শরীয়তপুরে আবারও বাড়ছে পানি (ভিডিও)
গেল ৫ দিন আগেও শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হঠাৎ ৫ দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যে সকল এলাকা থেকে পানি নেমে গিয়েছিল তা আবার নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।
এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি বাহিত নানা রোগ, বিশুদ্ধ পানির অভাবসহ প্রচণ্ড খাদ্য সংকট। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কিছু কিছু ত্রাণ সহায়তা করা হলেও অনেক অঞ্চলে এখনো পৌঁছায়নি কোনও খাদ্য সহায়তা। এখনো পানিবন্দি অনেকের বাড়ি-ঘর তলিয়ে আছে বন্যার পানিতে। কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এসব মানুষ।
এদের একজন রাশিদা বেগম। ঘরে অসুস্থ স্বামী, তার কোন ছেলে নাই। দুই মেয়ে আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বিপাকে তিনি। আরটিভি নিউজকে তিনি বলেন, আগে ইটের ভাটায় কাজ করতাম, পানির জন্য তাও বন্ধ। এখন চকের (বিলের) পানি থেকে শাপলা তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে যা টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে খেয়ে পেট চালাচ্ছি। যে দিন শাপলা বিক্রি করতে পারি না সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় আশপাশের মানুষ কিছু দিয়ে গেলে তা নিজেরা না খেয়ে বাচ্চাদের খাওয়াই। বর্ষার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোনও সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। মেম্বারের কাছে অনেক বার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েও কোনও সাহায্য পাই নাই। ফটোকপি করে শুধু শুধু ৩০ টাকা নষ্ট করছি। ৩০ টাকা আমার কাছে লাখ টাকার সমান। শাপলা বিক্রি করতে বাজারে গেলে পুলিশ মুখোশ লাগাতে বলে। মুখোশ লাগানোর টাকাই যদি থাকতো তাহলে শাপলা বিক্রি করতে আসতাম?
রাশিদা বেগমের মতো পদ্মা তীরবর্তী নিচু এলাকার অনেক পরিবারই এখন পর্যন্ত পানিতে ডুবে দুর্ভোগে রয়েছেন। যাদের খোঁজ নেয়ার মতো কেউ নাই। এদিকে হঠাৎ করে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে পানির স্রোত। এতে নদী ভাঙন বাড়তে পারে বলে মনে করছে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব জানান, উত্তরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হঠাৎ করে গত ১৪ আগস্ট থেকে শরীয়তপুর পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত ২৪ ঘন্টায় শরীয়তপুর পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে স্রোত ও ঢেউ বেড়েছে। এতে নতুন করে নদী ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও নতুন করে ভাঙনের খবর পাওয়া যায়নি। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্ব সতর্ক রয়েছি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। ইতোমধ্যে আমাদের যে সকল পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছিল সে সকল পয়েন্টে জিও ব্যাগ, জিঝ ইউটিউব ও ব্লগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও জানান, নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরগুলোতে শাখা নদী ও খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। তবে আগের মত বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। কয়েকদিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় এবং উত্তরাঞ্চলের বৃদ্ধি পাওয়া পানি নেমে আসার ফলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভয়ের কোনও কারণ নেই এই পানি আগামী ২৫ আগস্টের পর থেকে কমতে শুরু করবে।
এসএস
মন্তব্য করুন