এক উপসচিবের এত ঝাঁঝ?
জামাল হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ সরকারের একজন উপসচিব। জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের একটি প্রকল্পের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্পটি হচ্ছে পটুয়াখালীর মহিপুর ও আলিপুর, পিরোজপুরের পাড়েরহাট এবং লক্ষীপুরের রামগতিতে আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন।
সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় আহরিত দেশি ও সামুদ্রিক মাছের Post Harvest Loss রোধকরণের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন জামাল হোসেনকে উল্লিখিত প্রকল্পের দায়িত্ব দিলেও তিনি অনেকটা সময় ব্যয় করছেন ছোট ভাই হেলাল উদ্দিন মজুমদারের স্ত্রী আমেরিকা প্রবাসী সাহেদা আক্তারের (আলাদা থাকেন) সহায়-সম্পত্তি ভোগ দখলের পেছনে। এতে তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন স্বয়ং হেলাল উদ্দিন। এছাড়া তাদের ছোট ভাই কামাল উদ্দিন মজুমদার, জামালের স্ত্রী সাবা ইসলাম ও ছেলে জাফির হাসান মজুমদারও সাহেদার সম্পত্তি দখলে একাট্টা হয়েছেন।পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআইযের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন সব তথ্যই ওঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নানা সময় ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে রাজধানীর মগবাজারের দুটি ফ্ল্যাট এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সাহেদা আক্তারের নামে কেনা সব সম্পত্তি করায়ত্ত্ব করে নিয়েছেন জামাল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন গঙরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাহেদা আক্তারের সাড়ে ১৬শ’ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। ঢাকার অদূরে সাভারের গেন্ডায় ১৩ শতক (দাগ নং- সাবেক এস,এ-১০৭, বর্তমান আর,এস-১৬৯) জমিরও মালিক তিনি। এগুলো ভোগ-দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে জামাল তার সহযোগীদের নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। সাভারের জমিটি এরইমধ্যে অবৈধভাবে জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে দখলও করে নিয়েছেন। এজন্য জাল দলিল তৈরি থেকে শুরু করে হেন কোনো কাজ নেই তারা করেননি। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। পিবিআই তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এর ভিত্তিতে আদালত জামাল হোসেনসহ সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন।
১৯৯৩ সালে পারিবারিক নিয়মে বিয়ে হয় হেলাল উদ্দিন মজুমদার ও সাহেদা আক্তার দম্পত্তির। ১৯৯৬ সালে সাহেদা ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি পেয়ে পরের বছর স্বামীসহ একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানে যাওয়ার পর তাদের আরো দুটি সন্তান হয়। সাহেদা উপার্জিত অর্থ দিয়ে ২০০২ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে স্বামীর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ৪২০ শতক ও সাভারে ১৩ শতক জমি কেনেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ও মগবাজারে কেনেন দুটি ফ্ল্যাট। ১৯৯৭ সালে আমেরিকা যাওয়ার পর সাহেদা বেগম বাংলাদেশে আসেন চারবার। শেষবার তিনি এসেছিলেন ২০০৯ সালের ১৮ জুলাই। এই সময়ের মাধ্যেই সম্পত্তিগুলো ক্রয় করেন সাহেদা।
২০০৯ সাল থেকেই শুরু হয় সাহেদা-হেলাল দম্পত্তির কলহ-বিবাদ। হেলাল মাদকাসক্ত ছিলেন বলেই কলহ শুরু হয় বলে অভিযোগ সাহেদার। মাদক সেবন করতে গিয়ে সাহেদার উপার্জিত অর্থ নানাভাবে নষ্ট করতেন বলে জানান তিনি। ২০১০ সালে আমেরিকায় একটি দোকান কেনার কথা বলে হাজীগঞ্জের একটি জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন হেলাল। তখন সাহেদা জমি বিক্রির জন্য আম-মোক্তার নামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) করে দেন স্বামীর নামে। হেলাল উদ্দিন তার ভাই জামাল হোসেনের সহায়তায় ছলচাতুরি করে হাজীগঞ্জের সবগুলো জমিই নিজেদের করে নেন। ২০১৫ সালে পুনরায় দেশে এসে হেলাল উদ্দিন আরেকটি বিয়ে করেন বলে অভিযোগ স্ত্রী সাহেদার। তখন থেকে তাদের মধ্যে দুরুত্ব আরো বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর তাদের মধ্যে আমেরিকান রীতিতে বিচ্ছেদ ঘটে। পরের বছর ৫ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন হেলাল।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, হেলাল দেশে আসার পর শুরু হয় সাহেদার বাকি সম্পত্তি দখলের তৎপরতা। বড় ভাই উপসচিব জামাল হোসেনের নকশা মতো চলতে থাকে তাদের পরিকল্পনা। সাভারের ১৩ শতক জমি দখল হয়ে ওঠে তাদের পরিকল্পনার মূল অংশ।
সাভারের জমির আম-মোক্তার স্থানীয় মনিরুজ্জামান
সাভারের গেন্ডার জমিটি ২০০৪ সালের ২২ জুলাই রেবেকা সুলতানা নামে এক নারীর কাছ থেকে ক্রয় করেন সাহেদা আক্তার। জমিটি কেনার সময় জামাল হোসেন মজুমদার সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। সাভার সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে সাফ কবলা দলিল বুঝে নেন সাহেদা (দলিল নং- ১৪৭৭৭)। প্রতিবেদন মতে, জমিটি দখলে নিতে জামাল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা মরিয়া হয়ে ওঠলে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের আমেরিকান দূতাবাস এবং আমেরিকার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সাভারের গেন্ডার মনিরুজ্জামানকে আম-মোক্তার নিযুক্ত করেন সাহেদা (আম-মোক্তার দলিল নং- ৪৫২৪)।
সাহেদার হয়ে মনিরুজ্জামানের মামলা
পিবিআই সূত্রমতে, জাল দলিলের মাধ্যমে জামাল হোসেন গঙরা সাভারের জমির মালিকানা দাবি করলে এবং বেশ কয়েকবার জমিটি দখল করতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করলে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন সাহেদা। সেই মোতাবেক তার আম-মোক্তার মনিরুজ্জামান সাভার থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। জামাল হোসেনের প্রভাবেই পুলিশ মামলা নেয়নি বলে জানান মনিরুজ্জামান। বেশ কয়েকবার তাঁকে হুমকিও দেন জামাল হোসেন। গত বছরের ৫ নভেম্বর সাহেদার পক্ষে কাজ না করতে মনিরুজ্জামানকে শাসিয়ে যান জামাল হোসেন। পরদিন আবারও মামলা করতে গেলে পুলিশ আগের মতোই বেঁকে বসে। তাই গত বছরের ২৯ নভেম্বর ঢাকার আদালতে মামলা করেন মনিরুজ্জামান। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলী ফরিদ আহমেদ গত ৩ জুন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উঠে আসে জামাল হোসেনসহ অন্য আসামিদের নানা অপকর্মের কথা। জমির জাল দলিল ও আম-মোক্তার নামা তৈরি করে কীভাবে সাহেদার জমির মালিক হতে চেয়েছেন, ফুঁটে ওঠে তার আদ্যপান্ত।
জাল দলিলের কারসাজি!
পুলিশ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের ৯ অক্টোবর জামাল হোসেন তার ভাইদেরসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে সাভারের জমিটি দখল করতে যায়। মনিরুজ্জামান বাঁধা দিলে তাকে মারধর করে জামাল হোসেন। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। কিন্তু জামাল হোসেন, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অপারগতা জানায় পুলিশ। জামালের ছোট ভাই কামাল উদ্দিন পুলিশকে একটি জাল দলিলের ফটোকপি দেখায়। এতে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর সাহেদা আক্তার তাঁর স্বামীর ছোট ভাই কামালের কাছে জমিটি বিক্রি করেন। বড় ভাই জামাল হোসেন যার সাক্ষী। পিবিআই দলিলের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করে এতে থাকা সাহেদা আক্তারের টিপসইয়ের সঙ্গে মনিরুজ্জামানকে দেয়া আম-মোক্তার নামায় থাকা টিপসই পরীক্ষা করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি’র ফরেনসিক শাখায় পাঠায়। অঙ্গুলাংক বিশারদ পুলিশ পরিদর্শক তানজিনারা বেগম পরীক্ষা করে দেখতে পান মূল আম-মোক্তার নামায় সাহেদার আঙ্গুলের ছাপে ৬টি রেখা আছে, আর কামাল উদ্দিনের বিতর্কিত দলিলে সাহেদার আঙ্গুলের ছাপে আছে ৯টি রেখা। কামাল উদ্দিন দলিলটি যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেছেন তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পায় পিবিআই।
কামাল উদ্দিনের নামে করা জাল দলিলের খোঁজ করতে গিয়ে এই জমির আরেকটি জাল দলিলের সন্ধান মেলে। এই দলিলে দেখা যায়, গত বছরের ৮ আগস্ট জামাল হোসেন মজুমদার ও তার স্ত্রী সাবা ইসলাম নিজেদেরকে সাহেদার আম-মোক্তার দেখিয়ে ছেলে জাফির হাসানের কাছে জমিটি বিক্রি করেছেন। অথচ উপরোল্লিখিত ছোট ভাই কামাল উদ্দিন মজুমদারের নামে করা জাল দলিলের সাক্ষীও জামাল হোসেন। বিক্রির ক্ষমতা দিয়ে আম-মোক্তার নামাটি সম্পাদিত হয়েছে ২০০৮ সালের পহেলা মার্চ (আম-মোক্তার নামা দলিল নং-২০৮)। পিবিআই সাভার সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে ২০৮ নং দলিলের খোঁজ করে ব্যর্থ হয়। পরে ঢাকার সদর রেকর্ড রুমে যাচাই-বাছাই করে একই নম্বরের একটি দলিল খোঁজে পায়। দলিলে দেখা যায়, এটি কোন আম-মোক্তার নামা নয়, একটি সাফ-কবলা দলিল। জমির অবস্থান সাভারের গেন্ডা নয়, রাজাশন এলাকায়। জমিটি খোদেজা বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে কামরুন নাহার নামে আরেক নারী ২০০৮ সালের ৩ জানুয়ারি ক্রয় করেছেন। সাভারের সাব-রেজিস্ট্রার আবু তালেব সরকারের সহায়তায় জামাল হোসেন জাল-জালিয়াতির এই অপকর্ম সম্পাদন করেছে বলে জানতে পারে পিবিআই।
ছবি: জাফির হাসান মজুমদার
জামাল হোসেনসহ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
চলতি বছরের ৩ জুন জামাল হোসেন মজুমদারসহ সব আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারা মোতাবেক আসামি জামাল হোসেন মজুমদার, হেলাল উদ্দিন মজুমদার, কামাল উদ্দিন মজুমদার, সাবা ইসলাম, জাফির হাসান, কামাল উদ্দিনের জাল দলিলের সাক্ষী শওকত হোসেন ও কামাল উদ্দিনের জাল দলিল তৈরিতে সহায়তাকারী আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। জামাল হোসেনের পরিবারের সবার ঠিকানাই দেয়া আছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ। হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, এখনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তারা পাননি। চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানও বলেন, পুলিশ সুপার কার্যালয়েও পরোয়ানাগুলো পৌঁছায়নি। অথচ পরোয়ানা জারির পর পেরিয়ে গেছে এক মাস পাঁচ দিন।
সার্বিক বিষয়ে সাহেদার স্বামী হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাহেদা আক্তার তাদের পরিবারের সঙ্গে বেইমানি করেছে। তাকে ঠকিয়ে সব সম্পত্তি নিজের করে নিয়েছে। এর স্বপক্ষে তিনি প্রমাণ দেখানোর কথা বলেন। কিন্তু কোন প্রমাণ নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। হেলাল উদ্দিন ২০১৫ সালে হাজীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক।
জামাল হোসেন মজুমদারের সঙ্গে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে এই প্রতিবেদক। ঈদুল আযহার আগে ফোন করে পরিচয় দেয়ার পর তিনি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের সামনে আছেন বলে, পরে যোগাযোগ করতে বলেন। ঘন্টা খানেক পরে যোগাযোগ করলে তিনি আর ফোন ধরেননি। এর কিছুক্ষণ পরই হেলাল উদ্দিন মজুমদার এই প্রতিবেদককে ফোন করেন এবং তার বিকাশ নম্বর চেয়ে অর্থের লোভ দেখান। ঈদের পর জামাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোন এবং ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বেশ কয়েকদিন যোগাযোগের চেষ্টা করে এই প্রতিবেদক। কিন্তু কোনভাবেই সাড়া দেননি জামাল হোসেন। ফলে জাল-জালিয়াতির বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ছবি: হেলাল উদ্দিন মজুমদার
এসজে
মন্তব্য করুন
ভুয়া ডিগ্রি-অভিজ্ঞতায় বিসিএস কর্মকর্তা, অতঃপর...
ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে নিয়োগ পেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি সহযোগী অধ্যাপক এস এম আলমগীর কবীরের।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, পিএসসি থেকে ২০০৬ সালে অভিযুক্ত এস এম আলমগীর কবীর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১০ শতাংশ কোটায় সহযোগী অধ্যাপক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) পদে নিয়োগ পান। পিএসসির ওই নিয়োগ চারটি শর্ত ছিল। সেগুলো হচ্ছে- ১. প্রার্থীদের ডক্টরেট ডিগ্রিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা দ্বিতীয় শ্রেণির সম্মান ডিগ্রিসহ কলেজ যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। ২. প্রার্থী যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক চরিত্রগত সনদ। ৩. প্রার্থী যেসব সরকারি/বেসরকারি কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন সে সব কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিগ্রি কলেজ/অথবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের হতে হবে এবং তার অর্জিত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ডিগ্রি পর্যায়ের অভিজ্ঞতার সনদে তা অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। ৪. অভিজ্ঞতার সনদে কলেজটি ডিগ্রি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা ডিগ্রি পর্যায়ের না থাকলে এবং অভিজ্ঞতার সনদ জমা না দিয়ে যোগদানপত্র জমা দিলে প্রার্থিতা বাতিল হবে।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান বলছে, এস এম আলগীর কবীরের আবেদনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কামডেন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রি সংযুক্ত করেছেন কিন্তু দেশটিতে ওই নামের কোন রেজিস্ট্রার্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। সেই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরির আবেদনের জন্য ন্যূনতম ৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার মধ্যে ২ বছর ৩ মাস ১১ দিনের ঘাটতি ছিল। এই হিসাবে এস এম আলগীর কবীর চাকরির আবেদনে ডক্টরেট ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতায় প্রতারণা করেছেন। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদ থেকে প্রেষণে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এপিএস এবং পরবর্তীতে তৃতীয় সচিব হিসেবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্মকালীন সরকারি কর্মচারী হয়ে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
এসব জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এস এম আলগীর কবীরের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
যেভাবে ‘ঢালী সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলেন সহজের পিয়ন মিজান
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম হোতা সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালীসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মিজানের নেতৃত্বে ‘ঢালী সিন্ডিকেট’ নামে এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।
শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ‘ঢালী সিন্ডিকেট’-এর মূলহোতা মো. মিজান ঢালী (৪৮), মো. সোহেল ঢালী (৩০), মো. সুমন (৩৯), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), মো. শাহজালাল হোসেন (৪২), মো. রাসেল (২৪), মো. জয়নাল আবেদীন (৪৬), মো. সবুর হাওলাদার (৪০) ও নিউটন বিশ্বাস (৪০)। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টিকিট, আটটি মোবাইল ফোন, একটি এনআইডি, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কালোবাজারির বিভিন্ন আলামত এবং টিকিট বিক্রির নগদ ১১ হাজার ৪২২ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। ঢালী সিন্ডিকেটের মূলহোতা হলো সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সবশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজ ডট কমকে দেওয়া হলে সেখানেও পিয়ন হিসেবে মিজানের চাকরি বহাল থাকে। চাকরির সুবাদে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে মিজানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। যার সূত্র ধরে তিনি বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করতেন।
তিনি বলেন, সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ সবুর হাওলাদার এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। ঈদ, পূজা ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ্য করে মিজান ও সোহেল কারসাজির মাধ্যমে বেশি টিকিট সংগ্রহ করতেন। প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রি করতেন। এবারও তারা ঈদের আগে বেশি টিকিট সংগ্রহের পরিকল্পনা করছিলেন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, টিকিট বিক্রির অর্থ দুইভাগ করে ৫০ শতাংশ সহজ ডটকম ও রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার ম্যানরা পেতেন এবং বাকিটা সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজান, সোহেলসহ তাদের সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এভাবেই পরস্পরের যোগসাজশে তারা দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিলেন।
ছোটবেলার থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে আফিলকে হত্যা করেন পুলক
রাজধানীর দক্ষিণখানে নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়াকে (৫৭) হত্যার ঘটনায় এস এম ওয়াহিদ হোসেন ওরফে পুলক নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি বলছে, নিহত আফিল ছোটবেলায় পুলককে চড়-থাপ্পড় দিতেন। এর প্রতিশোধ নিতেই তাকে হত্যা করেন পুলক।
শুক্রবার (২২ মার্চ) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, রাজধানীর দক্ষিণখানের তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়াকে গত ১৮ মার্চ গভীর রাতে অজ্ঞাত আসামিরা কুপিয়ে হত্যা করে। পরে এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খোরশেদা খাতুন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার পর তদন্তে নেমে হত্যায় জড়িত এস এম ওয়াহিদ হোসেন ওরফে পুলককে গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পুলক জানিয়েছেন বাবা হারিয়ে ছোটবেলায় তিনি চাচাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। নিহত নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়া ছোটবেলায় তাকে চড়-থাপ্পড় মারতেন। এতে পুলকের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তার ভেতরে একটি বিকৃত ইচ্ছার জন্ম হয়। তিনি সিরিয়াল কিলিংয়ের পরিকল্পনা করছিলেন। তার টার্গেট ছিল ৯টি হত্যা করা। যার প্রথমটির বলি নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়া। পুলকের ডন হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তিনি চাইতেন সন্ত্রাসী হিসেবে মানুষ তাকে চিনবে, তার কথায় মানুষ উঠবে-বসবে।
ডিবিপ্রধান বলেন, নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়াকে হত্যার আগে পুলক ইয়াবা সেবন করেন। এরপর হত্যাকাণ্ড ঘটান। হত্যার বিষয়ে তিনি নিজের দায় স্বীকার করেছেন। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এমপি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
বগুড়া-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ও তার স্ত্রী মোছা. বিউটি খাতুনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে এ দম্পতির বিরুদ্ধে।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুদকের বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দুই মামলার একটিতে রেজাউল করিম বাবলুর বিরুদ্ধে ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৭৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন তিনি। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে সাবেক এমপি বাবলু স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য দেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে আয় ও ব্যয় মিলিয়ে ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৭৮ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য।
অপর মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রেজাউল করিম বাবলুর স্ত্রী মোছা. বিউটি খাতুন একজন গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও তার বিরদ্ধে ১ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ২৯৩ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। তার সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ১ কোটি ৪২ লাখ ৬ হাজার ২৯৩ টাকার। অর্জিত সম্পদের বিপরীতে তার দায়-দেনার পরিমাণ পাওয়া যায় ১৫ লাখ টাকা। যা বাদ দিলে নিট সম্পদের পরিমাণ পাওয়া যায় ১ কোটি ২৭ লাখ ৬ হাজার ২৯৩ টাকা। এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার নিট আয় পাওয়া যায় ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। বাকি ১ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ২৯৩ টাকার সম্পদ অবৈধ বলে বেরিয়ে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
গত ২০ মার্চ এ বিষয়ে পৃথক দুটি মামলার অনুমোদন দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
রেজাউল করিম বাবলু একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। বগুড়া-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা
দিনাজপুরের ধর্ষণ মামলার আসামি রাহমাতুর রাফসান অর্ণব রাজধানী ঢাকায় নতুন করে প্রতারণায় মেতে উঠেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পরে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অর্ণবের প্রেমের ফাঁদে পড়ে উঠতি বয়সী অনেক তরুণী সর্বস্ব হারিয়েন। এসব ঘটনায় দিনাজপুর ও ঢাকায় তার নামে একাধিক মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, চাকরি দেওয়া ও বিদেশ লোক পাঠানোর নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অর্ণবের বিরুদ্ধে।
মামলার নথি ও পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের ডিআইজির ছেলের ভুয়া পরিচয় দিয়ে পুলিশের ভ্যান ব্যবহার ও ডিএমপির স্টিকার লাগিয়ে, হুডার ব্যবহার করে অর্ণব কক্সবাজার থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়। সেই সাথে পুলিশের বড় কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন মানুষকে হুমকিও দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে সেসব ভিডিও ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানার জন্য তার বাবা পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
অভিযুক্ত অর্ণবের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই তিনি আর কথা বলতে ইচ্ছুক নয় বলে ফোন কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে দিনাজপুর শহরে লিগেসি নামের একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের আড়ালে তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় ও ধর্ষণ মামলায় জেল খেটেছেন অর্ণব।
বিমানবন্দরে ডলার আত্মসাৎ, ১৯ ব্যাংকারসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিমানবন্দরে ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা বিনিময় কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯ ব্যাংকার ও দুই মানি এক্সচেঞ্জের মালিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২৭ মার্চ) মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মামলাটির বাদি হয়েছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা ডলারসহ প্রতিদিন যে শত কোটি টাকার বেশি মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা আনেন, ও্ই অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে ১৯ ব্যাংকার ও দুই দুইজন মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের সমন্বয়ে গঠিত চক্রটি।
চক্রটি জাল ভাউচারের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে তা খোলাবাজারে ছাড়ে। ব্যক্তিগত লাভের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হয়েও তারা বেআইনিভাবে বিদেশি মুদ্রা কিনে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন।
অভিযুক্ত ব্যাংকগুলো হচ্ছে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং এভিয়া ও ইম্পেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ।
অচল গার্মেন্টসকে সচল দেখিয়ে ২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ
অচল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে সচল দেখিয়ে ঋণ দেওয়ার নামে প্রায় ২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন বলে বুধবার (২৭ মার্চ) জানিয়েছে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র। মামলায় যে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ তোলার অভিযোগ, তার মালিককেও আসামি করা হয়েছে।
সূত্রমতে, মামলার আসামিরা হলেন মেসার্স সার্ক গার্মেন্টস এক্সসেসরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এস এম কবির, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মির্জা তৈয়বুর রহমান, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ছাইদুর রহমান, সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আফতাব উদ্দিন আহমেদ, কে এম মইন উদ্দিন, মো. নুরুল ইসলাম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হারুন উর রশিদ খান ও ইউনিক সার্ভে সার্ভিস ব্যুরোর সার্ভেয়ার মো. মোশাররফ হোসেন দোলন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ৭ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অচল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে সচল দেখিয়ে ও ১৪ শতক বন্ধকীকৃত জমির অতিমূল্যায়ন করে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সিসি ঋণের লিমিট বৃদ্ধি করে এবং প্রতিষ্ঠান চালু না থাকা সত্ত্বেও চালু দেখিয়ে ওই কর্মকর্তারা অচল গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে ব্যাংকের মোট এক কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানকারীরা দেখতে পেয়েছেন যে, মেসার্স সার্ক গার্মেন্টস এক্সেসরিজের নামীয় প্রতিষ্ঠানটি চারতলা রেডিমেইড গার্মেন্টসের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ পণ্য ইন্টারলাইনিং উৎপাদন করার জন্য ঋণের নাটক সাজিয়ে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের আশুগঞ্জ শাখা থেকে এক কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে।