• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

ঢাকায় ১৫ মিনিটের সড়ক ৪ ঘণ্টায় পার

শেখ ফরিদ

  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:৫২
বাবুবাজার ব্রিজে যানজট

রাজধানীর পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত, রায়েরবাজার, নয়াবাজার ও বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু হয়ে কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার প্রতিটি ফুটপাত, অলিগলি ও মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, লেগুনা, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড ও পার্কিংয়ের কারণে প্রতিদিনই তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও দখলদারিত্ব বাড়ায় পুরান ঢাকায় যানবাহনও বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও হাসপাতালগামী রোগীসহ দূরপাল্লার যাত্রীরা বাবুবাজার ব্রিজের যানজটের তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন। ফলে পথেই ঘটছে মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঘটনা। তবে সড়কে তীব্র যানজটের জন্য নয়াবাজার ট্রাফিক পুলিশ দায় চাপাচ্ছে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার উপর। এ দুটি সংস্থার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পুরান ঢাকায় বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র যানজট হচ্ছে। খোঁড়াখুঁড়িতে যানবাহন চলাচলে সড়ক অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তাই মূল সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। রাস্তায় চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে দায়িত্বরত বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ।


খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, শয়িরতপুর, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও মাওয়াসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চচলগামী অধিকাংশ লোকই ঢাকায় প্রবেশ করতে পুরান ঢাকার কেরানীগঞ্জ সড়ক পথে চলাচল করে। কেরানীগঞ্জের কদমতলি থেকে বাবুবাজার সেতুর উপরেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। কদমতলী থেকে বাবুবাজার সেতু হয়ে গুলিস্তান যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগছে। যেখানে মাত্র ১৫ মিনিটে যাওয়া সম্ভব। যানজটের এ দুর্ভোগ লাগবে কর্তৃপক্ষে কঠোর নজরদারি দরকার বলে মনে করছেন এ রুটে চলাচলকারী ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী পথচারীরা বলছে, পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিগলিসহ মহাসড়কের যানজট যেন বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ও অবহেলায় ট্রাফিক আইন না মেনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রী ওঠা-নামাসহ রাস্তার দু’পাশ দখল করে দোকান ও গাড়ির স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় এমনটাই হচ্ছে। ফলে যানবাহন ছেড়ে গন্তব্যস্থলে পায়ে হেঁটে চলছে পথচারী, শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের রোগীরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যানজট নিরসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে দৈনিক ও মাসিক সালামির ভিত্তিতে অবৈধ দখলদারদের সহযোগিতা করছেন নয়াবাজার ট্রাফিক পুলিশ ও কোতয়ালী থানা পুলিশসহ কিছু নামধারী রাজনৈতিক নেতা ও কথাকথিত সাংবাদিক। বছরের পর বছর এসব দোকান ও গাড়ির স্ট্যান্ড বসিয়ে বহাল তবিয়তে চলছে ব্যবসা। প্রতিটি গাড়ি থেকে দৈনিক একশ থেকে দুইশ টাকা দিতে হচ্ছে। আবার মাসিক ভিত্তিতেও টাকা দেয়া হচ্ছে। তবে টাকা কাকে দিচ্ছে কেউ কেউ ট্রাফিক পুলিশের কথা বললেও রাজনৈতিক নেতাদের নাম অনেকেই ভয়ে বলতে নারাজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের কদমতলি থেকে বাবুবাজার লাইনে চলাচলকারী নাম্বার ছাড়া একাধিক অবৈধ সিএনজি, লেগুনা, কাভার্ডভ্যান, অটোরিকশা ও দূরপাল্লার বাস বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দু-পাশ দখল করে স্ট্যান্ড বসিয়ে উল্টো পথে যত্রতত্র চলাচল করছে। সেতুর দুপাশের দুটি করে মোট চারটি সিঁড়ির পাশেই নিয়মিত বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করায় দীর্ঘ সময় ধরে যানজটের সৃষ্টি হয়।

পথচারীরা বলছেন, দুপাশের চারটি সিঁড়ি জনসাধারণে উঠানামায় উপকারের জন্য দেয়া হলেও রাজনৈতিক নেতা, কথাকথিত সাংবাদিক পরিচয়ে ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে নিয়মিত গাড়ি থামিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীর উঠানামা করেন। সিঁড়িগুলো বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। অনেকেই আবার সেতুর উপর ময়লা ফেলছে। কেই কেউ শরবতের দোকানসহ নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন।

দেখা মিলল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নাম ব্যবহার করা টোল-ফি আদায় রশিদ যার ইজারাদার মিনহাজ এন্টার প্রাইজ। যিনি রশি নিয়ে টাকা উঠাচ্ছেন তার গায়ে সিটি করপোরেশনের লোগো লাগানো জ্যাকেট পরিধান করে প্রতিটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদার টাকা তুলছেন। তবে আরটিভি’র ক্যামেরা দেখে উপায়ন্ত না পেয়ে পালিয়ে যান টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি।

এদিকে কেরানীগঞ্জ প্রান্তে কদমতলীর গোলচত্বরে প্রায় কয়েক হাজার সিএনজি চালিক অটোরিকশা, কাভার্ডভ্যান, ইজিবাইকে, রেন্টেকার ও যাত্রীবাহী বাস স্ট্যান্ড করে নিয়মিত প্রতিটি গাড়ি থেকে ৭০ থেকে ৮০ টাকা করে তুলছেন চাঁদা, রাজনৈতিক নেতা, কথাকথিত সাংবাদিক ও ট্রাফিক পুলিশ। অনেক গাড়িতে নামে-বেনামে বিভিন্ন পত্রিকার ও মুক্তিযোদ্ধা স্টিকার ব্যবহার করে চালিয়ে দিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এ শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

কদমতলি গোলচত্বর এলাকার ওমর ফারুক নামে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক বলেন, গাড়ি প্রতি নিয়মিত ৭০ টাকা ও দোকান প্রতি নিয়মিত দুইশ টাকা না দিলে মারধর করা হয়। রাজনৈতিক নেতা পুলিশ ও সাংবাদিককে এ চাঁদার ভাগ দিতে হয় বলে জানান তারা।

পুরান ঢাকার কলেজিয়েট সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী অর্ণব বলেন, স্কুলে ক্লাস ১২টায়। বাড়ি থেকে ১০টায় বেড় হয়ে তিন ঘণ্টা পার হয়েছে এখন পর্যন্ত সেতুর উপর যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে। এটি প্রতিদিনের ঘটনা। যানজটের কারণে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারি না। সেতুর প্রবেশ মুখে লেগুনা ও সিএনজি স্ট্যান্ড থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ কিছুই বলেন না।

কেরানীগঞ্জের ইসলামাবাদ এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়েছেন। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি বরিশাল অফিস নয়াপল্টন। অফিসে সকাল নয়টায় উপস্থিত হতে হয়। যানজটের কারণে অফিসে যেতে প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এমন অবস্থায় চাকরি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুতে প্রতিদিন যানজট। বাবুবাজার ট্রাফিক পুলিশ ও কোতোয়ালী থানা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। উল্টো সেতুর প্রবেশ মুখে সিএনজি ও লেগুনা থামিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় নেতারা নিয়মিত চাঁদা উঠান। যেন বলার কেউ নেই।

মিটফোর্ড হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা রাবেয়া বেগম বলেন, সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি বললো দুইদিন পর আবার আসতে হবে। যানজটের কারণে পুরো সেতু পায়ে হেঁটে আসতে হয়েছে। আমি ডায়াবেটিস ও হার্ডের রোগী। এখন যানজটের কারণে পায়ে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছি। বেশি টাকা নাই যে অন্যপথে রিকশা ভাড়া করে যাব।

রিকশা চালক লিটন মিয়া বলেন, ৭০ টাকা ভাড়ায় সকাল নয়টায় কেরানীগঞ্জ থেকে গুলিস্তানের যাত্রী নিয়ে বাবুবাজার সেতুতে উঠে যানজটে আটকা পরেছি। এক যানজটে তিন ঘণ্টা শেষে, দুপুর তিনটার দিকে গ্যারেজে গাড়ি জমা দিতে হবে। কিন্তু যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে গাড়ি জমা দেয়া সম্ভব হবে না। গাড়ির জমা ১৫০ টাকা এখন বাজে ১২টা। জমার টাকাও উঠে নাই। সিএনজি ও লেগুনা সেতুর উল্টোপথে চলে মাসিক টাকা দিয়ে অথচ পুলিশ কিছুই বলে না। এদের কারণেই যানজট হয়। তাছাড়া ফুটপাতে অনেক দোকানপাট হইছে ব্রিজের গোঁড়ায়। এই যানজট দীর্ঘ দিনের। একাধিকবার নানা গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে বহাল তবিয়তে মেলেনি কোন সমাধান। ভোগান্তি বেড়েই চলছে।

বাবুবাজার ট্রাফিক পুলিশের টিআই মঞ্জুর আরটিভি নিউজকে বলেন, চারদিকে রাস্তা কেটে রাখার কারণে যানজট বেড়েছে। তাছাড়া মহাসড়কে গাড়ির পরিমাণ বেশি হওয়ায় সিগন্যালে সময় বেশি লাগে। তবে ট্রাফিক পুলিশ চাঁদা নেয় এমন অভিযোগ সত্য নয়। বরং যানজট নিরসনে নিয়মিত কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশ।

কোতোয়ালী ট্রাফিক জোনে’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার বিমান কুমার দাশ আরটিভি নিউজকে বলেন, ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতা ও তাদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে বিভিন্ন সংস্থাকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুতে অবৈধ স্ট্যান্ড ও যাত্রী উঠানামা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সেতুর সিঁড়িতে যাত্রী উঠানার কোনা নিয়ম নেই। অবৈধভাবে যারা যানবাহন পার্কিং করে যাত্রী উঠানামা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ. মান্নান বলেন, পুরান ঢাকার প্রতিটি সড়ক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় রাস্তার উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদারকে রাতে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া আছে। ঠিকাদাররা দিনে কাজ করতে পারবে না। ঠিকাদার নির্দেশনা অমান্য করে দিনে কাজ করলে যানজট বাড়তে পারে। তবে সিটি করপোরেশনের নামে যে রশিদ তৈরি করে চাঁদা উঠাচ্ছে তা আমরাও শুনেছি বিষটি সত্য। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • জাতীয় এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেন যারা
ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে প্রথম প্রিয়ন্তী মণ্ডল
কোকা-কোলায় চাকরির সুযোগ, কর্মস্থল ঢাকা 
ত্রিশালে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত
X
Fresh