যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোরদের পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ (ভিডিও)
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ নয়, বরং কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বেধড়ক মারধরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আহত কিশোরদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতদের অনেকেই কী ঘটেছিল তা জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন খুলনা রেঞ্জর অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, একপক্ষের হামলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা তদন্তে করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
এদিকে এ ঘটনায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানসহ ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, দুইপক্ষের বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে সংঘর্ষ নয়, মারপিটেই তিন কিশোর নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দী কিশোর চুয়াডাঙ্গার পাভেল জানায়, গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ড (আনসার সদস্য) নূর ইসলাম তার চুল কেটে দিতে বলেন। সেদিন কেন্দ্রের প্রায় দুইশ জনের চুল কেটে দেওয়ায় আমার হাত ব্যথা ছিল। এ কারণে তার চুল পরে কেটে দেওয়া হবে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েকজন কিশোর তাকে মারধর করে। বিষয়টি হেড গার্ড অফিসে জানায়। সেখানে নূর ইসলাম অভিযোগ করেন, কিশোররা মাদক সেবন করে তাকে মারধর করেছে।
পাভেল আরও জানায়, ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে আমাদের অফিসে ডাকা হয় এবং এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। আমরা ঘটনার জানানোর এক পর্যায়ে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, অফিসার মুশফিকসহ অন্য স্যাররা আমাদের বেধড়ক মারপিট করে।
আহত আরেক কিশোর নোয়াখালীর বন্দী কিশোর জাবেদ হোসেন জানায়, স্যাররা ও অন্য বন্দী কিশোররা আমাদের লোহার পাইপ, বাটাম দিয়ে কুকুরের মতো মেরেছে। তারা জানালার গ্রিলের ভেতর আমাদের হাত ঢুকিয়ে এবং মুখের ভেতর কাপড় দিয়ে, পা বেঁধে মারধর করে। অচেতন হয়ে গেলে আমাদের কাউকে রুমের ভেতর আবার কাউকে বাইরে গাছ তলায় ফেলে আসে। জ্ঞান ফিরলে ফের একই কায়দায় মারপিট করে।
যশোরের বসুন্দিয়া এলাকার বন্দী কিশোর ঈশান জানায়, নিহত রাসেল আর আমি একই রুমে থাকতাম। আগামী মাসেই তার জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। স্যারদের বেধরক মারপিট আর চিকিৎসা না পেয়ে সে মারা গেছে। প্রবেশন অফিসার মারধরের সময় বলে, তোদের বেশি বাড় বেড়েছে। জেল পলাতক হিসেবে তোদের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে।
আহতরা আরও জানায়, মারধর করে তাদের এখানে-সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে একজন মারা গেলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর রাত আটটা থেকে ১১টার মধ্যে চার দফায় আহতদের হাসপাতালে আনা হয়।
তবে উন্নয়ন কেন্দ্রের অফিসার মুশফিক আহমেদ জানান, কিছুদিন আগে কেন্দ্রে বন্দী কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রড ও লাঠির আঘাতে মারাত্মক জখম হয় ১৭ কিশোর। প্রাথমিকভাবে উন্নয়ন কেন্দ্রে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চলে। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে নাইম, পারভেজ ও রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এসএ/এমকে
মন্তব্য করুন