• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঢাকায় ‘সেক্স টয়’ বিক্রি: সেই ৬ জন রিমান্ডে

আরটিভি নিউজ

  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:৩৩
7 remanded for selling 'sex toys' in Dhaka
ফাইল ছবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পেজসহ বিভিন্ন নামে ওয়েবসাইট চালু করে সেক্স টয় বিক্রি করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ৬ জনকে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৬ জনকে আদালতে হাজির করেন। একইসঙ্গে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক প্রত্যেকের ২দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রেজাউল আমিন হৃদয় (২৭), মীর হিসামউদ্দিন বায়েজিদ (৩৮), মো. সিয়াম আহমেদ ওরফে রবিন (২১), মো. ইউনুস আলী (৩০), আরজু ইসলাম জিম (২২) ও চক্রের প্রধান মো. মেহেদী হাসান ভূইয়া ওরফে সানি (২৮)।

চাঞ্চল্যকর ঘটনা রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সূত্র ধরে নতুন একটি বিষয় ‘ফরেন বডি’ নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় গোটা দেশে। যে তথ্যটি সর্বপ্রথম আরটিভি নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। মূলত ‘ফরেন বডি’ হলো মেডিকেল সংক্রান্ত একটি বিষয়। এই ফরেন বডির মধ্যে সেক্স টয়ও একটি পণ্য।

কলাবাগানের ওই ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একপর্যায়ে সম্প্রতি সেক্স টয় বিক্রি চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত সংস্থাটি। এরপরই আজ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সিআইডি হেডকোয়ার্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানায় সংস্থাটির সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম।

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেক্স টয়ের যৌন উদ্দীপক বিজ্ঞাপন দিতো চক্রটি। ওই বিজ্ঞাপন দেখে সেক্স ফ্যান্টাসিতে কেউ প্রলুব্ধ হয়ে গেলে ওই ব্যক্তিকে টার্গেট করতো চক্রটি। এই চক্রের সদস্যরা সাধারণত ত্রিশোর্ধ্ব বয়সীদের টার্গেট করে এসব নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করে আসছিলো। এছাড়া যারা একাকী জীবনযাপন করছেন, তারাও চক্রটির টার্গেটে ছিলো বলে জানিয়েছে সিআইডি।

কলাবাগানে ওই ঘটনার পর থেকে দেশের বাজারে সেক্স টয়ের অবাধ ব্যবসা ও সরবরাহের বিষয়টি “আনুশকার শরীরে মিলেছে রহস্যজনক ‘ফরেন বডির’ আলামত” শিরোনামে সর্বপ্রথম তুলে আনে আরটিভি নিউজ। বিশেষ করে অনলাইনে এই পণ্যের সহজলভ্যতার বিষয়টি “বাজারে বিপজ্জনক যৌনপণ্য ‘ফরেন বডি’ ও অন্যান্য উপাদানে ছড়াছড়ি!” শিরোনামে তুলে ধরে আরটিভির নিউজ। এরপর ‘পর্নোগ্রাফি থেকে ফরেন ফ্যান্টাসি, ধ্বংসের পথে তরুণ-তরুণীরা’ এই শিরোনামেও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আরটিভি নিউজ। পরিস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য গণমাধ্যমও এ সংক্রান্তে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তখন থেকেই সেক্সটয়ের বিষয়ে ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাইবার এক্সপার্ট টিম। সেই তৎপরতার ধারাবাহিকতায় সেক্স টয় বিক্রি ও সরবরাহকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে বন্ধু তানভীর ইফতেখার দিহানের বাসায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার সূত্র ধরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি’র সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডি’র সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো.কামরুল আহসান। তিনি জানান, সিআইডি’র সাইবার মনিটরিং এবং সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম এ ধরনের কয়েকটি ওয়েবসাইট ফেসবুক পেজকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় (ওয়েবসাইটগুলো হল- TVC SKY SHOP BD, Sky Shop BD, TVC SKY SHOP, Asian Sky Shop i)।

মো. কামরুল আহসান বলেন, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের এক ছাত্রীর ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, বিকৃত যৌনাচারের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় সে। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে, তাকে নির্যাতনের সময় এক ধরনের ফরেন বডি ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিআইডি’র সাইবার মনিটরিং এবং সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে জানতে পারে, কয়েকটি সংঘবদ্ধচক্র নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে যৌন উদ্দীপক বিভিন্ন পণ্যের ছবি এবং ভিডিওসহ বিক্রির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সাইবার মনিটরিং এবং সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম এ ধরনের কয়েকটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এসব পণ্য বিক্রির আর্থিক লেনদেন হয় বিকাশ ও রকেটে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা বিদেশ থেকে বৈধ পণ্য আমদানির আড়ালে এসব নিষিদ্ধ পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। পরবর্তীতে ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে।

তিনি জানান, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এসব পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। যেমন লাইকি, টিকটক ব্যবহার করে একটি ক্লোজ গ্রুপ তৈরি করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ডিজেপার্টির আড়ালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলছিল।

আমদানি নিষিদ্ধ এসব পণ্য দেশে আসার ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দায়ভার এড়াতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অনুসন্ধান মাত্র শুরু করেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে।

ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন ছাড়া ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং তার শরীরে ফরেন বডির উপস্থিতি ছিল কিভাবে তারা বুঝেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআইডি’র ডিএনএ টেস্ট এখনো চলছে এবং ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনো আসেনি। তবে ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন, ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করার সময় ফরেন বডির উপস্থিতি ছিল। আর তাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে সে মারা যায়।

দারাজ এসব সেক্স টয় খোলামেলাভাবে বিক্রি করছে কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত মাত্র শুরু করেছি। ওয়েবসাইটে যারা এসব বিক্রি করছে তাদের ফুটপ্রিন্ট আছে। এ বিষয়গুলো আমরা ধরে ধরে কাজ করবো।

এ সময় তাদের কাছ থেকে সেক্স টয়, ৫টি মোবাইল ফোন, ১টি ল্যাপটপ ও ৯টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কেএফ

মন্তব্য করুন

daraz
  • আইন-বিচার এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বন্ধুর স্ত্রীকে শাড়ি উপহার দিয়ে সমালোচনার মুখে ব্যারিস্টার সুমন
শুক্রবার ঢাকায় আসছেন আতিফ আসলাম
বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি, ৫২ জন দুদিনের রিমান্ডে
শিল্পপতির সংসার ছাড়তে গরিবের মেয়ের সংবাদ সম্মেলন
X
Fresh