ভাসানচর গিয়ে যা দেখে এলেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল
রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি আবাসন প্রকল্পে কী ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা দেখতে গত শনিবার টেকনাফ থেকে ভাসানচরে পরিদর্শনে যান রোহিঙ্গাদের ৪০ জন প্রতিনিধি। এর মধ্যে দুই জন নারী সদস্য রয়েছেন। সেখানে তিন দিন অবস্থান ও পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বিভিন্ন ক্যাম্পে পৌঁছেন। ওই প্রতিনিধি দলের একজন বজলুর ইসলাম।
টেকনাফের শালবাগান ২৬ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্য বজলুর ইসলাম আরও বলেন, ওখানে ইটের দেওয়াল ও টিন শেড ঘর দেখেছি। ৮ পরিবারের জন্য একটি রান্না ঘর ও প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি করে গ্যাসের চুলা, ২টি গোসলখানা ও ২টি করে টয়লেট ও এক পরিবারের জন্য একটি রুম, তাতে ৪টি খাট রাখা হয়েছে। তাছাড়া ৪০ পরিবারের জন্য চারতলা বিশিষ্ট সাইক্লোন শেল্টার দেখেছি। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও আইনশৃঙ্খলার জন্য নৌ বাহিনী ও পুলিশ নিয়োজিত দেখেছি।
এর আগে মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে চট্টগ্রামে পৌঁছান রোহিঙ্গা নেতারা। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় রাতে তারা ক্যাম্পে পৌঁছান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় গত (৫ সেপ্টেম্বর) শনিবার টেকনাফ থেকে ভাসানচরে যান রোহিঙ্গাদের ৪০ জন প্রতিনিধি। এর মধ্যে দুই জন নারী সদস্য রয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে কী ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে তা বর্ণনা করা হয়। এরপর তাদের (রোববার ও সোমবার) দুই দিন পুরো আবাসন প্রকল্পের অবকাঠামো ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। এ সময় তাদের সঙ্গে নৌবাহিনী, পুলিশসহ আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রে আরও জানা যায়, সরকার শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গাকে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ওই দ্বীপে পাঠানোর অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়।
এর আগে অনেক রোহিঙ্গারা বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর থেকে জেগে ওঠা চরের মাটি নরম, বসবাসের উপযোগী নই, ঘূর্ণিঝড় হলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।ওই কারণে স্বচক্ষে দেখার জন্য সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুই নারী সদস্যসহ ৪০ জন শনিবার ভাসানচরে পৌঁছেছি এবং রোববার ও সোমবার ঘুরে দেখেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে বজলু বলেন, আমরা যা দেখেছি তা রোহিঙ্গা ভাইদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। একপর্যায়ে সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এ সময় বেশিরভাগ রোহিঙ্গা নারী কান্নাকাটি করেছেন। তারা স্বজনদের জন্য কান্নাকাটি করছিল।
তিনি আরও জানান, সেখানকার খাদ্য গুদাম, মসজিদ, স্কুল, খেলার মাঠ ও কবরস্থানসহ মাছ চাষের পুকুর পরিদর্শন করেছেন। যা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এটি সম্পূর্ণ আরআরআরসির এখতিয়ার। আমাদের কাছে নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে বলে জানা গেছে।
জিএ
মন্তব্য করুন