• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে জিতে যাবে বাংলাদেশ

সৈয়দ আশিক রহমান

  ০৭ জুলাই ২০২০, ২০:৩৬
Syed Ashiq Rahman
সৈয়দ আশিক রহমান

জাতিসংঘ বলছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব জুড়ে এমন খাদ্য সংকট দেখা দেবে যা গত ৫০ বছরেও দেখা যায়নি। বিশ্বে বড় আকারে দুর্ভিক্ষ হতে পারে এবং এতে প্রায় তিন কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। যদিও আফ্রিকা ও ‍যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব এবং এশিয়ার দেশগুলো এ খাদ্য সংকটের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে, তবুও দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলাদেশও এ ঝুঁকির বাইরে নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে আরও আগেই। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের বাম্পার ফলন এবং আউশ ও আমনের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করায় বাংলাদেশের সেই দুশ্চিন্তা কিছুটা কমই হতে পারে। খাদ্য সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে দেশব্যাপী মানুষের চলাচল এখনও স্বাভাবিক না হওয়া, সংক্রমণের আশঙ্কায় একটি বড় অংশ ঘরে বন্দী থাকা ও সীমিত পরিসরে দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অফিস খোলা থাকায় ফসলের ভালো উৎপাদন হওয়ার পরেও প্রাকৃতিক নয় কৃত্রিম সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকলেও করোনা পরবর্তী সময়ে জ্বালানি তেলসহ সবকিছুর দামই থাকবে ঊর্ধ্বমুখী তেমনই আভাস দেয়া হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। এছাড়া করোনা পরবর্তী সময়ে পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবারই থাকবে বাড়তি চাহিদা। সেজন্য কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ব্যবসায়ী কিংবা ভোক্তার কাছে পৌঁছবে চড়া দামে। বাড়তি এই দামের চাহিদা পূরণ করতে বড় সমস্যায় পড়তে হবে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত শ্রেণিকেও। কারণ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব শ্রেণির মানুষের আয় সীমিত রয়েছে। হঠাৎ করে বাড়তি খরচের বোঝা সবাইকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে।

পরিবহন ও শ্রমিকের বাড়তি খরচ মিটিয়ে ভোক্তা পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আর এখান থেকেই জন্ম নিতে পারে কৃষকের ন্যায্য দাম না পাওয়া কিংবা ফসল বিনষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা।তবে ভোক্তার কাছে ন্যায্য মূল্য ও সঠিক সময়ে সফল পৌঁছে দিতে রেলওয়েকে কাজে লাগানোর এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে সরকার।এবার মৌসুমি ফল আমের বাজারজাতে রেলওয়েকে ব্যবহার করায় একদিকে যেমন আম চাষিরা বড় ক্ষতি থেকে হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন, অন্যদিকে দুর্যোগের এই সময় রেলওয়ে খাতেও কিছু বাড়তি আয় হয়েছে। এই উদাহরণ পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকলে ফসল বাজারজাত ও কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে যাবে। সড়ক পথে কৃষিপণ্য সরবরাহে নানা বিড়ম্বনা ও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকেও মিলবে মুক্তি ।

কালোবাজারি ও মজুতদারি আমাদের একটি বড় সমস্যা। এই সংকটেও তা বন্ধ নেই। করোনা পরবর্তী সময়ে তা অনেকগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃত্রিম সংকটের ঘটনা বরাবরই আমরা দেখেছি, দুর্যোগের এই সময়ে তা থেকে বিরত থাকতে চাইবে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। অতএব করোনা পরবর্তী সময়ে খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা যতটা না প্রাকৃতিক হবে, ঠিক ততটাই কৃত্রিম হবে।

আমেরিকা ও কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর রফতানিকৃত গম, ভুট্টা আর সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীল এশিয়া ও আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ। কিন্তু করোনার কারণে এসব দেশে উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। আবার যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে চাহিদাও বেড়েছে। তাই করোনা পরবর্তী সময়ে এসব খাদ্য সংকট তৈরি হওয়া অবশ্যম্ভাবী। তাই আমাদের উচিত হবে যতটা দ্রুত সম্ভব আমদানিকৃত সব পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। তাতে দেশীয় কিছু কিছু পণ্যের দাম একটু বেশি হলেও আমদানিকে নিরুৎসাহিত করাই উচিত হবে। দেশীয় কোনো কোনো পণ্য ক্রয়ে খরচ কিছুটা বেশি হলেও বাড়তি সেই টাকা যাবে কৃষকের পকেটে। অর্থ্যাৎ ঘরের টাকা ঘরেই থাকবে।

বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ভারত এই দেশগুলোর অবস্থান বেশ ওপরের দিকে। খাদ্যের তালিকায় বেশ কিছু পণ্য আমরা ভারতের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কিন্তু পঙ্গপাল, করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং আম্পান মিলিয়ে সবদিক থেকেই চরম নাজুক অবস্থানে রয়েছে ভারত। মধ্য ভারতে পঙ্গপালের ধ্বংসযজ্ঞ এখনও চলছে। কিন্তু ভারত থেকে যেসব খাদ্য সামগ্রী আমদানি হয় তার উৎপাদন বাড়ানো ও দীর্ঘ সময় প্রাকৃতিক উপায়েই সংরক্ষণ সম্ভব। সম্প্রতি পেঁয়াজের সামান্য ঘাটতিতেই বাজার অস্থির হয়ে উঠে। অথচ পেঁয়াজ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ সম্ভব। এছাড়া রসুন আদাসহ অন্যান্য মসলার উৎপাদন বাড়ানো ও সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়ার সময় এখনই। খাদ্য শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি রপ্তানিরও বড় সুযোগ তৈরি হবে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে প্রতিটি দেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। যদি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা সফল হতে পারি তাহলেই জিতে যাবে বাংলাদেশ।

লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান

প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রধানমন্ত্রীর নিষ্ঠা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান পরশের
পণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে : প্রধানমন্ত্রী
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
‘দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি’
X
Fresh