• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আনন্দ এবং বেদনার কাহিনী

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

  ১১ আগস্ট ২০১৭, ১০:৫৮

এ বছর আমরা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে সব মিলিয়ে এক ডজন মেডেল পেয়েছি। খবরটি সবাই জানে কিনা আমি নিশ্চিত নই। আমাদের দেশের সংবাদপত্র খুবই বিচিত্র, তাদের কাছে সব খবর সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোনো কোনো অলিম্পিয়াডের খবর তারা খুবই গুরুত্ব নিয়ে ছাপাবে আবার কোনো কোনোটির খবর তারা ছাপাবেই না! কাজেই ভাবলাম আমি নিজেই সবাইকে খবরটি দেই। একটা দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে এক ডজন মেডেল সোজা কথা নয়।

আমরা গণিতে চারটি মেডেল পেয়েছি, দুটি সিলভার এবং দুটি ব্রোঞ্জ। এক নম্বরের জন্য আবার গোল্ড মেডেল হাত ছাড়া হয়ে গেলো, কিন্তু আমি ঠিক করেছি সেটি নিয়ে মোটেই হা-হুতাশ করবো না। দেখতে দেখতে একটা সময় চলে আসবে, যখন আমরা গোল্ড মেডেল রাখার জায়গা পাবো না! গণিতে গোল্ড মেডেল না পেলেও অন্য একটি ‘মেডেল’আমরা পেয়েছি, সেটি হচ্ছে এই অঞ্চলের সব দেশকে হারিয়ে দেয়ার ‘মেডেল’। আমাদের পাশের দেশ ভারতবর্ষ বিশাল একটি দেশ। লেখাপড়া জ্ঞানে-বিজ্ঞানে তারা অনেক এগিয়ে আছে। হলিউডের একটা সিনেমা তৈরি করতে যত ডলার খরচ হয় তার থেকে কম খরচে মঙ্গলগ্রহে তারা মহাকাশযান পাঠাতে পারে! কাজেই আমরা যদি গণিত অলিম্পিয়াডে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের হারিয়ে দিতে পারি তাহলে একটু অহঙ্কার তো হতেই পারে।

পদার্থ বিজ্ঞানেও আমরা এবারে চারটি মেডেল পেয়েছি তার মধ্যে একটি সিলভার এবং তিনটি ব্রোঞ্জ। পদার্থ বিজ্ঞানে মেডেল পাওয়া তুলনামূলকভাবে অনেক কঠিন কারণ সেখানে খাতা-কলমে সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকটিক্যাল করতে হয়। আমাদের দেশের লেখাপড়াটা এতই দায়সারা যে এই দেশের ছেলেমেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ল্যাবরেটরিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা একেবারেই পায় না। পদার্থ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের কমিটি নিজেদের উদ্যোগে ল্যাবরেটরির কাজকর্ম একটুখানি শিখিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিকের মতো ফল এসেছে, চার চারটি মেডেল! আমার আনন্দ একটু বেশি, কারণ এই চারজনের ভেতর একজন মেয়ে! আমরা কখনোই মেয়েদের ছেলেদের সমান সুযোগ দেই না, শুধু তাই না পারিবারিক বা সামাজিকভাবে তাদের ধরে-বেঁধে রাখি। তাই এই প্রতিযোগিতাগুলোতে সমান সমান ছেলে এবং মেয়ে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত একটুখানি পরিকল্পনা করে অগ্রসর হলেই ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের দলটিকেও পেতে শুরু করবো। পদার্থ বিজ্ঞানের মেডেল বিজয়ী এই মেয়েটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সহকর্মী শিক্ষকের মেয়ে, তাকে আমি ছোট থেকে দেখে আসছি, তাই আমার আনন্দটুকুও অন্য অনেকের থেকে বেশি।

ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে আমরা চারজনকে পাঠিয়েছি, চারজনই মেডেল পেয়েছে। তিনটি ব্রোঞ্জ এবং একটি সিলভার! (ইনফরমেটিক্স শব্দটা যাদের কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে তাদের সহজভাবে বলা যায় এটি হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের অলিম্পিয়াড!) ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের কথা বললেই আমাকে একবার প্রফেসর কায়কোবাদের কথা বলতে হবে। এই মানুষটি না থাকলে আমাদের ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডকে কোনোভাবেই এতদূর নিয়ে আসতে পারতাম না! অনেকেই হয়তো জানে না যে প্রতিযোগীরা যেন নিশ্চিন্তে প্র্যাকটিস করতে পারে সেজন্য তিনি তাদের নিজের বাসায় দিনের পর দিন থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন! আমাদের ধারণা ঢাকা শহরে চিকুনগুনিয়ার আক্রমণ না হলে আমাদের প্রতিযোগীরা ঢাকা শহরে এসে আরো একটু বেশি প্রস্তুতি নিতে পারত! আমরা ভয়ের চোটে তাদের ঢাকা আসতে দেইনি! গণিত অলিম্পিয়াডের মতোই ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডেও আমাদের আরো একটি ‘মেডেল’আছে, সেটি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতবর্ষকে হারিয়ে দেয়ার ‘মেডেল’! এতবড় একটি দেশ, তথ্যপ্রযুক্তিতে সারা পৃথিবীতে তাদের হাঁক-ডাক, কাজেই সেই দেশটিকে যদি আমাদের স্কুল-কলেজের বাচ্চারা হারিয়ে দেয় একটুখানি আনন্দ তো আমি পেতেই পারি!

আমাদের দেশের এই এক ডজন ছেলেমেয়ে তাদের এক ডজন মেডেল দিয়ে আমাকে যা আনন্দ দিয়েছে সেটি আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না।

০২.

ঠিক এই একই সময়ে আমাদের দেশের প্রায় এক ডজন ছেলেমেয়ে আমার বুকটা ভেঙে দিয়েছে। মোটামুটি এই সময়টাতেই এইচএসসি পরীক্ষার ফল বের হয়েছে, পরীক্ষার ফল মনের মতো হয়নি, তাই সারাদেশে প্রায় ডজন খানেক ছেলেমেয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি শুধু কুমিল্লা বোর্ডেই নাকি এগারো জন ছেলেমেয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবরটি জানার পর থেকে আমি শান্তি পাচ্ছি না, কোনো কারণ নেই কিন্তু নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে। শুধু মনে হচ্ছে, আহা আমি যদি আশাভঙ্গ এই ছেলেমেয়েগুলোর সঙ্গে একবার কথা বলতে পারতাম, একবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে পারতাম, জীবনটা অনেক বিশাল, তার তুলনায় একটা এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষা একেবারে গুরুত্বহীন একটা ব্যাপার! যার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তার জীবনের কিছুই আটকে থাকবে না, কোনো না কোনোভাবে সে সামনে এগিয়ে যাবে। আমি শিক্ষক মানুষ, আমার সব কাজ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে, আমি তাদের অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে পারতাম, এই একটি পরীক্ষার ফলাফল মনমতো না হলে তাতে জীবনের বিশাল প্রেক্ষাপটে কিছুই ঊনিশ-বিশ হয় না! আমি তাদের বোঝাতে পারতাম জীবনটা কত মূল্যবান, একটা জীবন দিয়ে পৃথিবীর কত বড় বড় কাজ করা যায়। কিন্তু সেটা করা যায়নি এই দেশের দশ-বারো জন ছেলেমেয়ে (কিংবা কে জানে হয়তো আরো বেশি) বুক ভরা হতাশা আর সারা পৃথিবীর প্রতি এক ধরনের অভিমান নিয়ে চলে গেছে। আমি তাদের আপনজনের কথা ভেবে কোনোভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারি না।

আমি যেটুকু জানি তাতে মনে হয় সারাদেশে পরীক্ষার ফল নিয়ে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সব অভিভাবকই কেন জানি ভাবতে শুরু করেছেন তার ছেলেমেয়েদের জিপিএ ফাইভ কিংবা তার থেকেও বড় কিছু-গোল্ডেন ফাইভ পেতেই হবে। তারা বুঝতে চান না সেটা সব সময়ে সম্ভব নয়, শুধু তাই নয়, তার প্রয়োজনও নেই। মানুষের নানা ধরনের বুদ্ধিমত্তার মাঝে লেখাপড়ার বুদ্ধিমত্তা শুধু একটা বুদ্ধিমত্তা। তাই তারা শুধু লেখাপড়ার বুদ্ধিমত্তাটাকেই গুরুত্ব দেবেন অন্য সব ধরনের বুদ্ধিমত্তাকে শুধু অস্বীকার করবেন না সেটাকে দমিয়ে রাখবেন সেটা তো হতে পারে না। বাবা-মা যখন তার সন্তানকে পৃথিবীতে এনেছেন তাকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে হবে, লেখাপড়ার চাপ দিয়ে জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুললে কোনোভাবেই তাদের ক্ষমা করা যাবে না। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যেখানে লেখাপড়া আছে কিন্তু পরীক্ষা নেই। সেই দেশের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে ভালো লেখাপড়া করে। আমাদের দেশ সে রকম দেশ নয়, এখানে লেখাপড়ার চেয়ে বেশি আছে পরীক্ষা। আমরা শিক্ষানীতিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছিলাম, সেই শিক্ষানীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চারটি পাবলিক পরীক্ষা চালু করা হয়েছে, যার অর্থ আমরা একটি ছেলে কিংবা মেয়েকে তার শৈশব আর কৈশোরে চার চারবার একটা ভয়ঙ্কর অমানুষিক অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাঝে ঠেলে দেই। তাও যদি সেই পরীক্ষাগুলো আমরা ঠিকভাবে নিতে পারতাম, একটা কথা ছিল, প্রতিবার পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে স্বীকার করে নেয়া হলে আবার নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে তাই সবাই মিলে দেখেও না দেখার ভান করে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা অনেক ছাত্রছাত্রী এবং তাদের বাবা-মাদের অপরাধী হওয়ার ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছি। এবং অল্প কিছু সোনার টুকরো সৎ ছেলেমেয়ে, যারা পণ করেছে তারা কখনো ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখবে না, মরে গেলেও অন্যায় করবে না তাদের বুকের ভেতর দেশের বিরুদ্ধে, চক্ষু লজ্জাহীন কিছু দেশের মানুষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা জন্ম দিয়ে যাচ্ছি। যে দেশে তাদের সৎ ছেলেমেয়েদের ভেতরে হতাশা জন্ম দেয় সেই দেশকে নিয়ে স্বপ্ন কেমন করে দেখব?

অথচ খুব সহজেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব, শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একবার ঘোষণা দিতে হবে, যা হওয়ার হয়েছে, ভবিষ্যতে আর কখনো প্রশ্ন ফাঁস হবে না। তারপর প্রশ্ন যেন ফাঁস না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে, এ ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য দেশের অসংখ্য আধুনিক প্রযুক্তিবিদ প্রস্তুত হয়ে আছে, কেউ তাদের কাছে একবারও পরামর্শ নেয়ার জন্য যায়নি!

কাজেই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ছেলেমেয়েদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে যেখানে একটি ছেলে কিংবা মেয়ে চিঠি লিখে বলেছে, তার বাবা-মা তাকে বলেছে যে, তাকে জিপিএ ফাইভ পেতেই হবে, যদি না পায় তার সুইসাইড করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কী ভয়ঙ্কর একটি কথা! এটি কতজনের কথা?

অসংখ্য ছেলেমেয়ে আছে যাদের পরীক্ষার ফল মনের মতো হয় না, তখন তাদের সান্ত্বনা দেয়া, সাহস দেয়া কিংবা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানোর দায়িত্বটি পড়ে তার বাবা-মা কিংবা অন্য আপনজনের ওপর। কিন্তু তারা অনেক সময়েই সেটি পালন তো করেন না, বরং পুরোপুরি উল্টো কাজটা করেন। তাদের অপমান করেন, তিরস্কার করেন, লাঞ্ছনা করেন, অসহায় ছেলেমেয়েগুলো সান্ত্বনার জন্য কার কাছে যাবে বুঝতে পারে না। কান পেতে রই (০১৭৭৯৫৫৪৩৯২) নামে একটা সংগঠন হতাশাগ্রস্ত এবং আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের সাহায্য করে। আমি এই সংগঠনের ভলান্টিয়ারদের কাছে শুনেছি প্রত্যেকবার পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পর তাদের আলাদাভাবে সতর্ক থাকতে হয়।

৩.

বছরের এই সময়টা আসলে আমার সবচেয়ে মন খারাপ হওয়ার সময়, কারণ এই সময়ে ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষাগুলো হয়। কেবল অল্প কিছু বাড়তি টাকা উপার্জন করার লোভে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা-আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা দিনে পর্যন্ত পরীক্ষা নিতে পারে না। একদিন দেশের এক কোণায় পরীক্ষা তার পরের দিন দেশের অন্যপ্রান্তে পরীক্ষা ছেলেমেয়েরা এক জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে রাতের বাসে উঠে সারারাত জার্নি করে ভোরবেলা দেশের অন্যপ্রান্তে পৌঁছায়, অজানা অচেনা জায়গা, তাদের হাত মুখ ধুয়ে বাথরুমে যাবার পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। সেভাবে ক্লান্ত বিধ্বস্ত ক্ষুধার্ত ছেলেমেয়েগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লোভের টাকা সংস্থান করার জন্য ভর্তি পরীক্ষা দেয়! সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মান কেউ দেখেছে? হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ দেয়ার কারণে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আমাকে দেখতে হয়েছিল যেখানে প্রত্যেকটা প্রশ্ন নেয়া হয়েছিল কোনো না কোনো গাইড বই থেকে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সক্ষম বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এরকম অবস্থা হয় তাহলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা হতে পারে কেউ কি অনুমান করতে পারে? সেজন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে রমরমা ব্যবসার নাম ইউনিভার্সিটি ভর্তি কোচিং!

আমি জানি, আমার এই লেখাটি যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চোখে পড়ে তাহলে তারা আমার ওপর খুবই রেগে যাবেন এবং বোঝানোর চেষ্টা করবেন তারা মোটেই বাড়তি টাকার জন্য ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বজায় রাখার দায়বদ্ধতা থেকে করছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটি হতেও পারে কিন্তু মোটেও সামগ্রিকভাবে সত্যি নয়। ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া থেকে একটি টাকাও না নিয়ে যদি কোনো শিক্ষক আমাকে চ্যালেঞ্জ করেন আমি অবশ্যই আমার বক্তব্যের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাইব! আছেন সে রকম শিক্ষক?

এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চোখে এখনো ভর্তি পরীক্ষা নামে এই ভয়ঙ্কর অমানবিক প্রক্রিয়াটি চোখে পড়েনি, কিন্তু এই দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির চোখে পড়েছে। তিনি কিন্তু দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের একটি সম্মেলনে একটি সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এই দেশের ছেলেমেয়েদের এই অমানুষিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করার অনুরোধ করেছিলেন। আমি খুব আশা করেছিলাম যে, তাঁর অনুরোধটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রক্ষা করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি সে রকম কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না! মনে হচ্ছে এই দেশের ছেলেমেয়েদের ওপর নির্যাতনের এই স্টিম রোলার বন্ধ করার কারোর আগ্রহ নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয় আগ বাড়িয়ে কখনোই এই উদ্যোগ নেবে না- আমরা একবার যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, দেশের ‘মেহনতী’ মানুষের রাজনৈতিক সংগঠন বামপন্থী দলগুলো এবং কমিউনিস্ট পার্টি মিলে সেটি বন্ধ কিরেছিল! (বিশ্বাস হয়?) কাজেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুরোধটি রক্ষা করার জন্য যদি কোনো উদ্যোগ নিতে হয়, সেটি নিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে। তারা কি সেই উদ্যোগটি নিয়েছে?

এই দেশের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের পতাকা বুকে ধারণ করে যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিভিন্ন অলিম্পিয়াডের মেডেল নিয়ে আসে তখন আনন্দে আমাদের বুক ভরে যায়। তার প্রতিদানে আমরা এই দেশের ছেলেমেয়েদের প্রতি যে অবিচারটুকু করি সেটি চিন্তা করে বুকটি আবার বেদনায় ভরে যায়!

কেন আনন্দের পাশাপাশি বেদনা পেতে হবে? কেন শুধু আনন্দ পেতে পারি না?

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পুরস্কারের জন্য কোনো সুপারিশ করতে হয়নি: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
একুশে পদক নিয়ে ফিরলেন জিয়াউল হক, গ্রামজুড়েই আনন্দ
‘চুরি করা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মাঝেও আনন্দ ছিল’
শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনন্দটা অনুভব করতে পারছি না : ডলি জহুর
X
Fresh