টাঙ্গাইলে সড়কে ধস, যোগাযোগ ব্যাহত
টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়কের চারাবাড়ি ঘাট সেতুর কাছে অর্ধেকের বেশি রাস্তা ধসে পড়েছে। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ধলেশ্বরী নদীতে ধসে পড়ে সড়কটি। এনিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ধসে পড়ার ঘটনা ঘটলো। এতে তিন দিন ধরে পশ্চিমাঞ্চল ও শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কাতুলী, হুগড়া, কাকুয়া, মাহমুদ নগর ও নাগরপুরের ভাড়রা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান সুমন এবং স্থানীয় প্রভাবশালী আজাদের নেতৃত্বে নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিং করা হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাটি ট্রাকে করে নেয়ার সময় অতিরিক্ত লোডের কারণে একই জায়গা বার বার ধসে পড়ছে। স্থানীয়রা অবৈধ ড্রেজিং বন্ধের দাবি জানান।
এদিকে রাস্তা সচল করার জন্য এলজিইডি’র পক্ষ থেকে ফেলা হচ্ছে জিও। বর্ষার শুরু থেকে ব্রিজের ৫০০ গজ দক্ষিণে কয়েকটি অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী থেকে মাটি তোলা হচ্ছে। সেই মাটি ভারি ট্রাক দিয়ে ব্রিজের পশ্চিম পাশে লিংক রাস্তা দিয়ে আনা-নেয়ার সময় ভাঙনের স্থানে প্রচুর চাপ পড়ে। ফলে গেল রোববার ভোরে ওই রাস্তার মাটি ধসে গিয়ে টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও প্রশাসন প্রয়োজনীয় কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। প্রশাসন পদক্ষেপ নিলে এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হতো না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা ধসে যাওয়ার ফলে ব্রিজের ওপর দিয়ে মানুষ হেঁটে চলাচল করছে। সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চালকরা উভয় পাড়ে যানবাহন পার্কিং করে রেখেছেন। শ্রমিকরা জিও ব্যাগে বালু ভর্তি করছে।
সিএনজি অটোরিকশা চালক আজগর আলী বলেন, ‘তিনদিন ধরে রাস্তাটি ধসে গেছে, তাই যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রিজের নিচের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। যেকোনো সময় ব্রিজটি ভেঙে যেতে পারে। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার, তা না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
অটো রিকশা চালক আনিস মিয়া বলেন, ‘রাস্তা ধসে যাওয়ায় ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে না পারায় দুই পাশে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। যাত্রীরা ব্রিজের একপাশে নেমে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে আরেকপাশে গিয়ে গাড়িতে উঠছেন।’
কাতুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নায়েব আলী বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে ভারি ট্রাক চলাচল করে। সেকারণে একই স্থানে বার বার ধসে যাচ্ছে। তাই অবৈধ ড্রেজিং বন্ধের দাবি জানান তিনি।’
কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল আলী বলেন, ‘মাটির ট্রাক মোড় ঘোরানোর সময় অধিক চাপে বার বার রাস্তাটি ধসে পড়েছে। ফলে পশ্চিম টাঙ্গাইলের মানুষ খুব কষ্টে শহরে যাতায়াত করছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রশাসনকে অবিহিত করা হলেও তা বন্ধ হয়নি।’
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাজাহান আনছারী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শক করে এক হাজার জিও ব্যাগ পাস করা হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলা শেষ হলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে।’
টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম আজম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।’
এনএম/এসএস
মন্তব্য করুন