কি'লিং মিশন: সাবেক এমপি আউয়ালের ১০ দিনের রি'মান্ড আবেদন
রাজধানীর পল্লবীতে ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২১ মে) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন এ রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসীর আদালতে বেলা ৩টায় রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়া কথা রয়েছে।
সাবেক এমপি আউয়ালকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। পরে সংশ্লিষ্ট মামলাটি ডিবিতে তদন্তাধীন থাকায় তাকেসহ আরও দুই আসামিকে হস্তান্তর করে দেয় র্যাব।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৬ মে দুপুরে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীনকে চাপাতি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা ছিল র্যাব তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে গত ১৯ মে চাঁদপুরের হাইমচর থেকে কিলিং মিশনে যুক্ত থাকা হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০ মে রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এম এ আউয়ালকে ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া পটুয়াখালীর বাউফল থেকে ১৯ নম্বর আসামি জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের আরেকটি দল। তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
কমান্ডার মঈন জানান, হত্যার ঘটনার ৪/৫ দিন আগে সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে মোহাম্মদ তাহের ও সুমন এই হত্যার পরিকল্পনা করে। মাঠ পর্যায়ে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুমনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর সুমন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে। এসময় বেশ কয়েকজন কিলিং মিশনে জড়িত ছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কথা উল্লেখ করে র্যাব জানায়, সুমন, বাবুসহ কয়েকজন একটা মিটিং করে। এরপর ঘটনার দিন তারা সাহিনুদ্দীনকে ঘটনাস্থলে ডেকে নেয়। এসময় সাহিনুদ্দীন তার সন্তান মাশরাফিকে নিয়ে সেখানে যায়। মীমাংসার কথা বলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসী সুমন, মানিক, হাসান, ইকবালসহ ১০/১২ জন সাহিনুদ্দীনকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয়। ১৭ মে মামলার ১৩ নম্বর আসামি দিপুকে র্যাব-৪ গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানায় সোপর্দ করে। গ্রেপ্তার মূল আসামি এম এ আউয়াল একজন জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রছায়ায় সুমন জমি দখল, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করত এবং প্রতিমাসে মাসোয়ারা বাবদ ১০-১২ হাজার টাকা নিত। তাছাড়া বিভিন্ন কাজেও টাক নিত। এই সন্ত্রাসী দল রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত ছিল বলে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নিহত সাহিনুদ্দীন ও সুমন গ্রুপের মধ্যে গত দুই মাসে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এসব ঘটনায় পল্লবী থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। এমএ আউয়াল নিজের আবাসন প্রকল্প পাহারার কাজে সন্ত্রাসী লালন-পালন করে থাকেন। স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য কিলার সুমনকে আউয়াল মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিতেন। হত্যাকাণ্ডে তাদের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। তবে এ কাজে কত টাকা ব্যয় হয়েছে নির্দিষ্ট করে তা জানাতে পারেনি র্যাব। র্যাব জানিয়েছে, টিটুর মাধ্যমে সুমনের কাছে হত্যাকাণ্ডের জন্য টাকা গেছে।
উল্লেখ্য, এম এ আউয়াল তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে লক্ষীপুর-১ আসন থেকে তরিকত ফেডারেশন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নিয়ম বহির্ভূত কাজ করায় দলের গঠনতন্ত্রের ২৪ এর উপধারা অনুযায়ী ২০১৮ সালে আউয়ালকে দল থেকে বহিষ্কার করে তরিকত ফেডারেশন। পরের বছরই ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন আউয়াল। বর্তমানে তিনি দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
কেএফ/পি
মন্তব্য করুন