• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যৌতুকের জন্য গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া  করে নির্যাতন

বরগুনা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩৭
মামলা গৃহবধূ নির্যাতন
বরগুনা

বরগুনার তালতলী উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামে স্বামী মানিক খানের দাবি করা যৌতুকের দুই লাখ টাকা দিতে না পারায় স্ত্রী মার্জিয়াকে (৩০) গেল বৃহস্পতিবার রাতে নির্মম নির্যাতন করেছে। স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে গরম খুন্তির ছ্যাকা এবং মারধরের পর চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত গৃহবধূ মার্জিয়াকে স্বজনরা উদ্ধার করে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে তালতলী উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামের আব্দুল খালেক খাঁনের মেয়ে মার্জিয়াকে বরগুনা সদর উপজেলার ধুপতি গ্রামের আনোয়ার খানের ছেলে মানিক খাঁনের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর খালেক খাঁন জামাতা মানিককে বাড়ি নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে মানিক শ্বশুরি বাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে।

মানিক দম্পতির দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গেল তিন বছর আগে মানিক ঢাকা চলে যান। ওই সময় থেকেই স্বামী মানিক স্ত্রী মার্জিয়া ও দুই কন্যার কোনও খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার মানিক শ্বশুরবাড়িতে আসেন এবং স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিয়ে যান।

ওইদিন রাত ১১টার দিকে স্বামী মানিক ব্যবসার কথা বলে স্ত্রী মার্জিয়ার বাবার কাছ থেকে ফের দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। এ টাকা দিতে স্ত্রী অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হয় মানিক। পরে মানিক স্ত্রী মার্জিয়াকে বেধরক মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে স্বামী মানিক, ননদ জাকিয়া ও শাশুড়ি আলেয়া মিলে মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেয় এবং চুল কেটে দেয়। তার ডাক চিৎকার শুনে প্রতিবেশী এবং স্বজনরা উদ্ধার করেন। পরের দিন শুক্রবার গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা মার্জিয়াকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

গরম খুন্তির ছ্যাকায় মার্জিয়ার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দগদগে ঘা হয়ে ফুলে গেছে। শরীর ব্যথায় নড়াচড়া করতে পারছে না। যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। শরীরের অন্যান্য জায়গায়ও আঘাতের ফলে কালচে দাগ হয়ে আছে। মাথার চুল কেটে দেওয়ায় মাথা এখন ন্যাড়া দেখাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী পার্শ্ববর্তী সূর্য্ভানু বলেন, রাতে মানিক খানের বাড়িতে ডাক চিৎকার শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মার্জিয়াকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করছে। তারা মার্জিয়ার শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাকা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমি যাওয়ার পরে তারা মার্জিয়াকে ছেড়ে দেয়।

মার্জিয়ার বাবা আবদুল খালেক খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে জামাতা মানিক। গেল তিন বছর ধরে আমার মেয়ের কোন খোঁজ-খবর নেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে আমার মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে জামাতা মানিক, তার বোন জাকিয়া ও মা আলেয়া মিলে আমার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করেছে। গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী লোক না হলে ওরা আমার মেয়েকে মেরেই ফেলতো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

গুরুতর আহত মার্জিয়া কান্নাজরিত কণ্ঠে বলেন, বিয়ের পর আমার বাবা আমার স্বামীকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দেন। ওই টাকা দিয়ে আমার বাবারবাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে। গত তিন বছর পূর্বে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ফেলে রেখে ঢাকা চলে যান। আমার কোন খোঁজ-খবর নেয়নি। বৃহস্পতিবার বাড়িতে এসে আমার বাবার বাড়িতে যায়। আমাকে কৌশলে ওই রাতে তাদের বাড়ি নিয়ে যায় এবং ব্যবসার কথা বলে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমি এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করে শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়েছে। মাথার চুল কেটে দিয়েছে। আমার ডাক চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে আসে। তারা না আসলে আমাকে মেরে ফেলত। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

অভিযুক্ত স্বামী মানিক খাঁন যৌতুক চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সামান্য ঝগড়াঝাটি হয়েছে মারধর কিংবা কোনও খুন্তির ছ্যাকা দেইনি।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র বলেন, মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে আগুনে ঝলসে যাওয়ার মতো চিহ্ন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তার মাথায় পেছনের চুল কাটা।

তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান আরটিভি নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাবুলকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় খুন হন মিতু
ফরিদপুরে হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন
শিশু হত্যা মামলায় বৃদ্ধের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 
বিকালে প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া, পরের দিন মিলল গৃহবধূর মরদেহ
X
Fresh