• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ইফতার পার্টির টাকায় বাঁচুক গরিবের প্রাণ

সৈয়দ আশিক রহমান

  ২২ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৭
সৈয়দ আশিক রহমান

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে। গেলো বছরের ধাক্কা সামলে ওঠার চলমান লড়াইয়ে যখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা, তখন দ্বিতীয় দফার লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে খাবারের পাত্রগুলো প্রায় শূন্য হয়ে গেছে। একমুঠো খাবারের সন্ধানে অনেকেই ভিড় করছেন শহরের সড়কগুলোতে। দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের হাত পাততে ইতস্ততাবোধ থাকলেও পরিস্থিতি তাদের বাধ্য করছে। এসব নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে লাজ-লজ্জা, করোনা আতঙ্ক শুধুই বিলাসিতা, তুচ্ছ ব্যাপার মাত্র। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের সামর্থ অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দুস্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই সামান্য।

অভাবী ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো তাদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। সরকারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লকডাউনের প্রথম থেকেই সরকার অনুদান ও প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুঃস্থ, ভাসমান এবং অসচ্ছল মানুষকে সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে নতুন করে আরও ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু, বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়া একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক যেমন রিকশওয়ালা, হকার, দিনমজুরের সংখ্যা ৫ কোটি ১৭ লাখের বেশি। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। মোট জনসংখ্যার হারে তা ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ আগে থেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। সংখ্যার বিচারে তা প্রায় চার কোটি। মৌলিক চাহিদার অনেক কিছু থেকেই তারা বঞ্চিত। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দিন আনে দিন খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে থাকে তারা। করোনা সংকট তাদের রোজগারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে, তাতে চাহিদার ২৫ শতাংশও মিটবে না। বাকি যে ৭৫ শতাংশ বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে তাদের জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনেক কিছুই করার আছে।

অতীতে প্রতি রমজানেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও জমকালো ইফতার পার্টির আয়োজনের রেওয়াজ আমরা দেখেছি। রোজায় এসব ইফতার পার্টিতে সর্বমোট কতটাকা খরচ হয় তার সঠিক কোন হিসাব না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেন সেটি শত কোটি টাকার ওপরে। লকডাউনের কারণে ইফতার পার্টি আয়োজনের সুযোগ না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো সাশ্রয় হওয়া এই টাকা শ্রমিক, গরিব, অনাহারীদের জন্য ব্যয় করে তাহলে সংকটে পড়া দরিদ্র মানুষগুলোর কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।

করোনার মতো এমন মহাসংকট অতীতে আমাদের কখনো মোকাবেলা করতে হয়নি। কোটি কোটি মানুষ আজ বিপদগ্রস্ত, দিশাহারা, ক্ষুধার্ত। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কিংবা ধনী ব্যক্তিরা প্রতি রোজায় ইফতার পার্টিতে যে টাকা খরচ করতো সেই টাকা যদি এখন গরিবের জন্য ব্যয় করে, তবে তা হবে ত্যাগ ও মহিমান্বিত রমজান মাসে সর্বোৎকৃষ্ট এবং মহৎ কাজ। মনে রাখতে হবে, মানুষ হিসেবে নিজের সামর্থ নিয়ে এই অতিমারি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই জয়ী হবে মানবতা, রক্ষা পাবে আমাদের প্রিয় দেশ ও দেশের মানুষ।

লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান

প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইফতার পার্টি করে মিথ্যাচার চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের 
প্রধানমন্ত্রীর নিষ্ঠা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান পরশের
পণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে : প্রধানমন্ত্রী
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
X
Fresh