• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রাজধানীর গ্যাং কালচার, ২০০১ থেকে ১৭

হোসাইন তারেক

  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৫

দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে রাজধানীর কিশোর অপরাধীরা। নিজেদের জাহির করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে ভয়ানক গ্যাং ওয়ারে। এতদিন তাদের এসব অপকর্ম নিয়ে কারো মাথাব্যাথা ছিলো না। তবে সম্প্রতি উত্তরার এক স্কুল ছাত্র খুনের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই।

বিংশ শতাব্দির শুরুতেই রাজধানীতে গ্যাং কালচারের শুরু। তবে সে সময় এত বেশি আলোচিত না থাকলেও বর্তমানে অভিভাবক মহল থেকে শুরু করে সবার মাথা ব্যাথার কারণ এরা। বিশেষ করে বিদেশি সিনেমার গ্যাং ওয়ারের প্রতি আসক্ত হয়ে এ পথে আসছে কিশোররা। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে অনুকরন করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিনেমার।

২০০১ সালে উত্তরার কাকরা গ্রুপের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাং কালচারের শুরু হয়। তখন থেকে ধীরে ধীরে এসব গ্যাং জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে। শুধু কাকরা নয় একের পর এক গড়ে ওঠে এমন প্রায় ৫০টি গ্রুপ। তবে সে সময় এত বেশি আলোচনায় ছিলো না তাদের কর্মকাণ্ড।

গ্যাংগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- জি ইউনিট, ব্ল্যাক রোজ, রনো গ্রুপ, কে নাইট, ফিফটিন গ্রুপ, ডিসকো বয়েজ, নাইন স্টার, নাইন এম এম, পোটলা বাবু গ্রুপ, সুজন গ্রুপ, আলতাফ গ্রুপ, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার গ্রুপ।

এসব গ্যাংয়ের সদস্যদের মূল কাজ হচ্ছে এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। আর সেটি করতে গিয়েই জড়িয়ে পড়ছেন ভয়ানক সব অপরাধে। এমনকি খুন করতেও পিছপা হচ্ছেন না। এছাড়াও স্কুল-কলেজে র‌্যাগিং করা, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন ও ব্যবসা, ছিনতাই, উচ্চ শব্দে গাড়ী ও মটরসাইকেল চালানো, জনমনে আতংক সৃষ্টি করাই মূলত এদের কাজ।

অপরাধে জড়িয়ে পড়া এসব গ্যাংয়ের সদস্যদের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। রাজধানী ভিত্তিক গ্যাং গড়ে ওঠার কারণ মূলত পরিবারের আর্থিক অভাব, প্রাচুর্য, শিক্ষার অভাব, শাসনহীনতা, অভিভাবকের উদাসীনতা, মূল্যবোধের সংকট, পরিবারের ভেতরে অপরাধী বা অপরাধের উপস্থিতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবরাই শিশু-কিশোরদের অপরাধ জগতে টেনে নিলেও, দরিদ্র শিশুদের খাবার ও আশ্রয়ের কথা বলে অপরাধীরা এই জগতে টেনে আনে।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি বিবাদমান দু’টি গ্যাংয়ের সংঘাতে প্রাণ যায় আদনান নামের এক স্কুল ছাত্রের। এরপরই আবার আলোচনায় আসে গ্যাং ওয়ারের বিষয়টি। ২০০১ সালে থেকে গ্যাং কালচার শুরু হলেও এতদিন আলোচনায় ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এসব গ্যাং।

কাকরা গ্রুপের পর আরো অনেক গ্রুপ তৈরি হলেও তাদের কেউই আলোচনায় আসেনি। তবে ২০০৯ সালে তৈরি হওয়া ডিসকো বয়েজ গ্রুপের পর থেকে আলোচনায় আসে গ্যাং গ্রুপের কর্মকাণ্ড। প্রথমে এই গ্রুপটির সঙ্গে ছিলো সবাই। তবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দের জের ধরে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয় তারা। একে একে তৈরি হয় নাইন স্টার গ্রুপ, নাইন এমএম গ্রুপসহ আরো কয়েকটি গ্যাং।

৬ জানুয়ারি এসব গ্যাংয়ের বিবাদের জেরে খুন হয় আদনান কবির (১৩)। এ ঘটনায় তার বাবা কবির হোসেন বাদি হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। যাদের মধ্যে ২ জনকে ঘটনার পরের দিন আটক করে পুলিশ। বাকি আট জনকে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে আটক করে র‌্যাব। তারা আদনান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

আদনান হত্যার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোনো অপরাধকে ছাড় দেয়া হবেনা। সে যত প্রভাবশালীই হোক শাস্তি পেতে হবে।

অন্যদিকে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অতীতেও রাজধানীতে কিশোর গ্যাং ছিলো। তবে তাদের কর্মকাণ্ড এত ভয়ানক ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে তাদের অপরাধের ধরন সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।

তিনি বলেন, ডিসকো বয়েজ, নাইন স্টার, নাইন এম এম ছাড়াও আরো কয়েকটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছি। এদের মধ্যেও সংঘাত হতে পারে। তবে কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না। যারাই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এইচটি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh