ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা মিডিয়ায় যেভাবে আসার কথা ছিল আসেনি: তথ্যমন্ত্রী
সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা সংবাদমাধ্যমে যেভাবে আসার কথা ছিল সেভাবে আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ কথা বলেন তিনি। আজ সোমবার (৩ মে) সচিবালয়ে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি, অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গীতিকবি মিজান মালিকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের পোস্টার’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সচিবালয়ের কনফারেন্স হলে। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা মুক্ত গণমাধ্যম দিবসকে কেন্দ্র করে মন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চান।
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় মন্ত্রী বলেন, ‘অর্থ-বিত্ত-বৈভব-শক্তি-ক্ষমতায় যে যতবড় শক্তিশালীই হোক না কেন, সত্য সংবাদ অবশ্যই পরিবেশিত হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের দায়িত্ব শুধুমাত্র নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করা নয়, সমাজের সার্বিক চিত্র পরিস্ফুটন করা।
‘সম্প্রতি কিছু কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে যেভাবে আসার কথা ছিল সেভাবে আসে নাই বিধায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয়নি।’
গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা ও নানামুখী চাপ নিয়ে জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে। তিনি জানান, গণমাধ্যমের ওপর দেশের মানুষের যথেষ্ট আস্থা আছে। সেজন্য টেলিভিশনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পত্রিকার সংখ্যা।
মন্ত্রীর মতে, দেশের গণমাধ্যম স্বাধীন ও মুক্তভাবে কাজ করছে। বিষয়টি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন তিনি।
অনেক উন্নত দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশের গণমাধ্যম মুক্ত এবং স্বাধীন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশে ভুল, অসত্য সংবাদ পরিবেশনের জন্য পত্রপত্রিকার কোনো জরিমানা গুণতে হয় না, যেটি উন্নত দেশে গুণতে হয়।
‘উন্নত দেশগুলোতে কোনো ভুল সংবাদ, অসত্য সংবাদ বা কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, হস্তক্ষেপ হয়েছে এমন সংবাদ পরিবেশিত হলে কেউ যখন আইনের আশ্রয় নেন, তাদেরকে জরিমানা গুণতে হয়। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না, নিয়মিতই সেটি হয়।’
মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে বহুমাত্রিক সমাজের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের সমালোচনা এবং এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার নিয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংগঠনের বিরূপ মন্তব্যের জবাবেও কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘এ দেশের ও বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম নিয়ে যে সমস্ত সংগঠন বিবৃতি দেয় তাদের সঙ্গে একমত হবার কারণ নেই। তারা নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। আমাদের কাছে বা তথ্য কমিশনের কাছেও কোনো তথ্য চায় না। তাদের ঢালাও মন্তব্য ঠিক নয় এবং আমরা এগুলোর সঙ্গে একমত নই।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পৃথিবীতে আগে ডিজিটাল বিষয়টা ছিল না। অর্থাৎ ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও যখন ছিল না, তখন সেখানে নিরাপত্তার জন্য কোনো আইনেরও প্রয়োজন ছিল না। যখন সেটি এসেছে তখন আইনেরও অবশ্যই প্রয়োজন আছে।’
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বিশ্বের নানা দেশে এমন আইন করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দিতে এই আইন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন সাংবাদিক, লেখক, কৃষক, গৃহিণী, সাধারণ মানুষ, রিক্সাওয়ালা, চাকরিজীবী, শ্রমিক, রাজনৈতিককর্মী সবারই ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এই আইন।’
‘অনেক সাংবাদিক এই আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলা করেছেন। সেইসঙ্গে এ আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয়, কোনো সাংবাদিক যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটির সঙ্গে আমি অবশ্যই একমত।’
ওই অনুষ্ঠানে কবি ও সাংবাদিক মিজান মালিকের ‘মন খারাপের পোস্টার’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ যখন প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে, কল্পনা হারিয়ে যাচ্ছে, সেসময় কবিতা এবং কবিতার বই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমি কবিকে ধন্যবাদ জানাই। মিজান মালিক এখনো তরুণ আছেন। তার হাত দিয়ে আরো অনেক কবিতার বই আমাদের সাহিত্য, আমাদের বাংলা ভাষা পাবে, এটিই আমার প্রত্যাশা।
১১০টি কবিতায় সমৃদ্ধ ২৫০ টাকা মূল্যের ‘মন খারাপের পোস্টার’ কাব্যগ্রন্থের বইটি এই সময় পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত।
কেএফ
মন্তব্য করুন