• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ লড়াইয়ের নেতৃত্বে চীনা নারী

ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী, চায়না মিডিয়া গ্রুপ

  ০৮ মার্চ ২০২০, ১০:১১
করোনাভাইরাস
ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

চলতি বছরের ৮ মার্চ হচ্ছে ১১০তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং চীনের ৯৭তম নারী দিবস। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকেরা নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিন উদযাপন করেন। কারণ মানবজাতির সভ্যতা উন্নয়নের যাত্রায় নারীরা কখনো অনুপস্থিত ছিলেন না। চলমান নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লড়াইয়েও আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেক দক্ষ ও সুন্দর নারী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, সেবিকা, সমাজকর্মী, সামরিক অফিসার, সাংবাদিক ও পুলিশসহ অনেক প্রশংসনীয় জনসাধারণ।

চীনে এক প্রবাদ আছে, নারীরা অর্ধেক আকাশ ধরে রাখেন। এবার করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নারীদের পরিশ্রমী ও সাহসী নৈপণ্য আরো ভালো করে এ কথাটি প্রমাণিত হয়েছে। সত্যি কথা, সমাজ উন্নয়নে নারী-পুরুষ সমান আর নারীদের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হুপেই প্রদেশকে সমর্থন করার উদ্দেশ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার চিকিৎসক হুপেইয়ে যান। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার সেবিকা। তাঁদের বয়স বেশির ভাগ ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

সাধারণ চিকিৎসক ও সেবিকা ছাড়া, আরো রয়েছেন চীনা ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির সদস্য আর জাতীয় স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা কমিশনের উচ্চ-স্তরের বিশেষজ্ঞ লি লান চুয়ান, চীনা ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির সদস্য আর সামরিক বিজ্ঞান একাডেমির সামরিক চিকিত্সা ইনস্টিটিউটের গবেষক চেন ওয়েই এর মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। তাঁরা সাহস নিয়ে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছেন, জনসাধারণের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন। তাঁদের কথা, তাঁদের ছবি সত্যি প্রাণস্পর্শী।

চেনচিয়াং প্রদেশের নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি চিকিত্সক দলের সদস্য লিউ টিং টিং ২৫ জানুয়ারি উহানে পৌঁছেছেন। পরিবারকে দেয়া এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘অন্য দিনের সাধারণ অপারেশনের চেয়ে এখানকার কাজ অনেক কঠিন। এটা আমার শারীরিক শক্তি আর পেশাদারিত্বের ওপর বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রোটেকটিভ গাউন আর আইসোলেশন গাউনের টুপি আর গায়ের অংশ একসাথে, এটা পরার পরে শ্বাস নিতে কষ্ঠ, গতিশীলতাও মন্থর হয়ে যায়।

হাতে তিনটা মোজা পরে রোগীর জন্য ভিনিপানচার সঞ্চালন করতেও সহজ নয়। দু’জন রোগীর জন্য ভিনিপানচার সঞ্চালন করার পর আমার পুরো পিঠে ভিজে যায়। এভাবে একটানা চার ঘন্টা কাজ করার পর প্রোটেকটিভ গাউন খোলা যায়। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি প্রস্রব ও পানি পান করতে পারি না। যখন প্রোটেকটিভ গাউন ও মাস্ক খুলে ফেলি, তখন আমি আয়নার সামনে নিজেকে দেখতে চাই না। মুখটা অনেক বিশ্রী হয়। নাক ও কান স্পর্শ করা যায় না, কারণ অনেক ব্যথা পাই। কিন্তু এমন কষ্ট হলেও কোন চিকিত্সক কর্মস্থান থেকে সরে যান নি। তাঁরা সৈনিকের মতো ভাইরাসের সাথে লড়াই করেন।

ছাই ওয়েই মিন হচ্ছেন বেইজিং চীনা ঐতিহ্যিক চিকিত্সা হাসপাতালের ক্রিটিকাল মেডিসিন বিভাগের একজন সেবিকা। ২০০৩ সালে তিনি বেইজিংয়ের জরুরি ত্রাণ কেন্দ্রের সদস্য হিসেবে সার্স প্রকোপ সম্মুখীন হয়েছিলেন। এখন ৪৩ বছর বয়সে তিনি আবার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উহানের মহামারী লড়াইয়ের মাঠে গিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেয়া চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বয়সের কারণে আমাকে উহানে যেতে বাধা দিও না। শরীরের অবস্থা আর বয়সের সাথে তেমন সম্পর্ক নেই। আমি ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা সবই সহ্য করতে পারি। আমার গাঁয়ের শক্তি প্রচুর। শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের সেবা করার অভিজ্ঞতাও আছে।'

উহানে গিয়ে তিনি সবার বড় বোনের মতো কাজ করেন। ওয়ার্ডে যাওয়ার আগে তিনি সহকর্মীদেরকে রোগীকে সেবা করা আর নিজেকে রক্ষা করার নানা পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি খুঁটিনাটি কাজকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ আমার সহকর্মীদেরকে ভালোভাবে রক্ষা করতেই হবে।'

চীনের বসন্ত উত্সব চলাকালে উহানে যাওয়ার প্রাক্কালে সিআনের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিত্সা দলের নারী সদস্যরা একসাথে চুল কেটে ফেলেছেন, যাতে প্রোটেকটিভ গাউন পরার সময় সুবিধা হয়। নাপিত তাদের থাকার হোটেলে গিয়ে একটানা সাড়ে ১১ ঘন্টা কাজ করেছেন। সুন্দর ও লম্বা চুল কাটার সময় অনেক চিকিৎসক কেটেছেন। কিন্তু কেউ পালিয়ে যান নি। তাঁরা বলেন, “অসুবিধা নেই। আমার চুল আবার লম্বা হবে, সে সময় আমি আবার উহানে গিয়ে ভ্রমণ করবো।“

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, আমি চীনসহ সারা বিশ্বের নানা জায়গায় করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছেন, সাহসী নারীদের আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। আপনারা সবচেয়ে সুন্দরী।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
আরও ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত
করোনায় প্রাণ গেলো আরও ১ জনের, শনাক্ত ৪৯
আরও ৪৬ জনের শারীরে করোনা
X
Fresh