• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

বহুনামে বহুরূপী রিজেন্টের সাহেদ

আরটিভি নিউজ

  ০৯ জুলাই ২০২০, ১১:০৬
MD Sahed,
মো: সাহেদ

কখনও তার নাম মো: সাহেদ। কখনও সাহেদ করিম। কখনওবা সাহেদ করিম চৌধুরী। কখনও তিনি সচিব, কখনও মেজর, কখনওবা তিনি কর্নেল। নাম-পরিচয় যাই হোক, প্রতারণাই তার পেশা। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি দুটি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। এতদিন মানুষ তাকে সমাজের প্রভাবশালী আর সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে জানলেও রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পর বেরিয়ে আসছে সাহেদের নানা কুকীর্তির কাহিনী।

গেলো সোমবার থেকে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। বিনামূল্যে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও র‌্যাবের অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমোদনই ছয় বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। এরপর প্রতারণা করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য চুক্তি করেন হাসপাতালের মালিক সাহেদ।

তিনি বলেন, ভাড়া করা ভবনে স্থাপিত রিজেন্টের অবকাঠামো যেমন হাসপাতালের মতো নয়, তেমনি সেখানকার আইসিইউও ছিল নামকাওয়াস্তে। আইসিইউর নূ্যনতম সরঞ্জাম বা সুবিধাও ছিল না সেখানে। নোংরা কক্ষে পাওয়া গেছে কাঁথা-বালিশ। এমনকি হাসপাতালের ল্যাবের ফ্রিজে কাঁচা মাছ সংরক্ষিত ছিল।

---------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: করোনা: কে এই সাহেদ?
---------------------------------------------------------------

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের ওয়েবসাইটে তিনি নাম লিখেছেন মো. সাহেদ। হাসপাতালের নথিতেও তাই। 'নতুন কাগজ' নামে একটি দৈনিক পত্রিকারও 'সম্পাদক' এবং প্রকাশকও স্কুল পাস মো. সাহেদ। কিন্তু পত্রিকাটির নামে সরকারি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে তিনি নাম ব্যবহার করেছেন মোহাম্মদ সাহেদ। তথ্য অধিদপ্তরের অস্থায়ী এই কার্ড নম্বর-৬৮৪৫। তবে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে ওয়েবসাইটে দেওয়া তার স্বাক্ষরের সঙ্গে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের স্বাক্ষরে নূ্যনতম মিল নেই! আবার জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. শাহেদ করিম, বাবার নাম সিরাজুল করিম, মা সুফিয়া করিম। তার বাড়ি সাতক্ষীরায়। ঢাকায় লালবাগে থাকেন। সূত্র বলছে, তিনি দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন।

এ তো গেল তার কাগজপত্রের নাম। প্রতারণা করতে গিয়ে সাহেদ নিজেকে কখনও মেজর ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কর্নেল ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, আবার কখনও কখনও মেজর সাহেদ করিম চৌধুরী হিসেবে পরিচয় দিতেন। র‌্যাব সদস্যরা রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর সোমবার থেকে পলাতক তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছে র‌্যাব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে সব জায়গায় পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয় দিয়ে মো. সাহেদ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতেও অংশ নিতেন। দিতেন নানা পরামর্শ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. সাহেদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও তার আসল নাম মো. সাহেদ করিম। তার পিতার নাম সিরাজুল করিম। এসএসসি পাস করলেও তারপর আর পড়াশোনা করেননি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার ঠিকানা হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ, ঢাকা-১২১১। গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি দুই বছর জেলে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে শুরু করেন এমএলএম কোম্পানি। অভিযোগ আছে, বিডিএস ক্লিক ওয়ান নামের ওই কোম্পানির শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ২টি মামলা, বরিশালে ১ মামলা, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিস এ চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারণে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে।

এছাড়াও প্রতারণার টাকায় তিনি উত্তরা পশ্চিম থানার পাশে গড়ে তুলেছেন রিজেন্ট কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি, আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি। এর একটিরও কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ আছে। আর অনুমোদনহীন আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটির ১২টি শাখা করে হাজার হাজার সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে সাহেদের বিরুদ্ধে। প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিতে নিজের কার্যালয়ে একটি টর্চার সেল গড়ে তুলেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪২৬৪টি স্যাম্পল রিজেন্ট টেস্ট করেছে এবং এর বাইরে ৬ হাজারের বেশি স্যাম্পল টেস্ট না করেই তারা ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রিজেন্ট হাসপাতালের আইসিইউ যেটা আছে সেটা ভালোভাবে চলছিলো না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডায়াগনোসিস ল্যাব আছে, সেখানে কোনো মেশিন নেই, সেখানে কোনো টেস্ট না করেই রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অভিযান চলাকালে ফ্রিজের মধ্যে এক অংশে মেডিসিন অন্য অংশে মাছ মিলেছে। হাসপাতালটির ডিসপেনসারি সেখানে সব সার্জিক্যাল আইটেম ৫/৬ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করতো রিজেন্ট হাসপাতাল। এছাড়া সরকার থেকে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্ট প্রতি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে আদায় করতেন তারা। এভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান সাহেব (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ) নিজে করতেন অফিসে বসে।’

ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম আরও বলেন, ‘রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই এই অপকর্মগুলো হতো বিধায় এটি সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের স্থানান্তর করে হাসপাতাল দুটিও সিলগালা করা হয়েছে।’ এর আগে সোমবার রাতেই মো. সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতাল থেকে অননুমোদিত র‌্যাপিড টেস্টিং কিট ও একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh