• ঢাকা শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
logo

নেসকোর নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য তদন্তে কমিটি গঠন

আরটিভি নিউজ

  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:৫৯
নেসকোর নিয়োগ, ও পদোন্নতি, বাণিজ্য তদন্তে কমিটি গঠন
সংগৃহীত

নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিতে (নেসকো) ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০ জন নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়োগ কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি তদন্তে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শরিফুল ইসলামকে কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুটি দৈনিকে খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর পাঁচ বছর আগের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এতদিন বিষয়টি গোপন রাখায় উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলামসহ ১০ কর্মকর্তাকে দায়ী করছেন পদবঞ্চিত কর্মকর্তারা।

অভিযোগ মতে, বিগত সরকারের এক প্রভাবশালীর আত্মীয় হওয়ায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম রাখা হয়নি।

নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতিতে নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) সৈয়দ গোলাম আহম্মেদসহ ১০ কর্মকর্তাকে দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে দায়ী অন্যরা হলেন- নেসকোর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (কারিগরি ও অপারেশন) এ এইচ এম কামাল, উপ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ বি এম ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সুবীর রঞ্জন পোদ্দার, সহকারী ব্যবস্থাপক আরিফুর রহমান, ইমদাদুল হক মিয়া, মোছা. মাসুমা আক্তার, মোহাম্মদ আবদুর রহিম, ফয়সাল বিন ওমর ও সজীব কুমার ঘোষ। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এর আগে ২০১৮ সালের ৫ জুলাই নেসকোতে ২০ জন নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য ত্রুটিপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেসময় সম্পূর্ণ অনিয়ম করে, আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ২০ জন নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়। বিষয়টি তখন দুদকের নজরে আনা হলে দুদকের পক্ষ থেকে পুরো অনিয়মের ব্যাখ্যা চেয়ে নেসকোকে চিঠি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রধান প্রকৌশলী হযরত আলীকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দুদক, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও নেসকোর কাছে জমা দেয়। প্রতিবেদনে ২০ কর্মকর্তা নিয়োগে বড় ধরনের অনিয়ম ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চাকরি প্রার্থীদের সাত বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও নিয়োগ পাওয়া ২০ জনের মধ্যে ১২ জনেরই সাত বছরের অভিজ্ঞতা নেই। চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলীর চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ বছর উল্লেখ করা থাকলেও গোলাম মোস্তফা নামে একজনের বয়স ৪০ বছরের বেশি ছিল। নেসকোর নিয়োগ কমিটি আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসব নিয়োগ দিয়েছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

নিয়োগের জন্য দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ সংগ্রহ করে যোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণসহ যাবতীয় কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ জন্য নিয়োগ কমিটিকে দায়ী করেছেন তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক সহকারী প্রকৌশলী যারা উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাননি বা পাওয়ার যোগ্য নন, তাদের আবেদন বৈধ হয় এবং তারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একজন সহকারী প্রকৌশলী উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী না হয়ে কোনোভাবেই সরাসরি নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পেতে পারেন না। কারণ, সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলীর পদটি পঞ্চম গ্রেডের। কিন্তু একজন সহকারী প্রকৌশলী সপ্তম গ্রেডের বা নিচের গ্রেডের।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিযোগ তদন্তকালে নিয়োগ কমিটির অনেক সদস্যই নিজেদের দায়দায়িত্ব অস্বীকার করেন।

নিয়োগ কমিটির সদস্য নেসকোর সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু মোত্তালেব বলেন, আমি সদস্য ছিলাম তবে নিয়োগের কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলাম না। অন্য সদস্যরা অধিকাংশই তদন্ত কমিটির সামনে নিজেদের দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যান। তারা নিয়োগ সংক্রান্ত সব দায়দায়িত্ব নেসকোর এমডি প্রকৌশলী জাকিউল ইসলামের ওপর চাপান। তদন্ত প্রতিবেদনে অসাধু পন্থায় নিয়োগ পাওয়া ২০ নির্বাহী প্রকৌশলীর নিয়োগ বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

পদোন্নতি বঞ্চিতরা বলেন, তদন্ত কমিটি ১০ জনকে দায়ী করলেও এসব দুর্নীতির মূলে আছেন নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম। তিনিই মূলত তদন্ত রিপোর্ট গোপন করেছেন। বিগত সরকারের প্রভাবশালী একজনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ায় গত ৯ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এসব নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যের মূল হোতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি কৌশলে তদন্তকারীদের ম্যানেজ করে তার নাম কাটতে সক্ষম হয়েছেন। নেসকোর নির্বাহী পরিচালকের সাথে যোগসাজশে এসব দুর্নীতি করেছেন এমডি জাকিউল ইসলাম।

২০১৯ সালে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন এতোদিন প্রকাশ না পেলেও সরকার পরিবর্তনের পর সম্প্রতি এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে নেসকোর বঞ্চিত প্রকৌশলীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

আরটিভি/এইএচ/এআর

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • রাজধানী এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পিএসসির নতুন সদস্য হলেন যারা
ডিসি নিয়োগে ঘুষ কেলেঙ্কারি, তদন্তে অগ্রগতি নেই
হাইকোর্ট বিভাগে নতুন ২৩ বিচারপতি নিয়োগ
প্রাণ গ্রুপে বিশাল নিয়োগ, প্রয়োজন নেই অভিজ্ঞতার