• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বসাকের চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটিও নদীগর্ভে বিলীন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ৩০ জুলাই ২০২০, ১২:৫৬
The two-storey building of Char Primary School in Basak has also been submerged in the river
ছবি সংগৃহীত

আজও শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নে অব্যাহত রয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর এলাকায় কয়েকদিন যাবত শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। এক সপ্তাহের ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় এক হাজার বাড়ি-ঘর। সেইসঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৮১ নম্বর বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ৭৮ বছর আগে ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ ৮১ নম্বর বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আজ পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার সময় ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতলবিশিষ্ট দ্বিতীয় ভবনটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৩৭৫ জন কোমলমতি শিশুর শিক্ষা জীবন।

গত এক বছর যাবত নীরব থাকা পদ্মা আবার দেখাল তার আগ্রাসী রূপ। গতকাল দুপুরে মানুষের চোখের সামনে পদ্মার প্রবল স্রোতের তোড়ে মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৮১ নম্বর বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলাবিশিষ্ট স্কুল ভবনটি। আজ দ্বিতীয় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় বসাকের চর এলাকার একমাত্র বিদ্যাপীঠ এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হলো। এছাড়া বিরতিহীন ভয়াবহ নদী ভাঙনে ইতিমধ্যে ওই এলাকার চারটি মসজিদ, একটি নুরানী মাদরাসাসহ জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

প্রত্যক্ষদশী ডা. তৌহিদ মুন্সী জানান, অনেক দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বসাকের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতলবিশিষ্ট দ্বিতীয় ভবনটি ভেঙে নিয়ে গেল সর্বনাশ আগ্রাসী পদ্মা। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো কষ্টকর। গত কালকের মতো আজও চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে নদীগর্ভে চলে গেল দ্বিতীয় ভবনটি। গত কয়েক দিনের নদী ভাঙণে প্রায় ৫০০ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এসব মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখনে। এদিকে ভাঙন শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি মহোদয়ের নির্দেশে ভাঙনপ্রবণ এলাকায় ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব জানান, উজানের পানি নামতে শুরু করার পর থেকেই পদ্মা বেষ্টিত জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার নদী তীরবর্তি এলকায় ভাঙন দেখা দেয়। বিলীন হওয়া স্কুলটি দীর্ঘ ৭৮ বছর আগে ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল দুপুরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এই বিদ্যালয়ের একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন এবং আজ সাড়ে এগারোটার দিকে দ্বিতলবিশিষ্ট সর্বশেষ ভবনটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এদিকে স্রোতের তোরে আজ চরাত্রা ইউনিয়নের বসাকের চরের নতুন নয়টিসহ প্রায় ৫৫টির মতো বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও এ যাবত জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, বড়কান্দি ও নাওডোবা ইউনিয়নের ৫০০টি ও নড়িয়া উপজেলার চরাত্রা ইইনিয়নের ৫৫টি বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়ন্তী রুপা রায় আরটিভি নিউজকে বলেন, পদ্মার প্রবল স্রোতে গতকাল চরাত্রা ইউনিয়নের বসাকেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা একটি ও দুই তলা পাকা ভবন পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৩০ গজ দূরত্বে থাকা অন্য দ্বিতল ভবনটিও রয়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে। এছাড়াও আজ বসাকের চরের ৫০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনকবলিতদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের আরটিভি নিউজকে বলেন, পদ্মার স্রোত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্কুল ভবনটি দুটি রক্ষার জন্য জিওব্যাগ ডাম্পিং করেও শেষ রক্ষা হলো না। তবে ঝুঁকির বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করা ছিল। বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার পর ওই সকল শিক্ষার্থীদের পড়া-শোনা চালু রাখার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত কাজ চলছে। ওই সকল পরিবারগুলোকে ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন ও নগদ টাকা দেয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh