• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সেই চালকের নতুন বাইক, হয়রানি ও বেকারত্ব দূরীকরণে কী উদ্যোগ?

আরটিভি নিউজ

  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:০০
পাঠাও চালক শওকত আলী

করোনা মহামারিতে বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দিনমজুর মানুষ বেশ কষ্টে আছেন। অনেকে বেসরকারি চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। আবার ব্যবসায় লোকসান করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ঋণের দেনা ও বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেছেন মানুষ। ঠিক তেমনি করোনায় ছোট্ট দোকানের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম ‘পাঠাও’ চালানো শুরু করেন শওকত আলী। জীবিকা নির্বাহের জন্য মোটরসাইকেল হাতে তুলে নিলেও ট্রাফিক পুলিশ গত সপ্তাহে একটি মামলা দেওয়ার পর গতকাল সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আবারও মামলা দিতে চাইলে ক্ষোভ থেকে শওকত আলী নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশকে এক তৃতীয়াংশ যুব জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর হিসাবমতে, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল তিন কোটি। কয়েক বছরে তা বেড়ে ছয় কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। কর্মসংস্থান না বাড়াতে বেকারের সংখ্যা আরো বাড়ছে।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, করোনা মহামারির কারণে চাকরির বাজার পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পাল্টে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা না হওয়ার কারণে কর্মী ছাঁটাই করছে আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই না করলেও নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনার সময়ে বাংলাদেশে প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বেকারত্ব বাড়ছে। বেকারত্বের হারের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। সরকারি চাকরিতে শূন্যপদের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮। করোনার কারণে এক বছর ধরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত থাকায় এ সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এসব পদে নিয়োগ পেতে অপেক্ষায় আছেন ২০ লাখের বেশি শিক্ষিত বেকার।

বেকারত্বের ঘানি কিছুটা কমাতে সড়কে অনেক যুবক মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় জনতা ইন্স্যুরেন্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল ও শওকত আলীকে বাড্ডা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটির প্রতিবাদে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবার-পাঠাওয়ের চালকেরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেলের চালকরা ছুটে আসছেন প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভে অংশ নিতে। এর ফলে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, ব্যাহত হয় যান চলাচল।

পাঠাও চালক শওকত আলী সড়কের ওপর নিজের মোটরসাইকেলে আগুন লাগানোর ঘটনার পর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানী, আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জনিয়ার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন পাঠাও চালককে মোটরসাইকেল উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই দু্ই ব্যক্তি ছাড়াও অনেকে শওকত আলীকে মোটরসাইকেল উপহার দিতে চেয়েছেন।

সংসার চালানোর পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টি না থাকায় আয়ের জন্য মোটরসাইকেল হাতে নিয়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষগুলো। তবে গতকাল ট্রাফিক পুলিশের ওপর ক্ষোভ থেকে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।

গণমাধ্যমকর্মী মীর মোহাম্মদ জসিম নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন, বাইকারদের হয়রানি বন্ধ করা জরুরি..

ঢাকা শহরেরর নিন্ম মধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষগুলোকে প্রতিমাসে বেতনের কিংবা ব্যবসার মোটা অংশ বাড়ি ভাড়ায় ব্যয় করতে হয়।

ভাড়া শোধ করার পর হাতে থাকা গচ্ছিত টাকা দিয়ে পুরো মাস সংসারের খরচ নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সে কারণে বেশিরভাগ মানুষকেই বিশেষ করে যাদের বয়স ৫০ বছরের নীচে তাদের কমদামি আবাসিক এলাকায় থাকতে হয়। এতে কর্মস্থল থেকে বাসার অবস্থান একটু দূরেই হয়ে যায়।

অফিসে বা নিয়মিত কাজে যাওয়ার জন্য পাবলিক বাসে উঠলে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। জ্যাম এবং অপরিকল্পিত ঢাকার সিস্টেমই দায়ী। এতে ঠিক সময়ে কাজে যোগদান কঠিন হয়ে পড়ে। আবার সিএনজি চালিত অটোরিকশা কিংবা অন্যান্য যান ব্যবহার করলে অনেক টাকা গুনতে হয়।

এ মানুষগুলো সময় বাঁচাতে এবং কিছু টাকার সাশ্রয় করতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকেন।

ইদানিং কিছু শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত বেকার বাইক কিনে পেটের তাগিদে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। সারাদিন বাইক চালালে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় হয় তাদের। এ আয় দিয়ে তারা সংসার চালান।

ঢাকায় মোটা দাগে এ দুই শ্রেণির লোকরাই বেশি বাইক ব্যবহার করেন। আজ এক লোক পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে তার নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এ লোকটা অনেক হয়রানির পর এ কান্ড ঘটিয়েছেন।

মোদ্দাকথা হলো রাস্তায় যেসব পুলিশ সদস্যরা বাইকের কাগজ চেক করেন তারা প্রথমত বেশিরভাগই বাইকারদের সাথে নাগরিকশুলভ আচরণ করেন না। ছোট কারণেও মোটা অংকের একটা কাগজ ধরিয়ে দেন। ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। যেসব কারণে এ জরিমানা করেন এটি খুব যৌক্তিক কিনা ভাবার বিষয়।

জরিমানা না করে যদি সতর্ক করা হয় বা অন্য কোন কৌশল অবলম্বন করা হয় তাহলে এ মানুষগুলো স্বস্তি পায়।

বড় অপরাধের জন্য নিশ্চয়ই মামলা দিবেন। তবে ঠুনকো কারণেই মামলা দেয়ার রেওয়াজ বন্ধ করা জরুরি।

ধরুন, বাইকটি চোরাইপথে আনা হয়েছে কিংবা বাইকারের লাইসেন্স নাই তাহলে মামলা দেন। কিন্তু ইনসুরেন্সের কাগজের মেয়াদ ২ দিন হলো শেষ হয়েছে এমন বিষয়েও মোটা অংকের মামলা দেয়া হচ্ছে। অথচ এমন বাইকারকে সতর্ক করে দিলেই হয়।

প্রশাসনে যারা আছেন তারাও নিশ্চয়ই বিষয়টি ভাববেন। অবশ্য নিন্ম মধ্যবিত্তকে নিয়ে ভাবার সময় কমই হয় কর্তাব্যক্তিদের।

তবে রাস্তায় হয়রানি বন্ধ করা জরুরি। আর কোন বাইকার যাতে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে নিজের বাইকে নিজেই আগুন দিতে না হয় সে সময়ের অপেক্ষায় রইলাম।

আরেক গণমাধ্যমকর্মী মাকসুদ উন নবী তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, কথায়-কথায় বাইকারদের ওপর মামলা ফলানোটা সার্জেন্ট ভাইয়াদের নিম্নমানের হিরোইজম।

ক্ষোভে মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার পর শওকত আলী বলেন, আমার নিজের ইচ্ছায়ই গাড়ি (মোটরসাইকেল) জ্বালাইছি। এতে আমারই ক্ষতি হয়ছে। রাগে গাড়িই জ্বালিয়ে দিছি৷ পুলিশের কোনো দোষ নেই।

তিনি বলেন, আমি কেরানীগঞ্জে ব্যবসা করতাম। দেড় মাস ধরে পাঠাও চালাই। গত সপ্তাহেও আমাকে একটা মামলা দেওয়া হয়েছিল। আজ ট্রাফিক পুলিশ আবারও মামলা দিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • জাতীয় এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৪০০ সিসির পালসার বাজারে আসার আগেই ফাঁস হলো দাম
নড়াইলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইজিবাইক পুকুরে, নিহত ১
‘আমি বাবা-ছেলের বিষয়গুলো সবাইকে দেখাতে পছন্দ করি না’
‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’
X
Fresh