• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

৩০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা নৃপেনের জীবন! 

নওগাঁ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০৪
Nipen Chandra Pal
নৃপেন চন্দ্র পাল

নওগাঁর রাণীনগরে গত ৩০ বছর ধরে গৃহবন্দী আর শিকলে বাঁধা জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন নৃপেন চন্দ্র পালের। উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের ভান্ডারা গ্রামে ৪২ বছরের ওই ব্যক্তিকে মাটির বাড়ির একটি অন্ধকার ঘরে ৩০ বছর ধরে তাকে বন্দী করে রেখেছেন তার পরিবার। আবার সেখানেও তার অত্যাচার বেড়ে গেলে গত ৫ বছর ধরে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। চরম অর্থাভাবের কারণেই তার জীবন কাটছে এভাবেই। নিপেনের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সে ভালো হয়ে যাবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

ওই গ্রামের মৃত নরেশ চন্দ্র পালের ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে নৃপেন চন্দ্র পাল দ্বিতীয়। বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল দিন মজুরী করে কোনভাবে সংসার চালান। অপর দুই বোন স্বামীর সংসারে, কোনভাবে তাদের দিন কাটে। ছোট বেলাতেই বাবা হারান নৃপেন। তবে ছোট থেকেই নিপেন মেধাবী ছিলেন গ্রামের স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করেছেন। তার ১২ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় হঠাৎ করেই নিপেনের মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে করে তার পরিবার। ওই বয়সে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এসময় নৃপেন মানুষকে মারপিট, গালিগালাজ করা, ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়াসহ নানা ধরনের অত্যাচার শুরু করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জমি-জমা যেটুকু ছিল তা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করান পরিবারের লোকজন। একপর্যায় উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয় তৎকালীন চিকিৎসকরা।

কিন্তু গরীব পিতা-মাতা ও পরিবারের পক্ষে তার আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তখন কিশোর নৃপেনকে বাড়ির ঘরে বন্দী করে রাখা হয়। এভাবেই কেটে যায় কিছুদিন। তাকে বিয়ে দিলেই ভালো হয়ে যাবে, গ্রামের ঠাকুর-কবিরাজের এমন পরামর্শে নিপেনকে আবার বিয়ে দেয়া হয় একই এলাকার শিখা রানী পালের সাথে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। উল্টো নৃপেনের ঘরে এখন ৭ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। নিতাই চন্দ্র পাল পৃথকভাবে দিনমজুর করে সংসার চালায়। আর নিপেন ও তার স্ত্রী শিখা রানীকে বিধবা মা আরতি বালার ছোট একটা বাড়িতে গ্রামের লোকজনের সহায়তায় কোনভাবে দিন কাটছে। এমতবস্থায় অর্থের অভাবে নৃপেনের চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায়।

নৃপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, ১২ বছর বয়স থেকে নিপেনকে ঘরে বন্দী করে রেখেছি। এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন দিন নৃপেনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে অত্যাচার বেড়ে গেলে বাধ্য হয়েই তাকে গত ৫ বছর ধরে লোহার শিকলে বেঁধে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছি।

এদিকে নৃপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল বলেন, আগে পাগলামি কম থাকলেও দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থের অভাবে আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উন্নত চিকিৎসা করানো যেতো। এদিকে এক মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবন-যাপন করছি। সবকিছুর জন্য মানুষের কাছে হাত বাড়াতে হচ্ছে। তাই আমার স্বামী নিপেন চন্দ্রকে সম্পন্ন সুস্থ করে তুলতে সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমি নৃপেনের বিষয়টি শুনেছি কিন্তু কেউ তার সহযোগিতার জন্য লিখিতভাবে জানায়নি। তবুও আমি তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে নৃপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তার পরিবারকে সহায়তা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

জিএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মানসিক ভারসাম্যহীন গৃহবধূর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার 
৫০ ফুট উঁচু বিলবোর্ডের ওপরে উঠলেন নিজে, অতঃপর...
X
Fresh