রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় ২ নারী নিহত
রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় বাসের ধাক্কায় দুই নারী মারা গেছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় যাত্রাবাড়ির শনিরআখড়ায় এদুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন হাসি বেগম (৩৫) ও জেসমিন আক্তার (২১)।
যাত্রাবাড়ি থানার ওসি আনিসুর রহমান এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, একটি বাস রিকশাকে ধাক্কা দিলে আরোহী দু’নারী গুরুতর আহত হন।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এমকে/
মন্তব্য করুন
জেলখানার গল্পে বেরিয়ে এলো খুনের রহস্য
দুই বছর আগে নিখোঁজ হয় ছেলে। মা-বাবা ধরেই নিয়েছিলেন তাদের সন্তান হারিয়ে গেছে। অনেকটা ভুলেই গিয়েছিলেন সন্তান হারানোর বেদনা। তবে দুই বছর পর জানতে পারলেন তাদের সন্তানকে খুন করা হয়েছে। পুতে রাখা হয়েছে একটি মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাঙ্কের পাশে। আর জেলখানার গল্প থেকে ওই খুনের রহস্য জানতে পেরেছে তারা।
শুক্রবার (১ মার্চ) নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মাফিজুল ইসলামের খুনের কথা জানতে পারে তার পরিবার। শনিবার (২ মার্চ) সকাল থেকে ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন পৌরসভার খলিফাপাড়া মাফিজুল ইসলাম। প্রায় দুই বছর পর পরিবারটি জানতে পারে, তাকে খুন করা হয়েছে। পুঁতে রাখা লাশ রয়েছে চাঁচকৈড় পুরানপাড়ার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাঙ্কের পাশে।
আসামিদের বরাত দিয়ে র্যাব জানিয়েছে, বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে চাকরির সময় নিহত মাফিজুল ইসলামের সঙ্গে মাদ্রাসার নৈশপ্রহরীর মেয়ের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে আবু তাহের খলিফার কাছে অভিযোগ করে জামাতা আল হাবিব সরকার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবু তাহের কৌশলে মাফিজুলকে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল তার বাসায় ডেকে নেয়। রাতে তাকে নিজের কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মাফিজুলকে হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ দিয়ে হত্যা করে তারা।
হত্যাকাণ্ডের পর লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখে। ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় মাফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় একই বছরের ৭মে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের পর দম্পতির পারিবারিক কলহ বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করে মেয়েটি। এ মামলায় জেলহাজতে রয়েছে আল হাবিব।
এরপর হাবিব কারাগারে থাকা অবস্থায় গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়ার জাকির মুন্সির (৪০) সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তাকে জানায় সে। জাকির জামিনে মুক্তি পেয়ে মাফিজুলের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে পুলিশকে জানান পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত মেয়ে ও তার বাবা আবু তাহেরকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করে তারা।
এ ঘটনায় র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে। র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের সদস্যরা আসামি আশরাফুলকে শনিবার সিরাগঞ্জের গোলচত্বর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
গুরুদাসপুর থানার ওসি উজ্জ্বল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা (৫৫), তার মেয়ে (২৮), মেয়ের স্বামী আল হাবিব সরকার (৩৫) ও স্বজন আশরাফুল ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে নিহত মাফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার চারজনসহ আরও তিন থেকে চারজনকে সন্দেহভাজন আসামি করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন নিহত মাফিজুলের মা মাইনুর বেগম।
শনিবার (২ মার্চ) আদালতের অনুমতি না মেলায় মরদেহ উত্তোলন করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাজাহারুল ইসলাম বলেন, রোববার মরদেহ উত্তোলন করা হবে।
ফ্রিল্যান্সারের সাড়ে তিন কোটি টাকা গায়েব, ৭ ডিবি সদস্য ক্লোজড
গভীর রাতে কার্যালয়ে তুলে নিয়ে চট্টগ্রামে এক ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিবির এক টিমের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ঘটনা সামনে আসার পর অভিযুক্ত ডিবি সদস্যদের ক্লোজড করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
জানা গেছে, অনলাইন জুয়ার অভিযোগ তুলে আবু বকর সিদ্দিক নামে ওই ফ্রিল্যান্সারকে গত সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার দিকে ডিবি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যায় টিমটি। পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তুলে নেয় দশ লাখ টাকা। এর বাইরেও কৌশলে তার বাইন্যান্স একাউন্ট থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার সমমানের ক্রিপ্টোকারেন্সি সরিয়ে নেন ওই ডিবি কর্মকর্তারা। সেইসঙ্গে তার মুঠোফোন ও পকেটে থাকা টাকা-পয়সাও কেড়ে নেন তারা।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ওইদিন রাতে অক্সিজেন এলাকা থেকে তুলে মনসুরাবাদ ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় তাকে। এরপর গভীর রাতে সেখানে কয়েকবার জোর করে তার মুঠোফোনে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়। পরে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আদায় করা হয় দশ লাখ টাকা। ওই টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া হয় ভিন্ন দুইটি অ্যাকাউন্টে। এছাড়া তার বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট থেকেও সরিয়ে নেওয়া হয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
আবু বকর সিদ্দিকের দাবি, দীর্ঘ ১৪ বছর ফ্রিলান্সিং করে অর্জিত তার সব অর্থ সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ রুহুল আমিন। এমনকি তাকে ও তার পরিবারকে মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতিও দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে আতঙ্কের মধ্যে আছেন জানিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন এ ফ্রিল্যান্সার।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ তার দলের সাত সদস্যকে ক্লোজড করেছে সিএমপি। ডিবি হেফাজতে থাকাকালীন কীভাবে মুঠোফোন থেকে অর্থ ট্রান্সফার হয়, সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এজন্য গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি কমিটি। পাশাপাশি কাউছার আহমেদ নামে এক যুবককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূলত এই কাউছারের একাউন্টেই পাঠানো হয় এই কারেন্সি এবং সে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবি সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার মোছা. সাদিরা খাতুন বলেন, যেহেতু অভিযোগ এসেছে আমরা তদন্ত কমিটি করেছি এবং টিমে যারা ছিল তাদেরকে ক্লোজ করে রেখেছি। তদন্ত কমিটি দেখবে, ডিবির হাতে মোবাইল আসার পর টাকাগুলো গেল, নাকি আগে বা কোন পর্যায়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, টাকাটা যার মোবাইলে গিয়েছে সেও ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা করে, এখন আমাদের দেখার বিষয় এর সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু, যদি আমাদের টিমের সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
কিশোর গ্যাংয়ের প্রশ্রয়দাতা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : ডিবিপ্রধান
সম্প্রতি পুলিশের একটি প্রতিবেদনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ২১ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্যদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ তদন্তে কিশোর গ্যাং পরিচালনায় যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
ডিবি প্রধান বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে জড়িত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওয়ারী ও গুলশান বিভাগ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে বেশিরভাগ কিশোর গ্যাং সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তাররা বাড্ডা, ভাটারা, তুরাগ, তিনশো ফিট ও যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টার্গেট করা ব্যক্তিদের উত্ত্যক্ত করতো। এরপর সংঘবদ্ধভাবে ঘেরাও করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন এবং নারীদের কাছ থেকে স্বর্ণের অলঙ্কার ছিনিয়ে নিতো। ছিনতাই ছাড়াও চাঁদাবাজি, চুরি এবং মাদক কারবারের সঙ্গেও জড়িত এই কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাং সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে কিছু ‘বড় ভাইয়ের’ নাম পাওয়া গেছে জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, তারা কিছু বড় ভাইয়ের নাম আমাদের জানিয়েছে। এই বড় ভাইদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
ঢাকায় কিশোর গ্যাং পরিচালনাকারী এই বড় ভাইদের মধ্যে কিছু কাউন্সিলরের নাম এসেছে। ডিবি তাদের বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতাররা সাবেক ও বর্তমান কিছু কাউন্সিলরের নাম জানিয়েছে। এটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যদি কোনও কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেভাবে সোমালীয় জলদস্যুদের উত্থান, যেমন আয় তাদের
সোমলীয় জলদস্যুরা ফের ব্যাপক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর কিছুটা নীরব ছিল বিশ্বের কুখ্যাত এই দস্যুবাহিনীটি। লোহিত সাগরে হুথিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো বেশি ব্যস্ত থাকার সুযোগে ভারত মহাসাগরের গালফ অফ এডেনে তারা ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এই দস্যুরা ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজ ২৩ জন নাবিকসহ জিম্মি করেছে। জাহাজটি ইতোমধ্যে তারা সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে কর্মরতরা অডিওবার্তায় জানিয়েছে। ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণও চেয়ে বসেছে ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠিটি। ব্যর্থতায় নাবিকদের একে একে সাবাইকে মেরে ফেরার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
যেভাবে উত্থান এই জলদস্যুদের :
ইতালিয়ান ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে ১৯৬০ সালে সোমালিয়ার জন্ম। পরের দুই দশকের বেশি সময় যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত সোমলিয়াতে কার্যকর কোন সরকার ছিল না। এই সময়টায় আফ্রিকার মধ্যে দীর্ঘতম উপকূল সমৃদ্ধ দেশটির জলসীমার নিরাপত্তায় কোনো কোস্টগার্ড বা বাহিনী ছিল না। এতে এই অঞ্চলে বিদেশি মাছ ধরা নৌযানের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। স্থানীয় জেলেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। ফলে, তারা দস্যুবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে। ইন্ডিয়ান ওশান কমিশনের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতেও ওই সময়ের দস্যুতার নেপথ্যে এই কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে।
তাছাড়া, মৎস্য শিকারের চেয়ে দস্যুতায় আয়ের পরিমাণও অনেকগুণ বেশি। তবে, কয়েক বছর তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ওই রুটে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়ায়। এর ফলে ২০১২ সাল নাগাদ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে আসে দস্যুবৃত্তি।
ইউরোপিয়ান নৌবাহিনীর অপারেশন কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ডানকান পটস তখন বিবিসিকে বলেছিলেন, সামুদ্রিক দস্যুতার ‘বিজনেস মডেল’ কার্যকরভাবে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
সাম্প্রতিক হামলা :
কিন্তু গত কয়েক মাসে সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা বেড়েছে। পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বা ইইউন্যাভ ফর আটালান্টা। তাদের মতে, গত বছরের নভেম্বরে থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সোমালি উপকূলে অন্তত ১৪ টি জাহাজ হাইজ্যাক করা হয়েছে।
এর মধ্যে ইরানের পতাকাবাহী একটি মাছ ধরার নৌকা এবং লাইবেরিয়ান-পতাকাবাহী সেন্ট্রাল পার্ক নামের একটি জাহাজের জেলে ও নাবিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সেন্ট্রাল পার্কের উদ্ধার তৎপরতায় মার্কিন নৌবাহিনী জড়িত ছিল। পরে তারা জানায়, এটা স্পষ্টতই দস্যুতা এবং আক্রমণকারীরা সম্ভবত সোমালিই ছিল।
ডিসেম্বরে এমভি রুয়েন নামে মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ হাইজ্যাক করা হয়। এখনও জাহাজের নিয়ন্ত্রণ হামলাকারীদের হাতে। জিম্মি আছেন ১৭ জন ক্রু।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো- আইএমবি’র মতে, এটি ছিল ছয় বছরের মধ্যে সোমালিয়ায় প্রথম সফল হাইজ্যাকিং। আইএমবি একটি প্রভাবশালী অলাভজনক সংস্থা যা সামুদ্রিক অপরাধ মোকাবেলা করার লক্ষ্যে কাজ করে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্যাপক অভিযান
জানুয়ারিতে এক সপ্তাহে তিনটি অভিযানে ১৯ জন জিম্মিকে মুক্ত করতে সমর্থ হয় তারা। তাদের মধ্যে ১১ জন ইরানি নাগরিক বাকিরা পাকিস্তানি। ভারতীয় বাহিনীর তরফে জানানো হয়, ‘এদের সবাই সোমালি দস্যুদের হাতে বন্দী ছিলেন।’
বিবিসি’র রিয়েলিটি চেক টিমের প্রতিবেদন বলছে, শুধু ২০১৮ সালেই পূর্ব আফ্রিকান জলসীমায় ১১২ টি নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যার সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ২৩ জন ক্রু সহ জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় জলদস্যুরা।
দস্যুদের উদ্দেশ্য কী? আয় কেমন?
২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সময়কালে হর্ন অফ আফ্রিকার দস্যুরা কী পরিমাণ অর্থ আদায় করেছে তার একটি আনুমানিক হিসাব করেছে বিশ্বব্যাংক। সেই হিসাব অনুযায়ী জলদস্যুরা ক্রুদের জিম্মি করে সাড়ে তিনশো থেকে সোয়া চারশো মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আদায় করেছে।
এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে নাইজেরিয়ার ফেডারেল ইউনিভার্সিটির লেকচারার স্যামুয়েল ওয়েওল বলেন, ছিনতাইয়ের পেছনে মূল লক্ষ্য মুক্তিপণ আদায় বলেই ধারণা করা যায়। অন্তত সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর নেপথ্য এটিই মূল কারণ। ২০১১ সালে একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করে দস্যুরা। দুশো মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের জ্বালানি ছিল নৌযানটিতে। আটক দুই ফিলিপিনো ক্রুকে হত্যা করা হয়।
সূত্র : বিবিসি
রিমোর্ট কন্ট্রোলে ওজন কমিয়ে অভিনব চুরি
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের অসাধু কিছু ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের বেশি ওজনের মালামাল কম ওজন দেখিয়ে ডিজিটাল চুরি করছেন। পণ্যের ওজন দূরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো কমাতে পারেন তারা।
ওজন কম দেখানোর সাংকেতিক শব্দ হলো ‘গাপসি’। আর এসব ডিজিটাল মেশিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে একটি চক্র। অন্তত ২৫টি এমন ডিজিটাল মেশিনে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ‘ডিজিটাল চুরি’ করছে।
ডিজিটাল ওজন মেশিন বিক্রি চক্রের চার সদস্যকে শনিবার রাজধানী থেকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজিব (৩৩), মো. মনির (৩৫), মো. লিটন (৩৮) ও মো. আলাউদ্দিন খান (২৮)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ডিজিটাল ওজন মেশিন, সাতটি রিমোট কন্ট্রোল ও তাতালসহ ওজন মেশিনে কারসাজি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. রাজীব আল মাসুদ বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ ঠকানোর উৎকৃষ্ট উদাহরণ ডিজিটাল মেশিন কারসাজি। গ্রাম থেকে আসা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চক্রটি। এছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণও এটি।
তিনি আরও বলেন, চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ২০ থেকে ২৫টি মেশিন ছড়িয়ে দিয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিবি সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজিব পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক। অনলাইনে বিশেষ কিছু সার্কিট সংগ্রহ করে। পরে ডিজিটাল ওজন মেশিনে রিমোর্ট কন্ট্রোলের সাহায্যে ওজন কম-বেশি করার কৌশল রপ্ত করে সে। ফলে ২০০ কেজি পণ্যের ওজন দূরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো কমাতে পারতো। এগুলো বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে।
সম্প্রতি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগ।
রোববার (১৭ মার্চ) রাজধানীর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূরে বসে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা একটি অভিনব ও নতুন ধরনের প্রতারণা। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
তিনি বলেন, সজিব প্রতিটি মেশিন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। এই চক্রের কাছে ওজন কম দেওয়ার সাংকেতিক শব্দ হলো ‘গাপসি’। এর অর্থ হলো ওজনে কম দিতে হবে। এসব মেশিন কাপ্তান বাজারে মুরগি বা মাংসের অসাধু পাইকারি বিক্রেতারা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। তবে তাদের টার্গেট থাকে নতুন পণ্য বিক্রেতা ও পাইকারি ক্রেতারা।
৮ টাকার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ৬০০ টাকার পেথিড্রিন
আট টাকার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে সন্তান জন্মের সময় ব্যথা উপশমের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ‘জি-প্যাথিডিন’ ইনজেকশন তৈরি করে ৭-৮ বছর ধরে নকল করে বাজারজাত করে আসছিল রাজধানীর একটি চক্র।
সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর মতিঝিল, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) এসব তথ্য জানান ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আলমগীর খান (৪০), মাসুদ রানা (২৯) ও আহসান হাবীব শাওন (৩০)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ২০০ পিস জি-প্যাথিডিন ইনজেকশন, জি-প্যাথিডিনের অ্যাম্পুল ২২০পিস, এক হাজার ১০ পিস জি-ডায়াজিপামের অ্যাম্পুল, ৫২০ পিস জি-প্যাথিডিনের খালি বাক্স, ২০০ পাতা জি-প্যাথিডিন ইনটেক স্টিকার, ৫ কেজি এসিডসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, চক্রটি রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে ‘জি-ডায়াজিপাম’ ঘুমের ইনজেকশন প্রতিটি ৮ টাকায় কিনে বাসায় নিয়ে যায়। পরে ইনজেকশন অ্যাম্পুলকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জি-প্যাথিডিন ইনজেকশনের নামে নামকরণ করতো তারা। আর বাজারে এসব নকল ‘জি-প্যাথিডিন’ প্রতিটি ৬০০ টাকায় বাজারজাত করতো চক্রটি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘রাজধানীর অনেক খ্যাতনামা হাসপাতালের নিচের বিভিন্ন ফার্মেসিতে এসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়। আমরা বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের নিচের ফার্মাসিস্টের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছি, তাকে আটক করা হয়েছে। একইসঙ্গে তদন্ত করে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনিবলেন, ‘এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে একদিকে মুনাফা করে আসছিল, অন্যদিকে রোগীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে চক্রটি। মিটফোর্ডে কারা কারা এসব ঘুমের ইনজেকশন বিক্রি করত এবং কোন কোন স্থানে এসব প্যাথিডিন বিক্রি করা হচ্ছে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এই প্যাথিডিন ইনজেকশন প্রয়োগে কেউ মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছে কি-না এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান হারুন অর রশীদ।
ভুয়া ডিগ্রি-অভিজ্ঞতায় বিসিএস কর্মকর্তা, অতঃপর...
ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে নিয়োগ পেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি সহযোগী অধ্যাপক এস এম আলমগীর কবীরের।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, পিএসসি থেকে ২০০৬ সালে অভিযুক্ত এস এম আলমগীর কবীর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১০ শতাংশ কোটায় সহযোগী অধ্যাপক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) পদে নিয়োগ পান। পিএসসির ওই নিয়োগ চারটি শর্ত ছিল। সেগুলো হচ্ছে- ১. প্রার্থীদের ডক্টরেট ডিগ্রিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা দ্বিতীয় শ্রেণির সম্মান ডিগ্রিসহ কলেজ যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। ২. প্রার্থী যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক চরিত্রগত সনদ। ৩. প্রার্থী যেসব সরকারি/বেসরকারি কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন সে সব কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিগ্রি কলেজ/অথবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের হতে হবে এবং তার অর্জিত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ডিগ্রি পর্যায়ের অভিজ্ঞতার সনদে তা অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। ৪. অভিজ্ঞতার সনদে কলেজটি ডিগ্রি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা ডিগ্রি পর্যায়ের না থাকলে এবং অভিজ্ঞতার সনদ জমা না দিয়ে যোগদানপত্র জমা দিলে প্রার্থিতা বাতিল হবে।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান বলছে, এস এম আলগীর কবীরের আবেদনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কামডেন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রি সংযুক্ত করেছেন কিন্তু দেশটিতে ওই নামের কোন রেজিস্ট্রার্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। সেই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরির আবেদনের জন্য ন্যূনতম ৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার মধ্যে ২ বছর ৩ মাস ১১ দিনের ঘাটতি ছিল। এই হিসাবে এস এম আলগীর কবীর চাকরির আবেদনে ডক্টরেট ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতায় প্রতারণা করেছেন। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদ থেকে প্রেষণে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এপিএস এবং পরবর্তীতে তৃতীয় সচিব হিসেবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্মকালীন সরকারি কর্মচারী হয়ে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
এসব জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এস এম আলগীর কবীরের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।