• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

জিয়ার লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক

আরটিভি নিউজ

  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৬
চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর

জাতীয় সংসদ ভবনের পাশেই চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এমপিরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন।

‘বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস বিল, ২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়।

বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, (চন্দ্রিমা উদ্যান জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নেই, তা বড় বিষয় নয়। সেখানে যে লাশ নেই, তা আপনারা (আওয়ামী লীগ) কীভাবে জানলেন? এত বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। এটি নিয়ে আগে কথা বলেননি কেন? এখন কেন বলছেন?

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ইতিহাস বিকৃতি তো বিএনপিও করে। তারা বলে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। আর তিনি (জিয়াউর রহমান) বেঁচে থাকতে নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন, কখনো তা দেখিনি। তাদের প্রথমে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে থাকে, তা বন্ধের আহ্বান বিএনপি জানাতে পারে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের যে নকশা, সেখানে কোথায় রয়েছে যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করতে হবে? সেখানে লাশ আছে কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেগম জিয়া স্বামী মনে করে কাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। তারই উচিত এ প্রশ্ন করা, তার স্বামীর লাশ সেখানে আছে কি না? বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে তা নির্ণয় করা উচিত। আপনারা (বিএনপি) দলের নেতা ভেবে কাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন? ওখানে কি কারো মৃতদেহ আছে?

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, একজন সাংসদ বলেছেন, সঠিক ইতিহাস আসতে নাকি শত বছর লাগে। মৃত্যুর ৪০ বছর পরে সঠিক ইতিহাস বের হলে সমস্যা কোথায়? জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নেই- তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের ব্যবস্থা আছে। আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটি কমিটি করুন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উদঘাটনে ভয়ের কী আছে?

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, আর্কাইভস যদি করতে হয় তাহলে স্বীকার করতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন বীর উত্তম। এটি স্বীকার করতে হবে। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তারা তাদের কথা বলবেন। আর আমরা আমাদের কথা। এটুকু ধৈর্য যদি তাদের না থাকে, তাহলে তারা কী ইতিহাস লিখবে? চর্চা করবে? আর্কাইভসে কী জমা, তা ভালো করেই বুঝতে পারছি।

রুমিন বলেন, ইতিহাস সবসময় জয়ীদের হাতে লেখা হয়। আমাদের মতো দেশে প্রকৃত ইতিহাস জানতে শত বছর লাগে। দলীয় চশমায় ইতিহাস লেখা হলে আইন পাস করে কোনো লাভ হবে না। আজ ৪০ বছর পর কেন জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে এ বিতর্ক। সরকারের ব্যর্থতা, ভোট চুরি, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এ বিতর্ক করা হচ্ছে।

রুমিন ফারহানার বক্তব্যের শেষের দিকে সংসদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সরকার দলীয় সদস্যরা হইচই করেন। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আজ ৪০ বছর পর লাশ নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে। সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের লাশ রয়েছে- বিএনপির এমপিরা তা সংসদে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানে যে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই, তা ৪০ বছর আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার লাশ পরিবারের কেউ দেখেননি। খালেদা জিয়া দেখেননি। তারেক জিয়া লাশ দেখার জন্য কান্নাকাটিও করেছিলেন। শাহ আজিজ একটি চালাকি করেছিলেন- ‘লাশ পাওয়া যাক আর না যাক, একটি বাক্স পাঠিয়ে দাও’। সেই বাক্স পাঠানো হয়েছিল। জনমনে সন্দেহ ছিল, কীসের জানাজা পড়ছি। শুধু বাক্স, নাকি ওখানে জিয়াউর রহমান আছেন?

বিষয়টি নিয়ে সংসদে দেওয়া নিজের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেলিম বলেন, ২০ জুন ১৯৮১ সালে আমি সংসদের নতুন সদস্য। জিয়াউর রহমান তখন মারা গেছেন। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। সংসদে আমি সরকারের কাছে এটি জানতে চেয়েছিলাম। এটা প্রসিডিংসে আছে। আমি সেদিন বলেছিলাম আপনারা প্রমাণ করুন ওই বাক্সে কোনো লাশ আছে কি না। জনমনের সন্দেহের কথা সেদিন সংসদে বলেছিলাম। আমি দুই দিনের মধ্যে লাশের ছবি ছাপিয়ে জনমনের সন্দেহ দূর করতে বলেছিলাম। আর না পারলে জনমনের সন্দেহই প্রমাণিত হবে। আজ ৪০ বছরেও একখানা ছবি দেখাতে পারেননি। প্রমাণই করতে পারেননি। একখানা বাক্স দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। একটা বাক্স এনে বলেছেন জিয়াউর রহমানের লাশ। এ বিভ্রান্তি দূর হয়ে গেছে। ওখানে যে বাক্সটা আছে তা সরিয়ে লুই কানের নকশা বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সেখানে বাক্সটি যদি থাকে, তা সরিয়ে দিন। জিয়ার লাশ জায়েজ করার জন্য তিন বড় রাজাকারকে সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেওয়া হয়েছে। তাদের কবরও সেখান থেকে সরিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। মানুষ এসব বিভ্রান্তি মেনে নেবে না।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • জাতীয় এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া 
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি, নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ল
‘অকৃতজ্ঞরা ভুলে যায় জিয়াকে মেজর জেনারেল বানিয়েছিল আওয়ামী লীগ’
X
Fresh