• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আমার ঘর একটি, আমি আইসোলেশনে যাবো কোথায়

সৈয়দ আশিক রহমান

  ১৪ জুন ২০২০, ১০:৩৮
Chief Editor RTV Online and CEO RTV
সৈয়দ আশিক রহমান

গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন তিন হাজারের কম বেশি হচ্ছে, আর সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুও। ইতোমধ্যেই সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাটি লাখের দিকে ছুটে চলছে। বিষয়টি সরকারের নীতি নির্ধারকদেরও কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সেজন্য তারাও দেশকে তিন জোনে ভাগ করে লকডাউনের মতো নতুন নতুন চিন্তা ও পদক্ষেপ নিচ্ছে। কারণ শক্ত পদক্ষেপ না নিলে কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব না।

আসলে কোভিড-১৯ মহামারি কল্পনাতীতভাবে পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। দক্ষ শাসক বা প্রশাসক কেউ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না, কি করলে জীবন জীবিকা দুটির সমান্তরাল রেখা স্বাভাবিক রাখা যাবে। কোনো সিদ্ধান্তে কখনও গুরুত্ব পাচ্ছে জীবন, আবার কখনও জীবিকা। তাই বিশ্বব্যাপী দক্ষ শাসক ও প্রশাসকদের নেয়া সিদ্ধান্তের সমালোচনাও কম হচ্ছে না।

করোনা নিয়ে আজ সারা পৃথিবী উদ্‌ভ্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিনিয়ত তাদের গাইডলাইন পরিবর্তন করছে। করোনা যতটা না সিস্টেমকে ভেঙে ফেলেছে, তার চেয়ে বেশি সিস্টেমের অব্যবস্থাপনাকে সবার সামনে তুলে এনেছে। একটি কথা বলা হয়ে থাকে, যুদ্ধে হাজারটি বুলেট ছোড়া হলেও জয় কিন্তু ছিনিয়ে আনে একটি বুলেটই। তেমনি এখন অনাকাঙ্খিত ও অপরিচিত এই দুর্যোগকালে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত যেমন অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, তেমনি একটা ভুল সিদ্ধান্ত হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।

চীন ও ইউরোপে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তখন থেকেই এই রোগের নানা চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া কিছু বিতর্কের এখনও সমাধান হয়নি। ভাইরাসটি প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন আছে কি না। কোন ধরনের মাস্ক এবং কখন থেকে পড়তে হবে তার এখনও সমাধান নেই। আবার মৃত দেহ থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে এটি প্রথম থেকে বলে আসলেও পরবর্তীতে সে কথা থেকেও সরে গেছে ডব্লিউএইচও। এছাড়া ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনার পর শেষ পর্যন্ত এই ওষুধের ওপরই আপাতত ভরসা রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও এই মহামারি ও তার লক্ষণ এবং ধরন সম্পূর্ণ নতুন, কিন্তু তারপরেও কি মানুষকে সঠিকভাবে সচেতন করতে একটি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এই ছয় মাস সময় যথেষ্ট ছিল না?

ভাইরাসটি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও উন্নত বিশ্বের যেমন বার বার সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে, তেমনটি ঘটেছে আমাদের দেশেও। তবে একটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত সবাই একমত যে, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে একজন থেকে অপর জনের মাঝে। অর্থ্যাৎ এর বাহক হতে হচ্ছে আমি বা আপনাকেই। আর সেজন্য সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা ছাড়া বিকল্প কোনও সমাধান আপাতত কেউ দিচ্ছেন না। আবার আক্রান্ত হয়ে গেলে প্রথমেই হাসপাতালে ছুটাছুটি না করে ঘরে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু হাট, বাজার, ঘাটের পরিস্থিতি দেখলে সহজেই বুঝা যায় মানুষ এসব পরামার্শকে গুরুত্ব না দিয়ে নিয়ম না মানার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মৃদু আক্রান্ত রোগীরা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ হচ্ছেন। যেহেতু করোনার বেড ও আইসিইউ আক্রান্তের তুলনায় খুবই কম তাই মৃদু আক্রান্তদের বাসায় থেকে চিকিৎসারই পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে যারা মাঝারি আক্রান্ত এবং জটিল পরিস্থিতিতে আছেন তারাই মূলত হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু বাসায় চিকিৎসা নিতে হলে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন রাখা) থাকার যে ব্যবস্থা সেটি পুরোপুরি অনুসরণ করেই থাকতে হবে। না হয় পুরো পরিবার ও আশে পাশে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কিন্তু দেশের হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা মূলত এক কামরার বাড়িতে থাকেন। এখানে যারা মৃদু আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আইসোলেশনে যাবার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি ভয়ঙ্কর রূপে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বসবাস দুই কামরার বাড়িতে। এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৪ থেকে ৫ জন। আর হতদরিদ্র প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস এক কামরার বাড়িতে। যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যাও গড়ে ৪ থেকে ৫ জন। এসব মানুষের অর্থ খরচ করে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি নিজ বাসায় আইসোলেশনও সম্ভব নয়।

ঢাকার শাহবাগ মোড়ে ফল বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই, হাতে গ্লাভস নেই দেখে নিজের নিরাপত্তার কথা জানতে চাইলে সোজা উত্তর, গরিবের ডাক্তার আল্লাহ। আক্রান্ত হলে বাসায় ঘুমিয়ে থাকবো সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ আমার ঘর একটি, আইসোলেশনে যাবো কোথায়?

সামাজিক নিরাপত্তা ও দূরত্ব রক্ষার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। একইসাথে গরিব ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ও নগদ টাকার ব্যবস্থা করে সময়মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। এভাবে মৃদু আক্রান্ত খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করে পাশে দাঁড়ানোর সময় এখনই। সেক্ষেত্রে বন্ধ থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা সরকারি ভবনে বিশেষ ব্যবস্থায় এই আইসোলেশন হতে পারে। না হয় করোনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সফল হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান

প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ফের আসছে করোনা
X
Fresh