• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ছিটমহল বিনিময়ের ৫ বছরে বদলে গেছে কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া

আব্দুল কুদ্দুস চঞ্চল, কুড়িগ্রাম (উত্তর) প্রতিনিধি

  ৩১ জুলাই ২০২০, ২০:৪৬
Dasiyarchhara in Kurigram has changed in 5 years of enclave exchange
বিনিময়ের পরদিন থেকে ছিটমহলগুলো উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার

আজ ৩১ জুলাই। ছিটমহল বিনিময়ের ৫ বছর। ২০১৫ সালের এইদিনে মধ্যরাতে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের বিনিময় ঘটে। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলের মানুষের ৬৮ বছরের বন্দিদশার। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল স্ব-স্ব দেশের অভ্যন্তরে থাকা মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়। এতে বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হয় ১১১টি ছিটমহল অপর দিকে ভারতের সাথে যুক্ত হয় ৫১টি ছিটমহল।

বিনিময়ের পরদিন থেকে ছিটমহলগুলো উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার আমূল পরিবর্তন হয়। দেখতে দেখতে বদলে যায় অবহেলিত একটি ছিটমহল। রাস্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে লাগে উন্নয়নের ছোয়া। পরিবর্তন ঘটে বঞ্চিত এসব মানুষের নাগরিক জীবন ব্যবস্থায়।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫টি মসজিদ, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু, আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জন্য ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ডিজিটাল সার্ভিস ইমপ্লয়েন্টমেন্ট এন্ড ট্রেনিং সেন্টার। একটি নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদরাসা সম্প্রতি সরকার জাতীয়করণ করেছে।

অন্যদিকে ভূমি জটিলতার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিরসন হয়ে গেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৪ একর ও সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত ৯ একর জমির প্রাক জরিপ শেষ করে খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। দাসিয়ারছড়াসহ বিলুপ্ত ছিটমহলে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তির ৭৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫৬২ পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। উপজেলা কৃষি অফিসের অর্থায়নে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। দাসিয়ারছড়ায় ঘরে ঘরে সুপেয় পানি আর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার যুব ও যুব মহিলাদের দেয়া হয়েছে নানা ট্রেডে প্রশিক্ষণ।

বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের অধিবাসী মোজাফফর হোসেন, নুর আলম, মনিরুজ্জামান ও তানিয়া বেগম জানান, চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৬৮ বছরে আমাদের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটেছে। মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ দাসিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। আমরা কখনো কল্পনা করিনি সরকার এতো দ্রুত দাসিয়ারছড়ায় উন্নয়ন করবে।

সাবেক বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির আন্দোলনের নেতা গোলাম মোস্তফা ও মইনুল হক জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করে ছিটবাসী মুক্তি দিয়েছেন তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তার কাছে চিরঋণী। গত পাঁচ বছরে সরকার দাসিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। দাসিয়ারছড়ায় সরকারের উন্নয়নের ধারা চলমান থাকবে।

আরও পড়ুন: ঈদুল আজহা উপলক্ষে পাবনায় ১০ কেজি করে চাল বিতরণ


পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh