• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আইন তোয়াক্কা করছে না তামাক কোম্পানিগুলো

মিথুন চৌধুরী

  ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:০১

বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে এবং অনেকে সফলও হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও তা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে। আইনও কঠোর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আইনের প্রতি তোয়াক্কাই করছে না দেশের তামাকজাত কোম্পানিগুলো।নিত্যনতুন কারসাজিতে ব্যবহারকারীকে তামাক সেবনে আকৃষ্ট করছে। ফলে চিড় ধরছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনায়।

বিশ্বে ধূমপায়ীর দুই-তৃতীয়াংশ মাত্র ১৩টি স্বল্পোন্নত দেশে বাস করে। এর অর্থ হচ্ছে, তামাকের ব্যবহার ধনী দেশ থেকে কমে গিয়ে ক্রমে নিম্ন আয়ের দেশে আসছে এবং যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সক্রিয় নেই, সেখানে জেঁকে বসছে। যার মধ্যে তামাকজাত পণ্য ব্যবহার উৎসাহে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ এর ভেতরে।

এদিকে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ সালের বিধিমালা অনুসারে ১৯ মার্চ ২০১৬ থেকে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট-মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আইন বাস্তবায়নের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে ৫১ ভাগ তামাক পণ্যে কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করছে না কোম্পানিগুলো।

তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। দেশের ৮টি বিভাগের ১২০টি দোকানে ১,৮২৭টি তামাক পণ্যের ওপর তারা এ গবেষণা চালায়। প্রজ্ঞা’র কো-অর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার উপস্থাপিত গবেষণায় দেখা যায়, বিড়িতে ১০০ ভাগ, জর্দায় ৯৬.৪ ভাগ, গুল-এ ৭৫.৮৬ ভাগ এবং সিগারেটে ২০.৮৮ ভাগ ক্ষেত্রেই শতভাগ আইন মেনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এছাড়া ৯২ ভাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত শতভাগ কমপ্লায়েন্স অনুসরণ না করেই তামাক পণ্য বিক্রি করছে। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই ১৯.২ ভাগ তামাক পণ্যের প্যাকেটে। ৪৪টি ব্র্যান্ডের সিগারেটের মধ্যে ৩৫টি এবং ১৭টি ব্র্যান্ডের বিড়ির মধ্যে ১২টি প্যাকেট আগের ছবিসহ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

বিড়ির প্যাকেটে শুধু বাংলাদেশে বিক্রির জন্য অনুমোদিত বিবৃতি মুদ্রণ হার শূন্য শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ক্ষেত্রেও আইন প্রতিপালনের হার খুবই উদ্বেগজনক। ৪০.২ শতাংশ জর্দা এবং ২৩.৭ শতাংশ গুল কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি।

প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর অবস্থান বিষয়ক চিত্র খুবই ভয়াবহ। ৯১.৭শতাংশ বিড়ির প্যাকেট, ৮৫.২ শতাংশ জর্দা এবং ৪২ শতাংশ গুল কৌটায় সতর্কবাণী সঠিক স্থানে মুদ্রণ করা হয়নি। তামাক পণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ নিয়ে জানে না বিক্রেতারা। জানে না, ৩ মাস অন্তর সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পরিবর্তন বিষয়ক আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাবে। যার বেশির ভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের। বর্তমানে বিশ্বে ১৫ বছরের বেশি বয়সের জনসংখ্যার ২১ শতাংশ ধূমপায়ী। যার মধ্যে পুরুষ ৩৫ শতাংশ এবং নারী ৬ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিশ্বব্যাপী ৩৪ কোটি ৬০ লাখ, যার বেশির ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস করে। নারীদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বেশি পাওয়া যায় তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারকারী বর্তমানে বেশির ভাগ গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের জন্য তামাক সেবন একদিকে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে, অন্যদিকে তামাকজনিত রোগের কারণে চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়। এভাবে গরিব আরো গরিব হয়ে পড়ে। ফলে সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ধনী-গরিবের যে বৈষম্য রয়েছে, তা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গরিব মানুষকে তামাক সেবন থেকে সরিয়ে আনতে পারে। ফলে তার দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য দূর হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

তামাক রোধে সংগঠনগুলোর সুপারিশে জানা যায়, তামাক কোম্পানিগুলোকে প্যাকেট বা কৌটার অন্যূন ৫০ ভাগ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে বাধ্য করা। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী যেনো আইনসম্মত উপায়ে মুদ্রণ করা হয় তা নিশ্চিত করা। আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সতর্কবাণীবিহীন এবং আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে এমন তামাক পণ্য ধ্বংস করা এবং বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। মোবাইল কোর্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি কার্যকর করা। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে তামাক পণ্য বিক্রেতাদের সচেতন করা।

এমসি/ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh