• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

লেবাননে নিহত বাংলাদেশির বাড়িতে আহাজারি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৫ আগস্ট ২০২০, ১৮:১৪
Ahazari at the home of the slain Bangladeshi in Lebanon
লেবাননে নিহত বাংলাদেশির বাড়িতে আহাজারি

লেবাননের বৈরুতে অগ্নিকাণ্ডে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তরুণ মেহেদী হাসান রনি (২৪) নিহত হন। আজ বুধবার (৫ আগস্ট) ফজর নামাজের পর মেহেদী মৃত্যুর সংবাদ পান পরিবার।

ছয় বছর আগে সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে লেবাননে যান মেহেদী। যার মধ্যে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। আরও দুই লাখ টাকা পরিশোধের বাকি। মেহেদীই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে মেহেদী সবার বড়। মেহেদীর ছোট বোন জিয়াসমিন আক্তার হেপিকে (২২) সদর উপজেলার জাঙ্গাল গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ভাই সামিরুল ইসলাম (১৩) মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে এবং আরকে ছোট ভাই সাইমন ইসলাম (৫) নার্সারিতে পড়ে। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকেই মা ইনারা শোকে হত বিহবল হয়ে পড়েছেন।

গত মার্চ মাসে দেশে ফিরার কথা ছিল লেবানন প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রনির। কিন্তু করোনাভাইরাসের দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। বুধবার (৫ আগস্ট) সকালে রনির মৃত্যুর সংবাদ আসে তার পরিবারের কাছে। গতকাল মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) লেবাননের বৈরুতে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন রনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বাবা তাজুল ইসলাম। আর মা ইনরা বেগম ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

--------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: বৈরুতের বিস্ফোরণে বাংলাদেশি নিহত ৩, আহত ৭৮
--------------------------------------------------------------

রনির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অসচ্ছল পরিবারের কথা ভেবে রনি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ লেবাননে পাড়ি জমান। এর মধ্যে বাবা তাজুল ইসলামও বাহরাইন থেকে দেশে ফেরত আসেন। এর ফলে পরিবারের পুরো চাপ পড়ে রনির ওপর।

পরিবারের জন্য হাসিমুখেই কাজ করে যাচ্ছিলেন রনি। লেবাননের বৈরুতে একটি বিপণী বিতানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন তিনি। মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন বাড়িতে। কিন্তু এতো অল্প বেতনের টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। একটু বেশি বেতনে কাজ করার জন্য অন্য কোনও দেশে যেতে চেয়েছিলেন রনি। বাড়ির সবাইকে বলেছিলেন অনুমতি দেয়ার জন্য। কিন্তু ঋণের টাকা শোধ না হওয়ায় বাড়ি থেকে অনুমতি মিলেনি। অভিমান করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপিকে।

রনির বাবা তাজুল ইসলাম জানান, গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ ছেলে রনির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে তার। বাবার সঙ্গে কথা বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রাতে রনির এক সহকর্মী ফোন করে জানান তিনি অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর বুধবার (৫ আগস্ট) ভোরে আবার ফোন করে জানান রনি মারা গেছেন।

রনির ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপি বলেন, দেশে আসবে বলে দুই ভাগ্নির জন্য চকলেট ও খেলনা কিনে রেখেছিল। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারছিল না। গত পহেলা বৈশাখে ভাইয়ের জন্মদিনে মা নিজ হাতে কেক বানিয়েছিল। ভিডিও কলে আমরা সেই কেক কেটেছিলাম। এখন আমার ভাইয়ের মরদেহটা চাই।

মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিনুল হক পাভেল বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমি রনির পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। মরদেহ আনার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পাকিস্তানে রোজার মাসে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় ১৯ মৃত্যু
সুইমিংপুলে শিশুর মৃত্যু
বজ্রপাতে ৩ জেলায় ৪ জনের মৃত্যু
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে জিপের ধাক্কা, বিদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
X
Fresh