ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার ৩
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগার সাদ মুআ’কে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মূলহোতা ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদ ও সহযোগী তথাকথিত নারী আরজে সহ ৩ জনকে রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ বিষয়ে আজ রোববার (২৩ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মঈন বিস্তারিত জানাবেন।
এর আগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক বাসায় ট্রান্সজেন্ডার এক নারীকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এক নারীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন অভিযুক্তরা। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর ভাটারা থানায় ভুক্তভোগী ছায়েদ বিন রাব্বি শান্ত মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদ ওরফে সানি, রিশু ও সাইমা নিরা।
অভিযুক্ত ফুয়াদ নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রতারণা করতেন। আর সাইমা নিরা নিজেকে পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এজাহারে ভুক্তভোগী জানান, তিনি ওই যুবকের কথা বিশ্বাস করে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকে ৫ নম্বর সড়কের এক বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে যান। সেখানে যাওয়ার পর তিনি এক নারী ও আরেকজন পুরুষকে দেখতে পান।
ওই তিন জন ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। এতে বাধা দিলে তিন জন তাকে মারধর শুরু করেন এবং বলতে থাকেন এই ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন। এ সময় ৩ জন নিজেদের আইনের লোক পরিচয় দেন। তাদের কাছে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি ছিল বলে জানান তিনি।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, ভুক্তভোগীর কাছে থাকা মোবাইল ফোন, সোনার চেইন, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে বলা হয়, না দিলে মেরে পূর্বাচলে ফেলে দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তাকে থানায় নিয়ে যাবে বলে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে রাত ৮টার দিকে রামপুরা এলাকায় একটি হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়।
ভুক্তভোগী ছায়েদ বিন রাব্বি শান্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত ৩ জনের দুইজন একে অপরজনকে স্যার স্যার বলে সম্বোধন করছিল। আর ওয়াকিটকি হাতে একজন আরেকজনের সঙ্গে আমাকে পাচার করে দেওয়ার জন্য আলোচনা করছিল। পরে জানলাম ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদ নর্থ সাউথে পড়াশোনা করে, আর মেয়েটি (সাইমা নিরা) ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। অথচ ফুয়াদ নিজেকে আর্মি ক্যাপ্টেন বলে পরিচয় দেন, আর মেয়েটা (সাইমা নিরা) নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দেন। এদের পরিচিত লোকদের থেকে জানতে পেরেছি, বসুন্ধরাতে তাদের কয়েকটা বাসা ভাড়া নেওয়া আছে। সব জায়গাতে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট মামলাটি তদন্ত করছেন ভাটার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান মাসুদ। ঘটনার পর ভাটারা থানায় প্রথমে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ভুক্তভোগী ছায়েদ বিন রাব্বি শান্ত। ওই জিডি তদন্তের দায়িত্ব পান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিয়াদ আহমেদ।
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে এরা সংঘবদ্ধ চক্র। তারা সাধারণ মানুষকে এভাবে প্রতারিত করেন। এরপরই ভুক্তভোগীকে থানায় মামলা করতে বলা হয়। অভিযুক্তরা যে বাড়িতে থাকতেন সেখান থেকে চলে গেছেন। বাড়ির মালিককে জানিয়েছেন, তারা নিকটাত্মীয়র বাড়িতে গেছেন।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদের বাবা বিমানবাহিনীতে চাকরি করেন। এ কারণে ফুয়াদ নিজেই পরিচয় দেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতে তিনি চাকরি করেন। একাধিকবার এমন মিথ্যা পরিচয় বহনের কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। রিশুর কারণে তার বাবাও বিব্রত হয়েছেন।
হাতে আসা ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদের একটি ছবিতে দেখা গেছে, চেয়ার-টেবিলে বসা ফুয়াদ সিগারেট টানছেন। আর ডান হাতে কালো রঙের একটি পিস্তল এবং টেবিলের ওপর রাখা একটি ওয়াকিটকি। তবে এসব বিষয়ে অভিযুক্তদের মন্তব্য জানা যায়নি।
কেএফ/পি
মন্তব্য করুন