• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে কোটি টাকার গাছ লোপাট

নড়াইল প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৩৯
Crops worth crores of rupees were destroyed by showing fake tenders
ছবি: সংগৃহীত

নড়াইলে-যশোর সড়কের দুই পাশে লাগানো সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে লাগানো গাছ কাটা হচ্ছে দেদারসে। কখনও রাতে, আবার কখনও ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে। সবক্ষেত্রেই বঞ্চিত হচ্ছেন গাছের প্রকৃত মালিক উপকারভোগীরা। স্থানীয় প্রশাসন আর বন বিভাগের যোগসাজশে সড়কের পাশের কোটি টাকা গাছের নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে অর্থ লোপাট হয়ে যাচ্ছে।

নড়াইল-যশোর সড়কের পাশে তুলারামপুর-মাইজপাড়া ১০ কিলোমিটার জেলা সড়ক। সড়কটি বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় হলেও এর পূর্ববর্তী মালিকানা ছিল এলজিইডি। নড়াইল-যশোর সড়কের তুলারামপুর ইউপি অংশের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সরকারি খাস জমির ওপর লাগানো এক হাজার গাছের অধিকাংশই নিজেদের ইচ্ছামতো কেটে নিয়ে গেছেন প্রভাবশালীরা। সর্বশেষ ৩৭১টি বড় গাছের ভুয়া টেন্ডার তৈরি করে তা কাটা শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় কোটি টাকা দামের এসব গাছ মাত্র ১৩ লাখ টাকায় টেন্ডার ধরে অর্থ লোপাটের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৭ দিনে প্রায় দুইশ’ গাছ কাটার পরে জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়। নিয়ম বহির্ভূত এসকল টেন্ডারের অভিযোগ তুলারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.বুলবুল আহমেদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানায়, সড়কের পাশে থাকা প্রায় পাঁচশটি বড় মেহগনি, কড়াই, শিশু গাছের প্রতিটির মূল্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে ২৫ হাজার টাকা গড় মূল্য ধরলে গাছের দাম পড়ে প্রায় কোটি টাকা। অথচ বন বিভাগের সঙ্গে যোগসাজসে ৩৭১টি গাছের মোট দাম ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার গড়ে প্রতিটি সাড়ে তিন হাজার টাকা। মাস খানেক আগে নিজ কার্যালয়ের অভিযোগ বাক্সে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন ইউপি চেয়ারম্যান।

তুলারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.বুলবুল আহমেদ এর দাবি, গেল দুই বছর ধরে এই সকল গাছ বন বিভাগের মাধ্যমে মার্কিং করা হয়। এরপর গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় বনবিভাগ। এরপর যশোর সামাজিক বনবিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঘুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে টেন্ডারের অনুমোদন দেয়। আমাদের অভিযোগ বাক্সতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

তুলারামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে তুলারামপুর মাইজপাড়া সড়কের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশে এক হাজার গাছ রোপণ করা হয়। এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ, কেয়ার বাংলাদেশের পক্ষে গণ সাহায্য সংস্থা এবং উপকারভোগীদের নিয়ে একটি চুক্তিনামা করা হয়। সেই চুক্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ ৪০ ভাগ, উপকারভোগী ও জায়গার মালিক ৫০ ভাগ এবং এনজিও পাবে ১০ ভাগ। এই চুক্তি সামাজিক বনায়নের নিয়ম বহির্ভূত হলেও চুক্তিতে থাকা এনজিও ও উপকারভোগীদের কোনও তথ্য না দিয়েই চেয়ারম্যান নিজের খেয়ালখুশী মতো অর্থ লোপাটের আশায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই গাছ কাটা শুরু করেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম বলেন, এলজিইডির সঙ্গে একটি চুক্তির ভিত্তিতে আমরা বন বিভাগের সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে সভা করি। সড়ক বিভাগের একটি পত্রের ভিত্তিতে উপজেলা পর্যায়ে সভা হলেও জেলা পর্যায়ে সভা হয়নি। তবে, চেয়ারম্যান আমাকে না জানিয়েই টেন্ডার করেছেন। এখন ডিসি স্যার যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই হবে।

১৯৯৮ সালে তুলারামপুর-মাইজপাড়া সড়কের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে সামাজিক বনায়নের আওতায় এক হাজার গাছ লাগানো হয়। ২২ বছরে প্রতিটি গাছের মূল্য ২০ থেকে ৫০ হাজার হলেও বনবিভাগ গড়ে দাম ধরেছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এই মূল্যে হতবাক গাছ সংরক্ষণকারী। যাদের গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পাবার কথা।

মালিডাঙ্গা গ্রামের সড়কের জমির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান গাছ কেটে বিক্রি করেছে অথচ আমরা বছরের পর বছর ধরে গাছ দেখাশুনা করলাম কোনও খবর দিলো না।সাংবাদিক আসার পর গাছ কাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

নিজের জমিতে প্রায় ২০টি গাছ দেখাশোনা করেছেন মন্নু বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমার জমিতে ২০টির মতো গাছ ছিল একেকটি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত। একটি টাকাতো পেলামই না এখন শুনছি গাছ বিক্রি করেছে পানির দামে।

অভিযোগ আছে নানা প্রক্রিয়ায় গাছের কম মূল্য নির্ধারণ করে ইউপি চেয়ারম্যানকে অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দিয়েছে স্থানীয় বন বিভাগ। এই হিসেব ওই বিভাগের কর্মকর্তারা ও আর্থিক লাভবান হয়েছেন। কম মূল্য ধরে চেয়ারম্যানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তারা।

নড়াইল বন বিভাগের ফরেস্টার এস কে আব্দুর রশীদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানুষ বন বিভাগের নাম শুনলেই কেমন করে ওঠে। কিন্তু আমরা যে ধরনের গাছ পেয়েছি সেই মূল্য ধরেছি। বাজারের দামের চেয়ে সরকারি মূল্য অনেক কম তাই কম ধরা হয়েছে।

এদিকে রাস্তার জমির মালিকানা রাজস্ব বিভাগের বলে দাবি করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়। চুক্তি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বেআইনি দাবি জেলা প্রশাসনের।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা আরটিভি নিউজকে জানান, সরকারি খাস জমিতে গাছ কাটা হচ্ছে এই অভিযোগ পাবার পরে গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কের এই জায়গা জেলা প্রশাসনের, সুতরাং আমাকে বাদ দিয়ে কোনও চুক্তি থাকতে পারে না। এটা নিয়ে আমরা মামলা করব।

আরও পড়ুন: আরও ১৯ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১
হাতিয়ায় ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়, বন্ধ করলেন এসিল্যান্ড
অভিযানে গিয়ে পাহাড় কাটা চক্রের ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল বন কর্মকর্তার
‘লবণাক্ত হয়ে যেতে পারে ঢাকার চারপাশের জমি’
X
Fresh