• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক খাতের বছর পার

মিথুন চৌধুরী

  ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:৪৪

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে পোশাক শিল্পখাত থেকে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে এই খাতে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেই অবস্থান বাংলাদেশের। কিন্তু দেশের নিরাপত্তাহীনতা ও শ্রমিক উস্কানিতে তিন যুগের এ খাতটির উন্নয়ন বেশ বিঘ্নিত হয়েছে। গেলো বছরটিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। একের পর এক জঙ্গি হামলা ও আশংকা, শ্রমিক অসন্তোষ, বিভিন্ন কারখানায় কমপ্লায়েন্সের (কারখানার নিরাপত্তা ও উন্নত কর্মপরিবেশ) ওপর জোরের অভাব ও অসম প্রতিযোগিতার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে বছর পার করলো পোশাক খাত।

ক্রেতারা সাধারণত কম দাম, উন্নত পরিবেশ এবং শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ্য রেখে বিনিয়োগ করে। সেদিক থেকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বেশ সুনাম আছে। একে একে বিশ্বের নামিদামি ব্যান্ড ও পাইকাররা বাংলাদেশমুখী হয়। কিন্তু রানা প্লাজা ধস ও তাজরিন ফ্যাশানের আগুনে তিনযুগের এ সুনামে কিছুটা চির ধরে। ফলে পোশাকখাতের ভালো অনেক উদ্যোগকে পেছনে ফেলে খারাপ চিত্রগুলো ক্রেতাদের নজরে আসে। তবুও কারখানার মালিক ও সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমের সুফলে ক্রেতারা বাংলাদেশমুখী হয়। কিন্তু জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ক্রেতাদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় রীতিমত বিপদেই আছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড বিজনেস এথিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সফররত ২৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। এসময় তারা পোশাকখাতের উন্নয়ন ও পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এ খাতে বিনিয়োগের কথা জানান।

পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, ক্রেতারা দাম কমাতে কমাতে এমন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছেন যে, ব্যাংকের ঋণ ও সুদ পরিশোধ, শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জেনারেটর খরচ, ফ্লোর ভাড়া দেয়ার পর মুনাফা থাকে না। রপ্তানি প্রণোদনা, ঝুট, লেফট ওভার বিক্রি করে মালিকেরা টিকে আছেন। মূল ব্যবসা থেকে মুনাফা না এলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন।

অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা মনে করেন ব্যবসায়ীদের মধ্যে একতার অভাব রয়েছে। অসম প্রতিযোগিতার মাঝে তারা পোশাক বিক্রি করছে। একজন এক ডজন টি-শার্ট বানাতে ৫ ডলার দাম চাইল, অন্যজন একই পণ্য বানিয়ে দিতে চাইছে ৪ ডলার বা তারও কমে। আর এসব অসম প্রতিযোগিতার কারণে পণ্যের মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর এ সুযোগটা গ্রহণ করার চেষ্টা করছে উঠতি অন্যান্য দেশগুলো।

এদিকে পোশাকখাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার নষ্ট করতে অসম প্রতিযোগিতা ও মুনাফালোভীর দায়ও কম নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের পোশাক বানানোর সক্ষমতা কম থাকলেও তারা বেশি অর্ডার নিয়ে বসে থাকে। আর এতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাইড দিতে চাই না। ফলে শিপমেন্ট মিস করা এবং গুণগত মান রক্ষা করতে না পারায় অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কাজ দেয়া কমিয়ে দিয়েছে।

চলতি বছরের ৮ মার্চ ক্রেতাদের দু’ জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের ৪৮ সদস্য পোশাক কারখানা ভবনের কাঠামোগত, বৈদ্যুতিক ও অগ্নিবিষয়ক সব ধরনের ত্রুটির সংস্কারকাজ শেষ করে সনদ পেয়েছে। তবে যে সকল প্রতিষ্ঠান কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে নজর দিচ্ছে না এমন ৯ টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। এ যাবত ১৩১ প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে সংস্থ্যা দু’টি। তবে ৩ হাজার উদ্যোক্তার এ খাতটিতে এটা তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে। বিশ্বের সেরা ১০ টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মধ্যে ৭টি বাংলাদেশের। পোশাকখাতের অনেক প্রতিষ্ঠান এখন নির্মানাধীন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এগুলোর কাজ শেষ হলে আগামীতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে ।

বছর শেষে মজুরিবৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিক অসোন্তষে ৫৯ কারখানা টানা কয়েকদিন বন্ধ থাকা এবং শ্রমিক ছাটাইকে মোটেই ভাল ভাবে দেখছেন না গার্মেন্টস মালিকরা। তারা মনে করছেন বিচ্ছিন্ন এ ঘটনাগুলো পোশাকখাতের জন্য কালো ছায়া নিয়ে আসতে পারে। তাই উষ্কানি প্রতিরোধ ও শ্রমিকদের মাঝে বিশ্বস্ততা বাড়াতে হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোন গোষ্ঠীর চক্রান্তে যদি দেশের পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৪০ লাখ পোশাককর্মী। তাই সরকার, কারখানা মালিক, শ্রমিক-সব পক্ষ এক হয়ে কাজ করলেই কেবল ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ্ উদ্দিন বলেন, পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের অন্যান্য খাতের দিকেও মনোযোগ দিতে। উদীয়মান চামড়া ও পাদুকার দিকে নজর দেয়া উচিত। তবে শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি শ্রমিকদের যোগ্য করে তুলতে হবে। আর অসেন্তাষের কারণে গার্মেন্টস যেন কোন ভাবে বন্ধ না হয় সেদিকে নজর দেয়া উচিত। কিছুদিন আগে ৫৯ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। তবে তা তাড়াতাড়ি মীমাংসা করা হয়েছে এটাই বড় কথা। তবে এমন ঘটনা পুনরায় যেন না ঘটে তার ওপর সকলের দৃষ্টি রাখা উচিত।

এমসি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিদায় ২০১৬ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh