বেগুনি ধানে ব্যাপক সাড়া শ্রীমঙ্গলে
সোনালি ফসল ধান। আর ক্ষেতের সেই সবুজ আর সোনালি ফসলটি যদি বেগুনি রংয়ের ধানগাছে রূপ নেয় তাহলে সোনালি ধানের দেশে বিষয়টি একটু হোঁচট খাওয়ার মতোই। চারপাশে সবুজ আর সোনালি ধানের সমারোহ। মাঝখানে বেগুনি রঙের পাতার ধান ক্ষেত। যে কারও প্রথম দর্শনে ধান ভাবতে অবাক লাগবে। এমনই বেগুনী পাতার ধান চাষ করে অবাক করে দিয়েছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের তিতপুর গ্রামের কৃষক মো. ছালেহ আহমদ।
মো. ছালেহ আহমদ পেশায় একজন দলিল লেখক। নেশায় মাছ চাষি। নিজেদের ছয় বিঘা জমি বর্গাচাষি দিয়ে চাষ করালেও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না তিনি। তাই তিনি বেগুনি ধানের প্রেমে ধরা পড়লেন। কৃষিতে ফিরে আসা ও ব্যতিক্রমী জাতের এই ওষুধি ধান কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবার নিজেই তিনি কৃষিতে নেমে পড়লেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আশিদ্রোণ ইউনিয়নের তিতপুর গ্রামে দেড় বিঘা জমিতে বেগুনি ধান চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক সালেহ আহমদ।
কৃষক সালেহ আহমদ বলেন, আমার কৃষক বাবার স্মৃতিকে শ্রদ্ধাভরে ধরে রাখতে এবং স্থানীয় কৃষকদের মানব শরীরের জন্য উপকারী এই ধানটির প্রচার ঘটাতেই মূলত আমি কৃষিতে এসেছি। এই ধান পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছি। উৎপাদন ভালো হলে আগামীতে ব্যাপক আকারে চাষ করব। আমার মামাতো ভাই বাহারাম খানের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ধান সংগ্রহ করে এনে বীজতলা বানিয়ে সেখানে রোপণ করি। প্রায় ৩৫ দিন পর বীজতলা থেকে চারাগুলো তুলে ধানক্ষেতে রোপণ করেছি। এই ধান এমনিতেই ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি উপকারী বলে শুনেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী অগ্রহায়ণে প্রায় আঠারো-বিশ মণ ধান পাওয়ার কথা।
এই বেগুনি ধান শ্রীমঙ্গলে প্রথম চাষ হয়েছে। কৃষক সালেহ আহমদ মৌলভীবাজার থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন। আমরাও তার এই ধানটি পর্যবেক্ষণ করছি। এ ধান থেকে ফলন কেমন আসে, কৃষক পর্যায়ে সাড়া কেমন ফেলে, চালটা কেমন হয়, শস্য কাটার পর এগুলো আমরা বুঝতে পারবো। এ ধানটি চাষের ব্যাপারে পরামর্শ আমরা দিয়ে যাচ্ছি বলে জানিয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুকুর রহমান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, গাইবান্ধা জেলার একজন কৃষক যিনি নিজের জমিতে নিজেই ধান চাষ করেন। ৬-৭ বছর আগে তিনি প্রথম এই ধানটি আবিষ্কার করেন। তারপর কয়েকটা ধানগাছ থেকে একটু একটু করে ধান সংগ্রহ করে পরবর্তীকালে ৩-৪ বিঘায় চাষের মাধ্যমে এ ধানের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছিলেন। এরপর কুমিল্লার কয়েকজন কৃষকও এ ধানটি চাষ করেন। গত বছর কিন্তু মৌলভীবাজারের এক কৃষক কুমিল্লা থেকেই বীজ নিয়ে এসে চাষ করেছিলেন।
ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে। ধানক্ষেতটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন এর ফলন কী রকম হবে, তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই ধান বোরো মৌসুমের জাত বলে জানান নিলুফার ইয়াসমিন।
জেবি
মন্তব্য করুন