• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জাপানি মায়ের দুই শিশুকে হাইকোর্টে হাজিরের আবেদন

আরটিভি নিউজ

  ২৩ আগস্ট ২০২১, ১৩:০৫
Two children of a Japanese mother pleaded to appear in the High Court
ফাইল ছবি

জাপানি মায়ের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির জিম্মায় থাকা দুই শিশুকে হাইকোর্টে হাজির করতে আবেদন জানিয়েছেন বাবার পক্ষের আইনজীবী। আজ সোমবার (২৩ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এ জন্য অনুমতি নিয়েছেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিআইডির জিম্মায় নেওয়া শিশু দুটিকে হাইকোর্টে হাজির করতে এবং কোনো ধরনের হয়রানি না করার নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেছি। আদালত অনুমতি দিয়েছেন। দুপুর ২টায় এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।’

আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সোমবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সেখানে বলেন, ‘আপনারা রুল ইস্যু করে আগামী ৩১ আগস্ট শিশু দুটিকে আদালতে হাজির করতে বলেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় সিআইডি বাসায় চলে যায়। সেখান থেকে শিশু দুটিকে টেনে হিচড়ে রাত সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে ১টার দিকে সিআইডি অফিসে নিয়ে যায়।

‘সেখানে শিশুদের জেরা করা হয়েছে। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্তান দুটির বাবা সারা রাত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ছিলেন, এখনও আছেন। কিন্তু মা শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে চলে গেছেন।’

আইনজীবী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা জানতাম শিশু দুটিকে আপনাদের কোর্টে নিয়ে আসবে, কিন্তু দেখছি তা হচ্ছে না। শিশুদের তো কোন দোষ নেই। এছাড়া আপনাদের আদেশ যদি আমরা অমান্য করতাম, তাহলে হয়তো এমনটি তারা করতে পারতো। এটা তো খুব দুঃখজনক।’

সিআইডি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়। এভাবে বাচ্চাদের মানসিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এখানে তো তাদের কোনো দোষ নেই। তারা এমন পরিবেশ দেখেও নাই।’

শিশুদের বাবার পক্ষের আইনজীবী এরপর বলেন, ‘আমি একটা সম্পূরক আবেদন নিয়ে আসতে চাচ্ছি, সেটা যদি দুপুর দুটায় শুনেন।’ তখন আদালত আবেদনের অনুমতি দেন। পরে আদালত মায়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনিরের বক্তব্য শোনেন।

শিশির মনির আদালতে বলেন, ‘আপনাদের দুটি আদেশ ছিল। তার মধ্যে একটি হলো- শিশু দুটিকে হাজির করা। আর অন্যটি শিশু দুটিকে নিয়ে কেউ যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে।’

‘আমাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে ফোন দিয়ে বলা হলো- শিশুর মাকে সিআইডি অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ শিশুদের তারা সেখানে রেখেছেন। জোর করে নিয়ে এসেছেন তারা কিন্তু সেটা বলেননি। পরে আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট শিশুদের সঙ্গে তাদের মায়ের কথা বলার সুযোগ দেয়।’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘শিশুদের কেন আনা হয়েছে তা আমি সিআইডির কাছে জানতে চেয়েছি। তখন তারা জানিয়েছে হাইকোর্টের আরেকটি আদেশ আছে দেশ ত্যাগের বিষয়ে। সেই আদেশটা প্রতিপালন করার জন্য তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। হাইকোর্টকে না জানিয়ে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না।’

আদালত আবেদন দাখিলের অনুমতি দিয়ে দুপুর দুইটায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে সিআইডির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে আদালত নির্দেশ দেয়।

গত রোববার রাতে দুই শিশুকে উদ্ধার করে নিজেদের জিম্মায় নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক জিসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

দুই সন্তানের জিম্মা নিয়ে বিরোধ

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে নিজের দুই সন্তানকে ফিরে পেতে জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকোর রিটের শুনানি শেষে দুই সন্তানকে ৩১ আগস্ট হাজির করতে গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

পাশাপাশি জাপানি আইন ভঙ্গ করে সন্তান নিয়ে আসা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। রিটে দুই শিশুকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের নাগরিক এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন এরিকো। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।

এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিবাহবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।

গত ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেয়। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

কেএফ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আইন-বিচার এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বড় মেয়েকে নিয়ে গোপনে বাংলাদেশ ছাড়লেন সেই জাপানি মা
রেস্টুরেন্টে খেতে এসে দুই সন্তানসহ প্রাণ গেলো মায়ের
দুই সন্তানকে নিয়ে বিষপানে মায়ের মৃত্যু
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর ব্যবসায়ীর আত্মহত্যার চেষ্টা
X
Fresh