• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

এতো মৃত্যু কখনও দেখেনি নারায়ণগঞ্জবাসী

  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:০৬
নারায়ণগঞ্জ এসি বিস্ফোরণ
নারায়ণগঞ্জে এসি বিস্ফোরণে নিহত স্বজনের ছবি নিয়ে আহাজারী

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও শোকের মাতম থামেনি। শুধু ফুতুল্লানয় এমন মৃত্যু নারায়ণগঞ্জবাসী আর কখনও দেখেননি।

দুর্ঘটনার পর থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে মসজিদে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ঘোর যেন কেটেও কাটছে না।

এদিকে ফুতুল্লার আহত ও নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে পুরো তল্লা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘরে ঘরে মাতম আর কান্নার রোল। কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন সকলে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যারাই ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন তারা নিহতের স্বজনদের শান্ত্বনা দেয়ার কোনও ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। মসজিদের নামাজ পড়তে গিয়ে লাশ হয়ে ফেরায় স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই কারও কাছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একসঙ্গে এতো মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা এ প্রথম দেখলো ফুতুল্লা তল্লাবাসী। লাশের ভারে রীতিমত স্তব্ধ পুরো নারায়ণগঞ্জ।

গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ফুতুল্লা তল্লা এলাকার মসজিদ বিস্ফোরণের ঘটনায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ মারা গেছেন আব্দুল হান্নান সাউদ (৫০)। তিনি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তার শ্বাসনালীসহ ৮৫% পুড়ে যায়।

নিহত ২৮জন হলেন, মসজিদের ইমাম মো. আব্দুল মালেক আনসারী (৬০) ও তার শিশুপুত্র জুনায়েদ (৭), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫), মসজিদ কমিটি সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ নুরুদ্দিনের দুই ছেলে সাব্বির (২২) ও জুবায়ের ১৪), ফটো সাংবাদিক নাদিম আহম্মেদ (৪৫), শামীম হোসেন (৪৮), জামাল (৪০), হুমায়ুন কবির (৭০), মোস্তফা কামাল (৩৪), ইব্রাহিম (৪৩), রিফাত (১৮), জুনায়েদ (১৭), কুদ্দুস বেপারী (৭২), রাশেদ (৩০), জয়নাল (৫০), মাইনুদ্দিন (১২), শুক্কুর আলী নয়ন (২৭), কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), রাসেল (৩৪), মো. বাহাউদ্দীন (৫৫), মিজান (৩৪), জুলহাস বেপারী (৩০), মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫), আবুল বাশার মোল্লা (৫১), মনির ফরাজি (৩০) ও ইমরান হোসেন (৩০)।

অপরদিকে এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও আটজন। তারা হচ্ছেন শেখ ফরিদ ও নজরুল ইসলাম যাদের শ্বাসনালীসহ ৯৩% পোড়া, হান্নান ও আব্দুল সাত্তার শ্বাসনালীসহ ৮০% পোড়া, ফরিদ ও আব্দুল আজিজ শ্বাসনালীসহ ৪৫% পোড়া।

গতকাল মঙ্গলবারও তল্লা ঘটনাস্থল এলাকায় শত শত লোকের উপস্থিতি দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই আসছে লাশ। লাশ আসার পর জানাজায় শত শত লোক শরিক হয়। এদিকে এ ঘটনায় চারটি তদন্ত কমিটিই আলাদা আলাদাভাবে কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সংসদে মসজিদের এই মর্মান্তিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। সোমবার একদল রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি রবিবার বিদ্যুত সম্পর্কে অভিজ্ঞ এমন সদস্যদের নিয়ে তদন্তে নেমেছে। অপরদিকে এই ঘটনায় রোববার ফতুল্লা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন আলাদাভাবে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেইন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি এ দুই তলা মসজিদের নিচতলার ফ্লোরের নিচে তিতাস গ্যাসের একটা লাইন আছে। ফ্লোরে পানি থাকার কারণে পানিতে বুদবুদ উঠেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, বিদ্যুত ও গ্যাসের সংযোগে এই ঘটনা ঘটেছে। মসজিদে দুইটি বিদ্যুত লাইন ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এসিগুলো আগুনে পুড়ে গেছে। এসিগুলো বিস্ফোরণ হলে আশপাশে আরও কালো দাগ পাওয়া যেতো। তাদের মতে বিদ্যুত ও গ্যাসের সংযোগে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম আরটিভি নিউজকে বলেন, বিষয়টি এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে। অন্য কোনকিছু মনে হচ্ছে না। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে ফতুল্লা মডেল থানার একজন এসআই বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, তিতাস, ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর যদি করো বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায় তখন তার বিরুদ্ধে এ মামলায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে দুর্ঘটনায় শিকার নিহত নাদিমের বড় ভাই মো. হেলাল উদ্দিন জানান জন্মের পর থেকে এ ধরনের ঘটনা আমরা তল্লাবাসী আর কখনও দেখি নাই। প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর শুনতে শুনতে স্তব্ধ নারায়ণগঞ্জবাসী। এদিকে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর অভিযোগ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড আগে থেকে উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না। বরং তারা ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিল। সেটা দিতে না পারাতে কাজ হয়নি। আর সে কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও তিতাসের স্থানীয় কর্মকর্তা তা অস্বীকার করেছেন। তবে তিতাস গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যুতের স্পার্কে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রসঙ্গত, গেল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদের এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা অর্ধশতাধিক মুসল্লির মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণে আহত ও নিহতের মধ্যে বেশিরভাগই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি-গার্মেন্টস কর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষ। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবার বাকরুদ্ধ। যারা আহত হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন তাদের অনেকের পরিবারের আর্থিক সামর্থ নেই এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে নিহতদের ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পঞ্চগড়ে গাছের ডালের আঘাতে শ্রমিকের মৃত্যু
নবাবগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
আমিরাতে বন্যা : ৩ ফিলিপাইন নাগরিকের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, চলতি বছরে ২৪
X
Fresh