• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

যে কারণে ঝিনাইদহে আত্মহত্যার হার বেশি

আরটিভি নিউজ

  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:১৬
jhenaidah , Suicide,
ঝিনাইদহে আত্মহত্যার হার বেশি কেন?

সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ঝিনাইদহে। কী কারণে ওই জেলায় আত্মহত্যার হার বেশি সেই বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

তথ্য অনুযায়ী- ঝিনাইদহে যারা আত্মহত্যা করেন তাদের বেশিরভাগই অল্প বয়সী এবং নারী। জেলাটিতে এখন সরকারি ও বেসরকারিভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে নানা রকম উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

ঝিনাইদহে স্থানীয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করে, যাদের মধ্যে সোসাইটি ফর ভলান্টারি অ্যাকটিভিটিজ (সোভা) অন্যতম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪০০ জনের মতো মানুষ আত্মহত্যা করেন। জেলাটিতে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩১৫২ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। এই সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ২২ হাজার ৬৭৫ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন এই ৬ মাসে ঝিনাইদহে মোট ১২০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী- গত অন্তত এক দশক ধরে গড়ে দিনে ১ জন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছেন এই জেলায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী- প্রতিবছর বিশ্বে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যায় মারা যায়। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬ জন। স্থানীয় গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৬ থেকে ১০ জন, যা উন্নত দেশের কাছাকাছি।

সোভার প্রধান নির্বাহী জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে এই হার ১ লাখে প্রায় ২১ জন। অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনায় দেখা যায়, হয় কীটনাশক পান করে অথবা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
এই জেলায় কেন আত্মহত্যার হার বেশি সে নিয়ে সরকারি বা ব্যক্তিগত কোনো গবেষণার কথা জানা যায়নি। তবে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানিয়েছেন, জেলায় আত্মহত্যা করা মানুষের বড় অংশটি নারী এবং অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা।

তিনি বলেছেন, ঝিনাইদহের মধ্যে শৈলকূপা উপজেলায় আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। কিন্তু কেন এতো বেশি মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেন, সে বিষয়ে সরকারি কোনো গবেষণা নেই।

ডা. সেলিনা বেগম আরও বলেন, কোনো সার্ভে তো নাই আমাদের, কিন্তু কাজ করার অভিজ্ঞতায় যা বুঝি তা হলো পারিবারিক কলহের ঘটনা এখানে অনেক বেশি। তাছাড়া পারিবারিক পর্যায়ে ছোটখাটো মান-অভিমানের কারণেও আত্মহত্যা করে বসে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা।

তবে, এই জেলায় আত্মহত্যার উচ্চ হারের কারণ প্রসঙ্গে সোভার প্রধান নির্বাহী জাহিদুল ইসলাম ভিন্ন কিছু কারণের কথা জানিয়ে বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক কম, এমনকি সিডর বা আইলাতেও তেমন ক্ষতি হয়নি এই জেলার। এর মানে হচ্ছে এখানে জীবনের জটিলতা কম। যে কারণে মানুষ অনেক বেশি আবেগপ্রবণ এবং আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ কম। এ কারণে এ ধরণের ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা যায়।

বাংলাদেশের সরকারি হিসেব বলছে, দেশব্যাপী বছরে ১১ হাজারের মতো মানুষ আত্মহত্যা করেন। কিন্তু এটি মূলত পুলিশ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। দেশে প্রতি বছর ঠিক কত মানুষ আত্মহত্যা করেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান এখনো নেই।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথমবারের মতো মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট এ সংক্রান্ত একটি জরিপ করেছে, কিন্তু তার ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলছেন, ঝিনাইদহে আত্মহত্যার হার কেন বেশি, তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। এর পেছনে ভৌগলিক, জলবায়ুগত, জেনেটিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক কারণ কোনটি কাজ করেছে সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দরকার। সাধারণত আত্মহননের পেছনে মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। কারও জিনের মধ্যে হতাশা বা মানসিক অস্থিরতার বিষয়টি থাকতে পারে। আবার একজন মানুষের বেড়ে ওঠার সময় তার পরিবারে বা চারপাশে আত্মহত্যার উদাহরণ থাকা- এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মহত্যা ঠেকাতে ঝিনাইদহে এখন সব সরকারি সংস্থা মিলে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সে কাজ অনেকটাই গতিহীন অবস্থায় রয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে আত্মহত্যা ঠেকানোর জন্য পরিবার এবং সমাজকে প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলছেন, এক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে, তবে পরিবারকেও নিজেদের আচরণ এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার কিছু পদক্ষেপের কথা বলেছেন- পরিবারের ছোটদের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বাড়াতে হবে, তাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সন্তানদের খেলাধুলা করা এবং সামাজিক মেলামেশা করার সুযোগ বাড়িয়ে দিতে হবে। সন্তানকে চাপ মোকাবেলা করতে শেখাতে হবে, পড়াশোনা বা খেলাধুলা নিয়ে সন্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ না করা। ব্যর্থতা মেনে নেয়া

নিজেরাও শিখতে হবে, বাচ্চাকেও শেখাতে হবে। ব্যর্থতা জীবনের অংশ এটা বুঝতে হবে। তিরস্কার করা বা তাদের মর্যাদাহানিকর কিছু না বলা, মনে আঘাত দিয়ে বা সবসময় সমালোচনা না করা, সমবয়সী অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করা। আত্মীয়, বন্ধু এবং আশেপাশের পরিবারসমূহকেও এ বিষয়ে সচেতন করা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কেএফ/এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পাবনায় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের তিনদিনব্যাপী আবির্ভাব মহোৎসব
একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন
বরিশালে মসজিদে অগ্নিকাণ্ড, নিয়ন্ত্রণে ৩ ইউনিট
শান্তর অধিনায়কত্ব নিয়ে যা বললেন সাকিব
X
Fresh