• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কে এই সাহেদ?

আরটিভি নিউজ

  ০৮ জুলাই ২০২০, ১৫:১৬
Md. Sahed
মো. সাহেদ

ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট তৈরিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়ার পর বের হয়ে আসছে একের পর এক সব রোমহর্ষক দুর্নীতি। গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টিকার। সঙ্গে গানম্যান। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি বিলবোর্ডে সাঁটিয়ে দেয়া সাহেদ ২০১৩ সালে হাসপাতালের লাইসেন্স নেয়ার পর আর নবায়ন করেননি। কিন্তু পেয়েছেন কোভিড নাইনটিন ডেডিকেটেড হাসপাতালের অনুমতি। বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ এলেও তোয়াক্কা করেনি প্রশাসন। সবশেষ অভিযানের সময় অভিযান বন্ধ করতে ফোন দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও।


কিন্তু লাভ হয়নি। অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় হাসপাতালটি বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনার ভুয়া সনদ, বাড়তি অর্থ আদায় করে আলোচনায় আসা এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে নিয়ে কৌতূহল চারপাশে। তিনি কীভাবে এমন একটি হাসপাতাল গড়ে তুললেন, করোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব বাগিয়ে নিলেন- এমন নানা প্রশ্ন মুখে মুখে। অভিযানের পর তিনি লাপাত্তা। পাওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে সব জায়গায় পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয় দিয়ে মো. সাহেদ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতেও অংশ নিতেন। দিতেন নানা পরামর্শ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. সাহেদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও তার আসল নাম মো. সাহেদ করিম। তার পিতার নাম সিরাজুল করিম। এসএসসি পাস করলেও তারপর আর পড়াশোনা করেননি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার ঠিকানা হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ, ঢাকা-১২১১। গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলায়।

তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি দুই বছর জেলে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে শুরু করেন এমএলএম কোম্পানি। অভিযোগ আছে, বিডিএস ক্লিক ওয়ান নামের ওই কোম্পানির শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ২টি মামলা, বরিশালে ১ মামলা, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিস এ চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারণে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে।

এছাড়াও প্রতারণার টাকায় তিনি উত্তরা পশ্চিম থানার পাশে গড়ে তুলেছেন রিজেন্ট কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি, আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি। এর একটিরও কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ আছে। আর অনুমোদনহীন আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটির ১২টি শাখা করে হাজার হাজার সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে সাহেদের বিরুদ্ধে। প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিতে নিজের কার্যালয়ে একটি টর্চার সেল গড়ে তুলেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪২৬৪টি স্যাম্পল রিজেন্ট টেস্ট করেছে এবং এর বাইরে ৬ হাজারের বেশি স্যাম্পল টেস্ট না করেই তারা ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রিজেন্ট হাসপাতালের আইসিইউ যেটা আছে সেটা ভালোভাবে চলছিলো না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডায়াগনোসিস ল্যাব আছে, সেখানে কোনো মেশিন নেই, সেখানে কোনো টেস্ট না করেই রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অভিযান চলাকালে ফ্রিজের মধ্যে এক অংশে মেডিসিন অন্য অংশে মাছ মিলেছে। হাসপাতালটির ডিসপেনসারি সেখানে সব সার্জিক্যাল আইটেম ৫/৬ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করতো রিজেন্ট হাসপাতাল। এছাড়া সরকার থেকে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্ট প্রতি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে আদায় করতেন তারা। এভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান সাহেব (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ) নিজে করতেন অফিসে বসে।’

ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম আরও বলেন, ‘রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই এই অপকর্মগুলো হতো বিধায় এটি সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের স্থানান্তর করে হাসপাতাল দুটিও সিলগালা করা হয়েছে।’ এর আগে সোমবার রাতেই মো. সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতাল থেকে অননুমোদিত র‌্যাপিড টেস্টিং কিট ও একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ নির্দেশনা
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, চলতি বছরে ২৪
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ নির্দেশনা
আড়াই মাসে ডেঙ্গুতে ২০ মৃত্যু, পরিস্থিতি আরও খারাপের শঙ্কা
X
Fresh