্ন ভেসে গেছে। শেষ দফা বন্যায় চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের পানিতে ডুবে পচে গেছে উঠতি আমন ধান। ফলে জেলায় চাল উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম কৃষিবিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আমন চাষ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৯ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। তবে বন্যায় আমনের ক্ষতি হওয়ায় এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে।

চতুর্থ ও পঞ্চম দফার বন্যায় নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের উঠতি আমন ধান তলিয়ে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অধিক বৃষ্টিপাতে নষ্ট হয়ে যায় শীতকালীন সবজির আবাদ। কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের তথ্যমতে অতি বৃষ্টি এবং শেষ দফার বন্যায় জেলায় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর আবাদি জমি ডুবে যায়। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর উঠতি আমন ধান পানিতে তলিয়ে যায়। তলিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ আমন ধান পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আমন চাল উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এসব জমির আবাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের চেষ্টা চলছে।

এর আগে প্রথম থেকে তৃতীয় দফার বন্যায় কৃষকের ইরি ধান, আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন, চিনা, তিল ও মরিচসহ সবজি জাতীয় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ১৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির ফসল একেবারে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বন্যার পানি দেড়মাস স্থায়ী হওয়ার ফলে আমন আবাদের বীজতলাও পচে নষ্ট হয়ে যায়।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, প্রথম থেকে তৃতীয় দফার বন্যায় আমনবীজতলা ১৪০৯ হেক্টর, আউস ধান ৫২১৭ হেক্টর, শাকসবজি ৯৫৩ হেক্টর, পাট ৯২৩৫ হেক্টর, তিল ৩০৫ হেক্টর, মরিচ ২০৫ হেক্টর, চিনা ১৪০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে বন্যায় ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৮ জন কৃষক। এর মাঝে ২৭ হাজার ৭৬১ জন কৃষককে সবজি বীজ সহযোগিতা দেয় কৃষি বিভাগ। এছাড়াও ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা, শতাধিক ভাসমান বীজতলা ও ১১২টি ট্রে বীজতলা প্রস্তুত করে আমন চারা দেয়া হয় কৃষকদের।

তৃতীয় দফা বন্যা শেষে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা এবং নিজেদের উদ্যোগে আমন চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করে জেলার কৃষক। তবে সেপ্টেম্বরে দুই দফা বন্যা আর ভারি বৃষ্টিপাতে সে স্বপ্ন ভেসে যায় তাদের। উঠতি আমন ধান পানিতে তলিয়ে পচে নষ্ট হয়ে যায়। দফায় দফায় বন্যার কারণে ক্ষেতের ফসল হারিয়ে কুড়িগ্রামের কৃষক এখন দিশেহারা। সব ধরণের ফসল নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। সরকারিভাবে পুনর্বাসন ও ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার দাবী কৃষকের থাকলেও সবার কাছে পৌঁছবে না প্রণোদনা।

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের কৃষানী মাজিয়া বেগম জানান, প্রথম দফার বন্যায় ৪ বিঘা কাউনের আবাদ নষ্ট হয়ে যায় তার। পরবর্তীতে চড়া দামের আমন চারা কিনে ২ বিঘা জমি চাষ করেন তিনি, সেগুলোও এই বন্যায় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী দিনগুলো কিভাবে চলবে সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটে তার।

চাকাটা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বাতেন জানান, প্রথম দফায় ১৫ বিঘা পাট একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ক্ষেতে কিছুটা আমন চাষ করেছিল তাও পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার পথে।
বল্লভের খাষ ইউনিয়নের সবজি চাষি আতোয়ার ইসলাম জানান, ৩ বিঘা সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সেই জমিতে মুলা এবং লাল শাকের চাষ করেছিলেন তিনি। পরে অতি বৃষ্টি এবং শেষ দফার বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে।

কেদার ইউনিয়নের আবুল হোসেন জানান, প্রথম দিকের বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। পরে চড়া দামে আমনের চারা কিনে রোপণ করলেও এখনো তা পানির নিচে।

কুড়িগ্রামের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শামসুদ্দিন মিয়া জানান, এখন পর্যন্ত শেষ দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কোনও প্রকার প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতে মাঠ পর্যায় কাজ চলছে। তালিকা প্রণয়ন শেষে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মুক্তি পাওয়ায় নাবিকদের বাড়িতে খুশির বন্যা
শততম ম্যাচে ব্রাদার্সকে গোল বন্যায় ভাসালো বসুন্ধরা কিংস
ভারী বৃষ্টিতে সৌদিতে স্কুল বন্ধ, বন্যার সতর্কতা
বন্যা-ভূমিধসে ইন্দোনেশিয়ায় ২৬ প্রাণহানি
X
Fresh