মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা
মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্ররা। রোববার শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা এলাকায় লবলং খালে রাসেল রানা নামে স্কুল শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা দায়েরের পর তদন্ত করে হত্যার কারণ বের করা হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যা ব ও পিবিআই সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরের সিংদিঘি গ্রামের সুজন আলীর ছেলে রাসেল। বাবা মায়ের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে রাসেল রানা বড়। সংসারে সুখের আশায় হতদরিদ্র পরিবারের বাবা বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন রাসেল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে স্থানীয় শিশু কানন নামের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। কয়েকদিন আগে স্থানীয় ইমরানসহ কয়েক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন রাসেল। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাদক ব্যবসায়ীরা। গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় বারতোপা বাজারে চায়ের স্টল থেকে ধরে নিয়ে যায় ইমরানের নেতৃত্বে কয়েক মাদকব্যবসায়ী। পরে তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। একপর্যায়ে মারা গেলে রাতের আঁধারে পাশের লবলং খালের তীরে তার মরদেহ ফেলে দেয়া হয়।
ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবরে বাবা তার বিভিন্ন স্বজনদের নিয়ে সারারাত খুঁজতে থাকেন পরে। রোববার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিলাইঘাটা এলাকায় লবলং খালের পাড় থকে ছেলের ক্ষত বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেন।
নিহত রাসেলের বাবা সুজন আলী জানান, বহু কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। বাড়ির পাশেই একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতো। অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে ঘিরে। শনিবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বাজারে যাওয়ার জন্য। তার বন্ধু তাকে মোটরসাইকেলে করে বাজার পর্যন্ত পৌছে দিয়েছিল। পরে সন্ধ্যায় খবর পান তার ছেলেকে ইমরান নামের এক যুবক বাজার থেকে ধরে নিয়ে মারধর করছে। সারারাত ছেলের সন্ধানে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। কিন্তু ছেলেকে পাওয়া যায়নি। সবাই বলছে অভিযুক্ত ইমরান কয়েকজনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে নিয়ে ঘুরেছেন আর মোড়ে মোড়ে নামিয়ে মারধর করেছেন।
তিনি আরো জানান, গত ২ সপ্তাহ আগে ইমরানকে স্থানীয় মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেন। এর পর থেকে তার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গেছে ইমরান। গতকাল তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ইমরানের বাবার হাতে পায়ে ধরেছি। ইমরানকেও ছেড়ে দিতে মুঠোফোনে বারবার অনুরোধ করেছি, সে বলেছে কিছু মারধর করে ছেড়ে দিয়েছে। রাতেই বাড়ি চলে আসবে। কিন্তু সে তো আর এলো না। সন্ধ্যা থেকে পুলিশ কনস্টেবল মফিজুলের সাথে বারবার ছেলেকে উদ্ধার করতে সহযোগিতা চেয়েছি। পুলিশও বলেছে সামান্য মারধর করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সে বাড়ি চলে যাবে।
নৃশংস এই ঘটনায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহতের বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা। তারা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। আর অভিযুক্ত ইমরান বারতোপা গ্রামের বাক্কার মন্ডলের ছেলে।
এ বিষয়ে মাওনা ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, প্রায় দুইসপ্তাহ আগে স্থানীয় সলিং মোড় থেকে ইমরানকে ফাঁড়িতে ডেকে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ঘটনার রাতে রাসেলের পরিবারের পক্ষ থেকে কনস্টেবল মফিজুলের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মফিজুল ফাঁড়ির ঊর্ধ্বতন কাউকে বিষয়টি অবহিত করেননি।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ব্যাপক মারধর ও শ্বাসরোধ করে এ যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পর কি কারণে হত্যা সেটি জানা যাবে। থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।
পি
মন্তব্য করুন