• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আহা চিকুনগুনিয়া

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

  ১৪ জুলাই ২০১৭, ০১:২৩

ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমি চমকে উঠেছি—পায়ের তলায় প্রচণ্ড ব্যথা! গতরাতে আমি ঠিক কোথায় কীভাবে হাঁটাহাঁটি করেছি যে পায়ের নিচে এতো ব্যথা, সেটা যখন চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করছি তখন আমার স্ত্রী আমাকে মনে করিয়ে দিল, বলল, এটা সম্ভবত চিকুনগুনিয়া। সে এই ভয়াবহ রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে তিনদিন থেকে কাবু হয়ে আছে!

গত বেশ কিছুদিন থেকে আমি খুব জরুরি কাজে ব্যস্ত—দিনের পর দিন টানা কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছি না। আমার স্ত্রীর ভবিষ্যদ্বাণী শুনে আমি বুঝতে পারলাম, এখন দেখতে দেখতে জ্বর উঠে যাবে এবং আমি সম্ভবত দীর্ঘদিনের জন্যে অচল হয়ে যাব। আমি তাই জ্বর উঠে যাবার আগে শেষ মুহূর্তে যেটুকু সম্ভব অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পড়লাম এবং ঢাকা শহরের অসংখ্য মানুষের সাথে সাথে আমাকেও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত করল!

অসুখ-বিসুখ খুবই ব্যক্তিগত বিষয়, এটা নিয়ে গল্প করার কিছু নেই। নিজের অসুখ নিজের কাছেই গোপন রাখতে হয়। কিন্তু আমার মনে হয়, চিকুনগুনিয়া নামের এই অসুখটি নিয়ে একটু কথাবার্তা বলা উচিত। আমি যেটুকু জানি- এটি এখন আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেই। ঢাকা শহরের যে মানুষের সঙ্গেই কথা বলছি তারা সবাই বলছেন এটা মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ঠিক কতজন মানুষ আক্রান্ত হলে একটা অসুখকে মহামারী বলা যায়, আমি জানি না। কিন্তু এটি যে ব্যাপক আকারে ঢাকা শহরের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তার মাঝে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

এই রোগটিতে দেখতে দেখতে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তার সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, ছোট থাকতে যে হাড় মুড়মুড়ি ব্যারামের গল্প শুনেছিলাম, সেটি নিশ্চয়ই এই অসুখ। প্যারাসিট্যামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে শরীরের প্রচণ্ড ব্যথা এবং জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে হয় এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ ওষুধ খেয়েও যখন জ্বর নামানো যায় না, তখন জীবনের ওপর বিতৃষ্ণা চলে আসে। অনেক ভোগান্তির পর জ্বর যখন কমে আসে তখন দেখা যায় মুখে রুচি বলতে কিছু নেই। খেতে হবে, সে কারণে জোর করে কিছু খেয়েও লাভ নেই, হড় হড় করে বমি হিসেবে বের হয়ে আসে। ডাক্তার বার বার করে বলে দিয়েছে শরীরের ওপর চাপ না দিতে— তাদের কথাকে যথোপযুক্ত গুরুত্ব না দেয়ার ফলটা আমি হাতে হাতে পেয়েছি। যখন মোটামুটি ঠিক হয়ে যাচ্ছি বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে ঘর থেকে একটুখানি বের হবার চেষ্টা করেছি তখন পুরো রোগটা আবার গোড়া থেকে শুরু হয়ে গেল— আবার জ্বর, আবার শরীরে ব্যথা, আবার বমি, আবার খাবারে অরুচি, আবার জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা!