মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইয়ের ২১ লাখ টাকা নিয়ে উধাও বোন
দুনিয়ার সব মানুষ যখন বিশ্বাসের বাইরে থাকে তখনও একজন ভাইয়ের কাছে বোন অথবা বোনের কাছে ভাই বিশ্বস্ততার প্রতীক হয়ে থাকে। এমন বিশ্বাস যখন ভেঙে যায় তখনই আকাশ ভেঙে পড়ে মাথার ওপর। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায়। এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন ভাই।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ফরাযীকান্দি ইউনিয়নের তফাদার পাড়ার সিরাজুল আলী প্রধানের ছেলে দ্বীন ইসলাম বিগত ১২ বছর পূর্বে প্রবাসে পাড়ি জমান। লিবিয়া থেকে দুই বছর পর ফিরে এসে পুনরায় সৌদি আরব যান। সেখানে থেকে ১০ বছরে ২১ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন তার মা সূর্যবান বেগমের অ্যাকাউন্টে।
তার মায়ের চেকবই চুরি করে স্বাক্ষর জাল করার মাধ্যমে তার আপন বোন হেলেনা আক্তার কল্পনা ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঢাকার সাভারে নিজের ও স্বামী আবুল কালাম আজাদের নামে বাড়ি করেছেন। শুধু তাই নয় তাদের দলিলপত্র দিয়েও একটি এনজিও থেকে ১০ লাখ টাকা লোন এবং স্থানীয় আরও কয়েকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় হেলেনা আক্তার কল্পনা ও তার স্বামী। দ্বীন ইসলাম দেশে ফিরে জমি কিনবেন, ঘর করবেন এবং বিয়ে করার প্রস্তুতি নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেন। দেশে এসে তার মাকে নিয়ে টাকা তুলতে সোনালি ব্যাংক ফরাযীকান্দি শাখায় গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্টে মাত্র সাত হাজার টাকা আছে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সূর্যবান বেগম বলেন, আমার অ্যাকাউন্ট (১৫০৩২৩৪০৩৬০৭৬) থেকে আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার পর থেকে কোনও টাকা উত্তোলন করিনি। আমার চেক বই চুরি করে নিয়ে আমার মেয়ে হেলেনা আক্তার কল্পনা ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে স্বাক্ষর জাল করে টাকাগুলো তুলে নিয়ে গেছে। সে বিভিন্ন সময়ে এক লাখ, দুই লাখ তিন লাখ টাকা করে ভাগে ভাগে টাকাগুলো তুলেছে। এখন আমার ছেলে অসহায় হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
প্রবাসী দ্বীন ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা প্রবাস থেকে টাকা রোজগার করে দেশে পাঠাই। আমাদের টাকার যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে তো আমাদের দেশে টাকা পাঠানোর কোনও দরকার নেই। এভাবে ব্যাংক থেকে স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন হলে তো দেশের মানুষ ফকির হয়ে যাবে। টাকা চুরি করার জন্য সে আমার মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রও জাল করেছে। আমি নিজেও লজ্জিত আমার বোন হয়ে সে এমন জঘন্য কাজটি করতে পারলো। আর ব্যাংক কর্মকর্তারা কিভাবে তাকে সাহায্য করলেন? আমি সরকারের কাছে সঠিক তদন্তপূর্বক আমার টাকার সুব্যবস্থা কামনা করছি।
এদিকে সোনালী ব্যাংক ফরাযীকান্দি শাখার ব্যবস্থাপক মো. মোস্তফা পাটোয়ারী বলেন, কোনও লেনদেনে আমাদের যোগসাজস থাকে না। অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষর ‘সূর্যবান’ এর জায়গায় ‘সূর্যবানু’ হল কি করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাক্ষর ৮০% মিললেই টাকা দিয়ে দেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাই হয়েছে আইনের মাধ্যমে শেষ হবে। হেলেনা আক্তারের সঙ্গে কথা বলার জন্য টাকা উত্তোলনকৃত চেকের অপর পৃষ্ঠায় দেয়া মুঠোফোন নম্বরে (০১৭৫৮২৭৬১১৯) কল করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলার অনুরোধ করলে তিনি লাইন কেটে দেন।
জেবি
মন্তব্য করুন