• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শেয়ারবাজারে সুবাতাস!

মিথুন চৌধুরী

  ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:২৪

২০১৬ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে মন্দাবস্থা বিরাজ করলেও শেয়ারবাজার ছিল ইতিবাচক। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ১১টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৮৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ৮টি কোম্পানি সংগ্রহ করেছে ৪৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর প্রিমিয়ামে সংগ্রহ ৩৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৩টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ হয় ১৯০ কোটি টাকা। যা সবমিলিয়ে গেলো বছরের চেয়ে ২৫ কোটি টাকা বেশি।

এ বছর শেয়ারবাজারে বেশ কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিগুলো হচ্ছে; ড্রাগন সোয়েটার, ডরিন পাওয়ার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, ইভিন্স টেক্সটাইল, একমি ল্যাবরেটরিজ, ইয়াকিন পলিমার, ফরচুন সুজ, প্যাসিফিক ডেনিমস, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ড, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১ ও এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড।

২০১৬ সালের শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬০টি৷ এর মধ্যে কোম্পানি ২৯৪টি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৩৫টি, ডিবেঞ্চার ৮টি, গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড ২২১টি এবং করপোরেট বন্ড ২টি৷ মোট সিকিউরিটিজ সমুহের পরিমাণ ৫৮,৯৩০ মিলিয়ন ডলার এবং মোট ইস্যুড ক্যাপিটাল টাকায় ১,১৪৫,৩০০ মিলিয়ন (ইউএস ডলার ১৪৫৭৯ মিলিয়ন)৷

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোতে লেনদেন বৃদ্ধির সঙ্গে টাকার পরিমাণ বেশ বৃদ্ধি পায়৷ পুরো বছরে ৩৪,৯১২ মিলিয়ন সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়, যার মুল্য টাকায় ১,১৯১,৫৭১ মিলিয়ন৷ বছরে লেনদেন হয় মোট ২৪১ দিন৷ গড়ে সিকিউরিটিজ লেনদেন হয় ১৪৪.৮৬ মিলিয়ন ডলার। আর টাকায় গড়ে লেনদেন হয় ৪,৯৪৪ মিলিয়ন৷

৪৬২৯.৬৪ পয়েন্ট ডিএসই ব্রড ইনডেক্স(ডিএসইএক্স) নিয়ে বছরের যাএা শুরু হয়৷ বছর শেষে ডিএসইএক্স মূল্যসূচক ৪০৬.৪১ পয়েন্ট বা ৮.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০৩৬.০৫ পয়েন্টে উন্নীত হয়৷ ২০১৬ সালে ২৯ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ৫০৩৬.০৫ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং ২ মে সর্বনিম্ন ৪১৭১.৪১ পয়েন্টে দাঁড়ায়৷

বছরের শুরুতে ডিএস৩০ মূল্যসূচক ছিল ১৭৫০.৫৯ পয়েন্ট৷ বছর শেষে ডিএস৩০ মূল্যসূচক ৬০.৩৩ পয়েন্ট বা ৩.৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৮১০.৯১ পয়েন্টে উন্নীত হয়৷ ২৯ ডিসেম্বর ডিএস৩০ মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ১৮১০.৯১ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং ২ মে সর্বনিম্ন ১৫৯৯.২৪ পয়েন্টে দাঁড়ায়৷

এদিকে ডিএসইএক্স শরীয়াহ্ সুচক ১১০৭.১২ পয়েন্ট নিয়ে যাএা শুরু করে৷ বছর শেষে ডিএসইএক্স শরীয়াহ্ সুচক ৮৪.৭৫ পয়েন্ট বা ৭.৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১৯১.৮৭। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএস৩০ মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ১১৯১.৮ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং ২ মে সর্বনিম্ন ১০২০.০২ পয়েন্টে দাঁড়ায়৷

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলো ৩১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৭ মিলিয়ন টাকা বাজার মূলধন নিয়ে বছর শুরু করে৷ বছর শেষে বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৪ লক্ষ ১২ হাজার ৪৪১ মিলিয়ন টাকা৷ ২০১৫ সালের চেয়ে যা ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৮৩ মিলিয়ন টাকা বেশি৷ শতাংশের হিসাবে এ বৃদ্ধির হার ৮৷ এ বছরে সর্বোচ্চ বাজার মূলধন ছিল ২৮ ডিসেম্বর। যার পরিমাণ ছিল ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৬১২ মিলিয়ন টাকা৷ আর সর্বনিম্ন বাজার মূলধন ছিল ২ মে। যার পরিমাণ ২৯ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৯ মিলিয়ন টাকা৷

ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে প্রকৌশল খাতের ২টি, সার্ভিস অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট খাতের ১টিসহ মোট ৩টি কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করে। যার মাধ্যমে বাজার থেকে ৩,৬৫৮ মিলিয়ন টাকা মুলধন সংগ্রহ করে৷ এর মধ্যে ২টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ মোট ৯২০ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি করে৷ অপরদিকে ২০১৫ সালে কোনো কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করেনি৷ যা বাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৬ সালের শেষ দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোর মূল্য আয় অনুপাত (মার্কেট পিই) দাঁড়ায় ১৪.২৯ শতাংশ৷ অপরদিকে ২০১৫ সালের শেষ দিনে মূল্য আয় অনুপাত ছিল ১৫.২৩৷ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতের মার্কেট পিই ৮.১৪, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মার্কেট পিই ৯.৫৩, টেক্সটাইল খাতের মার্কেট পিই ১২.৭২৷ ব্যাংকিং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মার্কেট পিই ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে৷ যা সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে৷ সামগ্রিক বাজার মূল্য আয় অনুপাত ১৪.২৯ শতাংশ। যা খুবই কম৷

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোর খাতভিওিক লেনদেন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ বছরে লেনদেনের ভিওিতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে প্রকৌশল খাত, যা মোট লেনদেনের ১৬.৭৭ শতাংশ। অন্যান্য খাতগুলোর লেনদেন যথাক্রমে জ্বালানি এবং শক্তি খাত ১৪.২৩ শতাংশ, ঔষধ ও রসায়ন খাত ১৩.৯২ শতাংশ, টেক্সটাইল খাত ১০.৯৪ শতাংশ, ব্যাংকিং খাত ৮.৮৭ শতাংশ, আর্থিক খাত ৬.৩৮ শতাংশ, বিবিধ খাত ৫.৬০ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত ৫.৫১ শতাংশ, সিমেন্ট খাত ৩.৭৬ শতাংশ, আইটি খাত ২.৩৪ শতাংশ, বীমা খাত ২.৩০ শতাংশ, সার্ভিস অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট খাত ২.১৪ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশনস খাত ১.৮৭ শতাংশ, ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেইজার খাত ১.৪০ শতাংশ, ট্যানারি খাত ১.৩১ শতাংশ, সিরামিক খাত ১.২২ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ০.৯৯ শতাংশ, জুট খাত ০.২৩ শতাংশ, পেপার এন্ড প্রিন্টিং খাত ০.২০ শতাংশ, এবং করপোরেট বন্ড ০.০১ শতাংশ৷

ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে ব্যাংকিং খাতের ১৫টি, আর্থিক খাতের ৯টি, প্রকৌশল খাতের ১৬টি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৭টি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ৬টি, টেক্সটাইল খাতের ২১টি, ঔষধ ও রসায়ন খাতের ১৪টি, সার্ভিস অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট খাতের ৪টি, আইটি খাতের ৪টি, সিরামিক খাতের ১টি, ইন্সু্যরেন্স খাতের ২৩টি, এবং বিবিধ খাতের ৬টিসহ মোট ১২৬টি কোম্পানি ২৫০৮ মিলিয়ন বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২৫,০৮৫ মিলিয়ন টাকা মূলধন বৃদ্ধি করে৷ অপরদিকে ২০১৫ সালে ১৪৬টি কোম্পানি ২৯৭৭ মিলিয়ন বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২৯,৭৬৮ মিলিয়ন টাকা মূলধন বৃদ্ধি করে৷

বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেএে ২০১৬ সাল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে৷ ২০১৬ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৭,৭৩৩ মিলিয়ন টাকা৷ এর মধ্যে ক্রয়কৃত সিকিউরিটিজের পরিমাণ ৫০,৫৭০ মিলিয়ন টাকা এবং বিক্রয়কৃত সিকিউরিটিজের পরিমাণ ৩৭,১৬৩ মিলিয়ন টাকা৷

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫৩ বিবিবি ধারা অনুযায়ী, ব্রোকারেজ কোম্পানি থেকে উৎসে কর ৬৭১.৮৩ মিলিয়ন টাকা এবং আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫৩এম ধারা অনুযায়ী স্পন্সর এবং প্লেসমেন্ট সিকিউরিটিজ বিক্রয় বাবদ ২১৩.৭৪ মিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করে৷

ডিএসইতে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয় এ বছর৷ এ অনলাইন পেমেন্ট চালুর ফলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাই খুব সহজেই বিভিন্ন সেবা ও ট্রেনিংয়ে অংশ নেয়ার রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন৷ বিদায়ী বছরেই ডিএসইর নিজস্ব বুক বিল্ডিং সিস্টেম সফটওয়্যার চালু করা হয়।

প্রযুক্তিগত সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছর যাত্রা করে ডিএসই-মোবাইল৷ ২০১৪ সালে বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নাসডাক এবং ফ্লেক্সট্রেডের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করে ডিএসই। শুধু তাই নয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন ও সব ধরনের তথ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতে ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানি প্রোফাইলের আপডেট ভার্সন চালু করা হয়৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক আরো জোরদার মনিটরিং করলে শেয়ারবাজার আরো উদ্ভাসিত হবে। আগের মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বিনিয়োগকারীদের মাঝে এখন শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা এসেছে। নতুন নতুন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হচ্ছে। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক। তবে যেহেতু বাজারটি পুরোপুরি আইটিভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত, তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো বাজারটি যাতে হ্যাকিংয়ের শিকার না হয়; সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর রাখতে হবে।

এমসি/ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিদায় ২০১৬ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh