• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আমরা জানতে চাই

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

  ১০ আগস্ট ২০১৮, ০১:৩০

সংবাদ মাধ্যমে সেদিন আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলমের একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কয়জন পুলিশ মিলে শহিদুল আলমকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার চেহারা বিপর্যস্ত এবং খালি পা। ছবিটি দেখে আমার বুকটা ধক করে উঠেছে, কারণ আমার মনে হয়েছে এই ছবিটি আমারও ছবি হতে পারতো।

শহিদুল আলম যেসব কাজ করেন আমরাও আমাদের মতো করে সেসব করতে চাই, তার মতো প্রতিভাবান বা দক্ষ নয় বলে করতে পারি না। কখনও আমাদের কোনও কাজ বা কোনও কথা আপত্তিকর মনে হবে না এবং একই ভঙ্গিতে আমাদের গায়ে হাত দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নেয়া হবে না সেটি কে বলতে পারে? কিছুদিন আগে আমি ছুরিকাহত হবার পর আমার রক্তাক্ত অর্ধচেতন ছবি খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল, আমার সেই ছবি দেখে আমার আপনজন যতটুকু বিচলিত হয়েছিল আমি নিশ্চিত তারা যদি দেখতো একজন পুলিশ আমাকে আঘাত করে খালি পায়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা তার চাইতেও একশগুণ বেশি বিচলিত হতো। এই মুহূর্তে শুধু শহিদুল আলমের পরিবারের লোকজন নয় আমরাও অনেক বিচলিত।

আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলমের অপরাধটি কী আমি সেটা বুঝতে পারিনি। তিনি আল জাজিরাতে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, আমি সেটা দেখিনি তবে বিবিসির খবরে পড়েছি- তিনি আন্দোলন দমনের ব্যাপারে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। (আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে কখনও বিদেশি সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিই না, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন সাংবাদিক আমি ছুরিকাহত হওয়ার পর আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। এই মুহূর্তে ‘টাইম’এর একজন সাংবাদিক আমাকে ই-মেইল পাঠিয়েছে। আমি বিনয়ের সাথে তাদের বলি, বাংলাদেশ সম্পর্কে পশ্চিমা সাংবাদিকদের এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা আছে এবং আমি যেটাই বলি না কেন আমাদের দেশের নেতিবাচক রূপটা দেখানোর জন্যে সেটা ব্যবহার করা হবে তাই আমি তাদের থেকে দূরে থাকি)। কিন্তু শহিদুল আলমের মতো একজন আন্তর্জাতিক মানুষ, একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ দেশের অবস্থাটি বিদেশি সাংবাদিককে বলতেই পারেন। সেটি যদি সরকারের সমালোচনা হয় সরকারকে সেটা মেনে নিতে হবে কিছুতেই সেটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।

তার দ্বিতীয় অপরাধ হিসেবে ফেসবুক লাইভে তার বক্তব্যের কথা শুনতে পাচ্ছি, ফেসবুক লাইভ বিষয়টি কী- আমি সেটা সঠিক জানি না। সেখানে তিনি কী বলেছেন সেটাও আমি জানি না কিন্তু যেটাই বলে থাকেন সেটা তার বক্তব্য, এই বক্তব্য দিয়ে তিনি বিশাল ষড়যন্ত্র করে ফেলছেন সেটি তো বিশ্বাসযোগ্য নয়। আপত্তিকর কিছু বলে থাকলে, কেন সেটি বলেছেন সেটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে, আলোচনা হতে পারে, তার চাইতে বেশি কিছু তো হওয়ার কথা নয়! আমি শুনেছি তার থেকেও অনেক বেশি আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার পরেও অভিনয় শিল্পীর অনেকে পার পেয়ে গেছেন তাহলে খ্যাতিমান সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আলোকচিত্র শিল্পীর ওপর এই আক্রমণ কেন? যদি সত্যিই তিনি ষড়যন্ত্র করে থাকেন আমরা সেটি জানতে চাই।