• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পেটের তাগিদে স্কুলছাত্র এখন হোটেল বয়

পঞ্চগড় সংবাদদাতা, আরটিভি নিউজ

  ২৬ জুলাই ২০২০, ১৩:১০
পেটের তাগিদে স্কুলছাত্র এখন হোটেল বয়

করোনায় কত কিছুই বদলে গেছে। সেই সাথে বদলে গেছে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্র মুসলিম উদ্দিনের (১২) জীবন। যে বয়সে তার হাতে থাকবে স্কুলের বই কিন্তু তার পরিবর্তে হাতে টেবিল পরিষ্কারের কাপড় আর পাঁচটি পানিভর্তি গ্লাস।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের বৈড়াগিগছ গ্রামের দিনমজুরের ছেলে মুসলিমউদ্দিন গিতালগছ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মুসলিমউদ্দিন পেটের তাগিদে এখন হোটেল বয়। করোনার কারণে সংসারে অভাব কিছুটা দূর করার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে গত একমাস ধরে হোটেল বয়ের কাজ করছেন পরিবারের তৃতীয় সন্তান মুসলিমউদ্দিন। ভজনপুর বাজার হাইওয়ে রাস্তার পাশে অলি হোটেলে বাবা ছেলে একসাথে শ্রমিকের কাজ করছে।

জানা গেছে, দুই মেয়েসহ ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মুসলিমউদ্দিনের বাবা সলিমউদ্দিনের ছয় জনের সংসার। দুই বোন আর মুসলিমউদ্দিন গ্রামের কাছাকাছি গিতালগছ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। বড় বোন সুমি আক্তার (১৬) ওই স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্রী, মেজো বোন শিউলি আক্তার (১৫) একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। আর মুসলিমউদ্দিন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

সরেজমিনে ভজনপুরের সেই হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, মুসলিমউদ্দিন পানি ভর্তি কয়েকটি গ্লাস একসাথে করে টেবিলে পানি পরিবেশন করছে। টেবিলের উপর প্লেটগুলো একত্র করছে। মুসলিমউদ্দিন এর কাছে জানতে চাওয়া হল কেন হোটেল বয় এর কাজ করছ? বললো পেটের তাগিদেই হোটেলে কাজ করছি। আমি ক্লাস সিক্সে পড়ালেখা করি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সংসারে অভাব চলছে। এজন্য বাবা ছেলে একসাথে হোটেলে কাজ করছি। বর্তমানে স্কুল বন্ধ বাবা একাই সংসারে কষ্ট করছে তাই বাবার সাথে কাজ করতে এসেছি। বাড়িতে ভালো কিছু খেতে পারি না। হোটেলের কাজ করতে আমার কষ্ঠ হলেও দুইবেলা খেতে পারছি।

কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে মুসলিমউদ্দিন আরও বলে, বাবার ইচ্ছা আমি পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হবো। কিন্তু অভাবের কারণে বাবার সেই স্বপ্ন কি পূরণ হবে? পড়াশুনা করে বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা আমার। কিন্তু আমার বাবা যেদিন হোটেলে কাজ করবে না সেদিন আমাদের বাসায় কোনও খাবার তৈরি হয় না। আর ঈদে নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে চেয়েছেন আমার হোটেলের মালিক আমার মামা অলি।

মুসলিমউদ্দিনের বাবা সলিমউদ্দিন বলেন, অভাবের সংসার আমার শতবর্ষী মা সলিমা খাতুন ওরফে কালো বেওয়া এখন বয়সের ভারে শয্যাশায়ী। প্রতিনিয়তই তাকে ওষুধ খাওয়াতে হয়। অভাব অনটন আমার নিত্য সঙ্গী। তিন ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগান দেয়া এখন রীতিমত আমি দিশেহারা। হার না মেনে আমি সংসার যুদ্ধ করছি, ষষ্ট শ্রেণি পড়ুয়া মুসলিমউদ্দিন আমার একমাত্র ছেলে। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। তবুও সংসারের খরচ যোগাতে এখন ছেলেকে নিয়ে একই হোটেলে কাজ করছি। করোনাকালে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেরিয়েছি কিন্তু করোনায় সবকিছু বন্ধ ছিল শেষ পর্যন্ত শ্যালকের হোটেলে একটা কাজ পেয়েছি।

হোটেল মালিক অলি জানান, করোনার কারণে তাদের বাড়িতে অভাব অনটন চলছে এজন্য পরিবারটিকে বাঁচাতে আমি বাবা ও ছেলেকে কাজে লাগিয়েছি। মুসলিমউদ্দিন আমার ভাগিনা তার সঙ্গে বেতনের কোন চুক্তি হয়নি। বাবা ছেলে একসাথে আমার হোটেলে কাজ করছে। স্কুল খুললে আমি মুসলিমউদ্দিনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিবো।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
আরও ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত
করোনায় প্রাণ গেলো আরও ১ জনের, শনাক্ত ৪৯
আরও ৪৬ জনের শারীরে করোনা
X
Fresh