• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

আমি যেন করোনার বাহক না হই

সৈয়দ আশিক রহমান

  ২২ এপ্রিল ২০২০, ১৩:০০
লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান
লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান

বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রধান উপায় হচ্ছে ‘সঙ্গনিরোধ’ কোয়ারেন্টিন বা সামাজিক দূরত্ব। জনসমাগম এড়িয়ে চলে যতটা সম্ভব একা থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাইতো গোটা বিশ্ব আজ ‘লকডাউন’। কেউ কারও কাছে যাচ্ছেন না খুব প্রয়োজন ছাড়া। থাকছেন স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে।

বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। সরকারের সাধারণ ছুটি চলছে প্রায় একমাস হতে চলল। মানুষ থেকে মানুষকে দূরে রাখতে ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে এ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। যার জন্য দেশের প্রতিটি সেক্টর প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। শিল্প কারখানার চাকা বন্ধ, বন্দরে নোঙর করছে না নতুন কোনও পণ্যবাহী জাহাজ। সবই করা হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য।

সরকার তার সাধ্যমতো করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। ৩১ মার্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন এবং নানান দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এসব দিকনির্দেশনায় সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে।

কিন্তু সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা মানুষের উদাসীনতার চাদরেই ঢাকা পড়ছে বারবার। মানুষের অনীহার কারণে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠছে। হুমকির মুখে পড়ছে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে করোনাভাইরাস ছড়ায় মানুষের হাঁচি-কাশি এবং আক্রান্ত ব্যক্তির নিশ্বাসের মাধ্যমে। ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা কার্যক্ষমতা ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। ফলে, এই মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু দেশের হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায়, অলিগলি এমনকি ত্রাণ গ্রহণের লাইনেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন শত শত মানুষ, মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হচ্ছে। তারপরেও মানুষের মাঝে সচেতনতার ছাপ নেই। সম্প্রতি ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় দেশের প্রখ্যাত একজন আলেমের জানাজায় লক্ষাধিক মানুষের অংশ গ্রহণ করোনা মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একই রকম ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায় সরকার দলীয় একজন নেতার বাবার জানাজায়। এধরনের বড় জমায়েতের পেছনে ভক্তির চেয়ে আবেগ ও অজ্ঞতাই বেশি দায়ী।

এই ভাইরাসটির সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটি হচ্ছে এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং এখনো এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। উন্নত বিশ্বের পরিণতির দিকে তাকালেই বুঝা যায় এই ভাইরাসের ভয়াবহতা কতটুকু। শুধু ইউরোপ আমেরিকাতেই এখন পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখের বেশি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ভাইরাসটি একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে নিজের জিনগত গঠনে সবসময় পরিবর্তন আনছে, যাকে বলে মিউটেশন। তাই এ ভাইরাসটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই 'মিউটেট করছে' অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। যার ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

করোনা দেশের সীমানা, জাত ভেদ, বয়স কিছুই মানছে না। এমন নিষ্ঠুর মরণঘাতী ভাইরাসের ব্যাপারে সামান্যতম উদাসীনতা, খামখেয়ালিপনা, অজ্ঞতা কিংবা অবহেলা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তার উদাহরণ ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড)। করোনা আক্রান্তের তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নেয়ায় আজ একজন রোগীর জন্য ওই হাসপাতালের ২৩ চিকিৎসকসহ ৪২ জন আক্রান্ত।

একটি ভাইরাস নিজে নিজে কখনই ছড়াতে পারে না। তার একটি বাহক দরকার হয়। মানব দেহই হচ্ছে সেই বাহক। হাঁচি-কাশি বা স্পর্শ যেভাবেই হোক করোনা একটি দেহ থেকে ছড়িয়ে পরে অন্য দেহে। একজন বাহক থেকে সৃষ্টি হতে পারে হাজার হাজার বাহক। একটি মাত্র ভাইরাস দেহের কোনও এক কোষের ভেতরে প্রবেশ করে খুব দ্রুত বহু ভাইরাসের জন্ম দেয়। সুতরাং, কোনোভাবেই যাতে দেহে করোনার ভাইরাস ঢুকতে না পারে সে ব্যপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেকের সচেতনতাই পারবে নিজেকে রক্ষা করার পাশাপাশি নিজের প্রিয়জন, পরিবার, সমাজ ও দেশকেও রক্ষা করতে। প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে ভাইরাসটির বাহক হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। আমি যেন কখনোই করোনার বাহক না হই, এই বোধটুকু মনে জাগ্রত রাখতে হবে সবসময়।

লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান

প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার 
পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া 
কাভার্ডভ্যানের চাপায় চিকিৎসক নিহত
X
Fresh